Advertisement
Advertisement

Breaking News

Personal Finance

জীবনবিমার নতুন নিয়ম কতটা গ্রাহকবান্ধব? রইল খুঁটিনাটি

আগে নূ‌ন্যতম ১ লক্ষ টাকার বিমা নেওয়া যেত, যা বেড়ে হয়েছে ২ লক্ষ টাকা।

Things to know about life insurance

প্রতীকী ছবি

Published by: Suchinta Pal Chowdhury
  • Posted:December 16, 2024 7:22 pm
  • Updated:December 16, 2024 7:22 pm  

পরিবর্তনই জীবনের অঙ্গ। কথাটা বিমাক্ষেত্রেও খাটে। সাম্প্রতিক অতীতে বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইআরডিএআই নতুন কিছু নিয়ম চালু করেছে জীবনবিমা গ্রাহকদের জন‌্য। কিন্তু সেই নিয়ম কতটা গ্রাহক-সহায়ক–এই প্রশ্নের উত্তর তখনই মিলবে, যখন খুঁটিয়ে দেখা হবে পরিবর্তনের প্রভাব কতটা কেমন গ্রাহকের উপর পড়ছে। এই লেখায় সেই নিরীক্ষণই করে দেখলেন বিমা পর্যবেক্ষক দেবাশীষ নাথ

আমাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষই বিমা সম্পর্কে আজও অসচেতন। গাড়ি-বিমার বাধ্যবাধকতা না থাকলে বা পরিচ্ছন্ন পরিবেশ সম্বলিত বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমের চিকিৎসা ব্যবস্থার গগনচুম্বী খরচের আতঙ্ক না থাকলে গাড়ি-বিমা কিংবা চিকিৎসা-বিমা (মেডিক্লেম) মধ্যবিত্ত/উচ্চমধ্যবিত্ত সমাজে আজও হালে পানি পেত কি না সন্দেহ। জীবনবিমাকে আজও আমাদের দেশে প্রধানত সঞ্চয়ের মাধ্যম হিসেবেই দেখা হয়। জীবনবিমার প্রসারে এজেন্টদের নিরলস প্রচেষ্টা না থাকলে সংস্থাগুলো নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে রীতিমত শঙ্কায় থাকতো বলেই বিশ্বাস করা যায়। জীবনবিমার কথা উঠলে আজও সাধারণ মানুষ লগ্নির দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তা অলাভজনক মনে করে সরে থাকার চেষ্টা করেন।

Advertisement

এই প্রতিকূলতা সত্বেও ভারত এক বিরাট বিমা বাজার এবং এ কারণেই ২০০০ সাল থেকে অনেক প্রাইভেট বিমা সংস্থা ভারতের বাজারে পা রেখেছে। এর আগেই ১৯৯৯ সালে বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইআরডিএআই গঠন করা হয়েছিল মূলত দুটি উদ্দেশ্য নিয়ে। প্রথমত, যাতে কোনও বিমা সংস্থাই তাদের গ্রাহকদের ঠকাতে না পারে বা আইনবহির্ভূত কাজ করতে না পারে এবং যাতে বিমাক্ষেত্রের উন্নতি সাধন করা যায়। সাম্প্রতিক অতীতে নিয়ামক সংস্থা নানা নিয়মবিধি চালু করেছে এবং সংস্থার বক্তব্য অনুযায়ী, সে সবই করা হয়েছে বিমা গ্রাহকদের স্বার্থের দিকে তাকিয়ে। মাত্র মাসদুয়েক আগে সে দিকেই নজর রেখে নিয়ামক সংস্থা এনেছে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম।

এই নিয়ম অনুযায়ী, জীবনবিমা গ্রাহকের প্রথম বছরের প্রিমিয়াম দেওয়া থাকলেই, তিনি এক বছর পর ইচ্ছে করলে তাঁর পলিসিটি সারেন্ডার করে দিতে পারবেন। নিয়ামক সংস্থার ব্যাখ্যা হচ্ছে, বিমা করার পর যদি গ্রাহকের মনে হয় যে, ক্রয় করা যোজনাটি তার প্রয়োজন নেই বা যথেষ্ট লাভজনক নয় বা বিমা প্রতিনিধি তাঁকে যোজনাটি সম্পর্কে সঠিক কথা বোঝাননি–তাহলে প্রথম বছরের পরেই বিমা পলিসিটি সারেন্ডার করে টাকা তুলে নিতে পারবেন। যদিও সে টাকা তার প্রদত্ত মোট প্রিমিয়ামের চেয়ে অনেকটাই কম হবে। নতুন এই নিয়ম চালু হবার আগে এই ন্যুনতম সময়সীমা ছিল দুবছর। এই নিয়ম মানতে গিয়ে বিমাসংস্থাগুলোকে নতুন করে প্রিমিয়াম ধার্য করতে হয়েছে, কারণ পলিসি করার এক বছরের মাথায় সারেন্ডারের টাকা দিতে গেলে বিমার খরচ যাচ্ছে বেড়ে।

বিমার প্রিমিয়াম মূলত যে সব বিষয়ের ওপর নির্ভর করে তা হচ্ছে নানা বয়সে বিমা গ্রাহকদের মৃত্যুর হার, সংস্থা পরিচালনার আনুপাতিক ব্যয়, নির্দিষ্ট যোজনাটির বৈশিষ্ট‌্য, প্রতিনিধির কমিশন ইত্যাদি। এখন আইআরডিএআই-এর নির্দেশ অনুযায়ী প্রথম বছরের পরেই যদি বিমাগ্রাহককে সারেন্ডারের অঙ্ক দিয়ে দিতে হয়, তাহলে প্রত্যেকটি যোজনার ক্ষেত্রে উপরোক্ত বিষয়গুলোর পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। এবং এ কারণেই এলআইসি গত ১ অক্টোবর থেকে বেশিরভাগ যোজনার ক্ষেত্রেই বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছে।

আগে নূ‌ন্যতম ১ লক্ষ টাকার বিমা নেওয়া যেত, যা বেড়ে হয়েছে ২ লক্ষ টাকা। আগে ৫৫ বছর বয়সি মানুষও বিমা নিতে পারতেন, এখন ৫০ এর বেশি বয়সিরা নিতে পারবেন না। আগে বিমার প্রথম বছরের প্রিমিয়ামের ওপর যে হারে এজেন্ট কমিশন পেতেন, এখন পাবেন তার চেয়ে কম হারে। তা সত্বেও প্রিমিয়ামের হার কিন্তু বেড়েছে। একটি হিসেবে দেখা যাচ্ছে যে, একজন ৪০ বছর বয়সি মানুষ এলআইসি-র কাছ থেকে ২১ বছর মেয়াদের ১ লক্ষ টাকার এনডাওমেন্ট পলিসি কিনতে পারতেন ৫২৪৮ টাকা বাৎসরিক প্রিমিয়ামে। এখন সেই মানুষটিকেই একই মেয়াদের জন্য ওই একই যোজনায় বাৎসরিক ১১,০৩০ টাকা দিয়ে একটি ২ লক্ষ টাকার বিমা নিতে হচ্ছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, প্রথমত আমাদের দেশে একজন গরিব শ্রেণির মানুষ যেখানে ৫,২৪৮ টাকা প্রিমিয়াম দিয়ে পরিবারের জন্য অন্তত ১ লক্ষ টাকার বিমা নিতে পারতেন এবং আর্থিক অবস্থায় উন্নতির সাথে সাথে বিমার পরিমান ধাপে ধাপে বাড়াতে পারতেন, তাঁকে দ্বিগুণ টাকার বিমা নিতে বাধ্য হতে হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, যে যোজনায় বাৎসরিক ১১,০৩০ টাকায় ২ লক্ষ টাকার বিমা নিতে হচ্ছে সেখানে তিনি এই নিয়ম চালু হওয়ার আগে ১০,৪৯৬ টাকায় ওই একই যোজনায় ২ লক্ষ টাকার বিমা নিতে পারতেন। অর্থাৎ প্রিমিয়ামও বেড়েছে। 

তৃতীয়ত, এই নিয়মের ফলে যদি বিমাসংস্থাগুলোকে বিমা ক্রয়ের ক্ষেত্রে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা কমিয়ে দিতে হয়, তাহলে একটু বেশি বয়সি অথচ দায়িত্ব পালনের কথা মাথায় রেখে যাঁরা জীবনবিমা করাতে চান, তাঁরা বঞ্চিত হয়ে যাচ্ছেন না তো? চতুর্থত, শুরুতেই বলা হয়েছে যে আমাদের দেশের মানুষ আজও স্বতঃস্ফূর্তভাবে জীবনবিমার প্রতি আগ্রহী নন। সেক্ষেত্রে এক বছর পরেই যদি সারেন্ডার করে কিছু টাকা ফেরত পাওয়া যায়, তাতে বিমা পলিসি সারেন্ডার করার প্রবণতা বাড়বে না তো? এবং পঞ্চমত, বিমা প্রতিনিধিদের কমিশনের হার কমলে তাঁরা কি আর এই পেশায় থাকতে চাইবেন? না কি পাশাপাশি অন্য পেশারও খোঁজ করবেন? তাতে বিমার প্রসারে ব্যাঘাত ঘটবে না তো? বিশেষ করে সরকারের লক্ষ্য যখন ২০৪৭ সালের মধ্যে প্রত্যেককে জীবনবিমার আওতায় আনা। সরকার তথা আইআরডিএআই-এর এ সব দিকেও নজর রাখা উচিত।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement