লগ্নির পর সম্ভাব্য রিটার্ন কত হতে পারে, জানতে মন উচাটন হয়ই। বিশেষজ্ঞ-বিশারদদের দ্বারস্থ না হয়ে বরং নিজেই কষে নিন না কত রিটার্ন ঘরে তুলেছেন আপনি? তার জন্য আগে জেনে নিন নির্দিষ্ট ফর্মুলা। সংকলনে টিম সঞ্চয়
বিনিয়োগ করেছেন, তার কিছু কাল পর কেমন রিটার্ন পেলেন, তা জানতে ইচ্ছা করছে নিশ্চয়। সামান্য অঙ্কে সন্তুষ্ট নন? অর্থাৎ কস্ট প্রাইস যদি X হয় এবং সেল প্রাইস Y হয়, তাহলে প্রফিটের হিসাব হবে (Y-X)-দিয়ে–এতে মন ভরছে না। স্বাভাবিকভাবেই, শুধু এই হিসাব দিয়ে সমগ্র লাভ-ক্ষতির চিহ্নটি তুলে ধরা মুশকিল। তাই আজ টিম সঞ্চয় বলতে চায় বিভিন্ন রিটার্নের মাপজোকের বিষয়ে। কীভাবে পারফর্ম্যান্সের দৌড় কষতে পারবেন আপনি, বুঝবেন কীভাবে ঠিক কেমন লাভ দিয়েছে আপনার লগ্নি?
অ্যাবসোলিউট রিটার্নস
কোন অ্যাসেট কিনেছেন এবং বিক্রি করেছেন, অ্যাসেটের চরিত্রের উপর নির্ভর করবে আপনি ডিভিডেন্ড পেয়েছেন না ক্যাপিটাল গেনস পেয়েছেন অথবা সুদ পেয়েছেন। ইক্যুইটিতে গেনস আসবে, ডিভিডেন্ডও আসতে পারে। ডেট হলে সুদও পাবেন, আশা করা যেতে পারে।
মনে করুন, আপনি ১০,০০০ টাকা দিয়ে ফিক্সড ডিপোজিট নিয়েছেন ব্যাঙ্ক থেকে, তাতে ৯% সুদ পেয়ে বছরের শেষে হাতে পেয়েছেন ৯০০ টাকা। আর আপনার বন্ধু অন্য ব্যাঙ্ক থেকে অন্য ৫,০০০ টাকায় ডিপোজিটের উপর ৫০০ টকা সুদ হিসাবে পেয়েছেন। কে বেশি পেল? সামান্য টাকার হিসাবে আপনি অবশ্যই ৪০০ টাকা (৯০০-৫০০) বেশি পেয়েছন। এবার পারসেন্টেজ রিটার্ন দেখুন:
(Return on Investment)
(Original Investment)
x100
এবার আসুন, উপরের এই ধারণাটাকে অন্য একটি রূপ দিয়ে দিই। আমাদের বিশ্বে দুই ইনভেস্টর এক শ্রেণির হলেও, শতকরা একশো ভাগ এক হন না। লগ্নির পরিমাণে তারতম্য হয়, ‘পিরিয়ড অফ হোল্ডিং’ও বিভিন্ন। এই পর্বে আবার মনে করুন দুজন বন্ধু আছেন:
প্রথম লগ্নিকারী : স্টক কিনেছেন, ছয় বছর লগ্নি করে ৪০% পেয়েছেন।
দ্বিতীয় লগ্নিকারী : ডিপোজিট কিনেছেন, প্রতি বছর ৮.৫% বার্ষিক সুদ পাচ্ছেন।
তার মানে দুজনের টাইম হোরাইজন দু’রকম। তাই ‘অ্যানুয়ালাইজ’ করতে হবে। অর্থাৎ এক বছরের আঙ্গিকে দুই বিনিয়োগের হিসাব কষতে হবে। তাই ‘পিরিয়ড অফ হোল্ডিং’ বুঝে নিন, যে ক্ষেত্রে সঠিক ফ্যাক্টর প্রযোজ্য হবে। এই ফ্যাক্টর দিয়ে গুণ করতে হবে।
যদি কয়েক দিন হয় = 365/No.of days held
যদি কয়েক মাস হয় = 12/No. of months held
যদি কয়েক বছর হয় = 1/No.of years held
তাহলে প্রথম লগ্নিকারীর ক্ষেত্রে, রিটার্ন অ্যানুয়ালাইজ করলে বুঝবেন : 40x(1/6), যেখানে 80% রিটার্ন এসেছে ৬ বছর ধরে থেকে, অর্থাৎ 6.67% । আর দ্বিতীয় লগ্নিকারী তো ৮.৫% প্রতিবছর পেয়েই গিয়েছেন।
Compounded Annual Growh Rate (CAGR)
পৃথিবীতে বেশির ভাগ মার্কেটেই মধ্য বা দীর্ঘমেয়াদী লগ্নির হিসাব নিকেশ করা হয় CAGR দিয়ে। অমুকের বিনিয়োগ কেমন বাড়ছে, এই সাধারণ প্রশ্নের উত্তর CAGR দিয়েই ব্যাখ্যা করা হয়ে থাকে। এটাই দস্তুর।
যদি দুই ভিন্ন ইনভেস্টমেন্ট হোরাইজন পাশাপাশি রেখে মাপজোখ করতে হয়, তাহলে CAGR অব্যর্থ। এর জন্য ফর্মূলা আছে :
{[(Final Value of Investment)/(Initial Value of Investment)] 1/n}-1
এখানে n হল number of years (অর্থাৎ হোল্ডিং পিরিয়ড)। মনে করুন আপনি কোনও ফান্ড কিনেছেন যেটির ন্যাভ (মানে নেট অ্যাসেট ভ্যালু) হল ১২.৪৫ টাকা। তিন বছর বাদে আপনি ইউনিট বিক্রি করে দিলেন, যখন ন্যাভ ১৬.১৪ টাকা। তাহলে রিটার্ন কত হল? CAGR-এর ফর্মুলা মেনে : {(16.18)/(12.45) 1/3}-1 = 9.12%
সাধারণ ভাষায় বলতে গেলে, CAGR হল বৃদ্ধির বার্ষিক গড় হার (average annual rate)। এই উদাহরণে পুরো তিন বছরের হার বলা হচ্ছে, নির্দিষ্টভাবে কোনও বছরের নয়। একই সঙ্গে অনেকে মিলে লগ্নি করে কম-বেশি হোল্ডিং পিরিয়ডের জন্য ধরে রাখতে পারেন একই অ্যাসেট। সেক্ষেত্রে CAGR-এর হিসাব কষে নেওয়া খুব দরকারি। তুল্যমুল্য বিচার করা যাবে
এরই ভিত্তিতে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.