একাধারে স্থায়িত্ব, অন্যদিকে নিশ্চয়তা। এই দুই বৈশিষ্ট্য মিলেই ফিক্সড ডিপোজিটকে আজও লগ্নিকারীদের প্রথম পছন্দের স্থানে রেখেছে। কিন্তু বাজারে স্কিমের অভাব নেই। অনেকেই বেপথু হতে পারেন অভিজ্ঞতার অভাবে। এই পরিস্থিতি এড়াতে পেশাদারদের সাহায্য নিতে কুণ্ঠা বোধ করবেন না যেন। পরামর্শে দিলীপ কুমার দে
আমরা সবাই জানি রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) নিজস্ব নীতি মেনে রেপো রেটে পরিবর্তন এনেছে। এই মুহূর্তে ‘Pause’ মোডে থাকলেও, ব্যাঙ্ক নিয়ন্ত্রক সাম্প্রতিক কালে উপর্যুপরি রেট বদলেছে। আর তা হবে নাই বা কেন? মুদ্রাস্ফীতির বাতাবরণে নীতি তো বদলাবেই। বিশ্বের বহু দেশে এমনই হয়েছে। সেই সমস্ত জায়গায় কর্তৃপক্ষ ইনফ্লেশন নিয়ে নতুন ভাবে চিন্তা ভাবনা করেছে। ভারতবর্ষও কোনও ব্যতিক্রম নয়। আর তারই ফলে আমরা দেখেছি ফিক্সড ডিপোজিট মার্কেটে নানা নতুন ধরনের ট্রেন্ড। সুদের হার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে, সাধারণ মানুষ যাঁরা ডিপোজিটে নিয়মিত লগ্নি করেন, তাঁরা আজ ইতিমধ্যেই বেশি রেট পাচ্ছেন। বস্তুত, মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে যুঝতে এটা এক বড় অস্ত্র বলে গণ্য।
আসলে এই ঘটনাক্রম নতুন নয়। আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বলি, একাধিকবার এমন দেখেছি। ইনভেস্টররা চেয়েছেন ফিক্সড ডিপোজিটের নিশ্চয়তা। নির্ভরতাও বলতে পারেন, কারণ লগ্নিকারীরা মূলত তাই চান। স্টক মার্কেটের নিত্যনৈমিত্তিক ওঠাপড়া, বা কোন ভেরিয়েবল রিটার্ন দেয় এমন অ্যাসেট ক্লাস, ঠিক সকলের জন্য নয়।
আমার বক্তব্য খুব সোজা। নিজের ফিনান্সিয়াল প্ল্যান যখন করবেন, তখন খেয়াল রাখুন-ফিক্সড ইনকাম এনে দেবে এমন অ্যাসেটের প্রয়োজন পড়বে। পোর্টফোলিওর পুরোটাই যদি মার্কেট নির্ভর হয়, তাহলে আপনার রিটার্নও হবে পুরোপুরি অনিশ্চিত। আপনি কি সত্যিই তেমন চাইবেন? বরং, যেখানে নিশ্চয়তা বেশি, সেখানে রিটার্ন ধারাবাহিকভাবে আসবে, সেখানে একটা বড় অ্যালোকেশন করবেন? গভীরভাবে ভেবে দেখুন, বিনিয়োগের জগতে রাস্তায় অনেক খানা-খন্দ থাকতে পারে, তেমনই মসৃণও যেন হয় কিছু জায়গাও। আপনার যাত্রা কেমন হল, তার মান কিন্তু ঠিক করে দেবে নির্ভরতার সমতুল্য এই অ্যাসেট ক্লাস।
এখানে একটা সতর্কবার্তা দিতে চাই, তাহলে প্রসঙ্গটির গুরুত্ব সম্পূর্ণ রূপে বুঝবেন। ফিক্সড-রিটার্ন দেয় এমন সমস্ত প্রকল্পগুলোকে ভাল করে পরীক্ষা করুন। বাজারে তো কত ধরনের সংস্থা আছে। প্রোমোটারদের বৈচিত্র্যও কম নয়। বহু ক্ষেত্রে দেখেছি বিশ্বাসভঙ্গ হয়েছে, তাই বুঝেশুনে এগিয়ে যেতে হবে। এর অন্যথা যেন না হয়। তাই লগ্নিকারীদের বলে রাখি একটুও দ্বিধা না করে, পেশাদারের সাহায্য নিয়ে বেছে নিতে হবে সঠিক ডিপোজিট প্রকল্পগুলি। নিজের টাইম হোরাইজনের সঙ্গে মিলিয়ে ভাল প্রকল্পে লগ্নি করা উচিত বলে আমি মনে করি।
উপার্জনের নিশ্চয়তা না থাকলে খরচই (যা নিয়মিত করেন, প্রতি মাসে) বা করবেন কী করে? নিয়মিত আয় তো সকলেরই লাগে। বিশেষত ছোট ইনভেস্টর যাঁরা, তাঁদের ক্ষেত্রে কথাটা ভীষণভাবে প্রযোজ্য। আরও বলি, যাঁরা স্বল্প উপার্জন করেন, তাঁদের কথা ভাবুন। এঁদের অনেকেই কোনও ট্যাক্স ব্যাকেটে পড়েন না, কারণ ট্যাক্সেবল ইনকাম নেই। তাঁরা এমন নিশ্চিত উপার্জন চান, এবং ডিপোজিটের সুদের সদ্ব্যবহার করে সংসার চালান। এই শ্রেণির লগ্নিকারীর প্রধানত চাই ধারাবাহিক উপার্জন।
এই প্রসঙ্গে কয়েকটি কথা বলে রাখি :–
#রেটিং দেখুন। নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান থেকে ডিপোজিট নেওয়া উচিত, উঠতি প্রোমোটার সম্বন্ধে সজাগ থাকাই ভাল।
#সাধারণ নিয়মকানুন সম্পর্কে জেনে রাখুন। নমিনেশন যেন যথাযথ থাকে। প্রিম্যাচিউর উইথড্রয়াল দরকার হলে কী করতে হয়, তাও যেন জানা থাকে।
#অ্যানুয়াল বা ইয়ারলি মোডে যেমন সুদ হাতে নেওয়া সম্ভব, তেমনই আরও ঘন ঘন সুদ পাওয়ার অপশন থাকে। প্রয়োজন যেমন, সেভাবেই সঠিক বিকল্প বেছে নিতে দ্বিধা করবেন না।
#আজকের অনিশ্চিত দুনিয়ায়, ডিপোজিটের এক ধরনের স্থায়িত্ব আছে। ‘এভারগ্রিন’ বলা যেতে পারে। বাছাইয়ের উপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। ইনভেস্টর যেন তাই-ই করেন, এই আশা করব আমি।
(লেখক লগ্নি পরামর্শদাতা)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.