রেপো রেট পরিবর্তন যা হয়েছে তা ইতিমধ্যে দেখতে পেয়েছি আমরা। ফিক্সড-ইনকাম মার্কেটে তার ফল আগামিদিনে আরও বুঝতে পারব, এমনই জানাচ্ছে বিভিন্ন মহল। ডিপোজিটররা কী ভাবছেন, কোন কৌশল নিলে সুবিধা হবে তাঁদের? কর্পোরেট ডিপোজিট প্রকল্পে লগ্নি করা সম্বন্ধে লিখছেন বিশেষজ্ঞ সোমা সরকার
এই মুহূর্তে ভারতের অর্থনীতির কয়েকটি বিশেষ ব্যাপার নিয়ে সকলেই চিন্তিত। তবে যদি কেবল ফিক্সড ডিপোজিট নিয়ে বলতে হয়, তাহলে প্রথমেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সার্বিক নীতি নিয়ে লিখতে হয়। ব্যাঙ্ক নিয়ন্ত্রক রেপো রেট নিয়ে তাঁদের পলিসি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। ইনফ্লেশন-যা সব ডিপোজিটর এবং অন্য বিনিয়োগকারীদেরও প্রধান চ্যালেঞ্জ-যাতে সীমা না ছাড়ায়, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকতেই হবে। মনে রাখুন, এদেশে লোন নিয়েছেন, এমন মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। তাঁদের জন্যও রেপো রেটে পরিবর্তন একটি ভীষণ জরুরি প্রসঙ্গ। যদি ইএমআই বাবদ কম দিতে হয়, মাসের বাজেটে কম চাপ আসে, তাহলে তাঁদের সুবিধা হবে। একটু সাশ্রয় বাড়লে সংসার চালানোর জন্য বাড়তি টাকা হাতে থাকবে। কনজাম্পশনের পক্ষে তা অবশ্যই ইতিবাচক, তাই না? ঠিকই, এবং লগ্নির পক্ষেও তাই, কারণ বাড়তি টাকার একাংশ হয়তো বাজারে ঢুকবে, অ্যাসেট তৈরির পক্ষে তা সহায়ক হবে।
তবে অন্য একটি প্রসঙ্গে নিয়েও আমার স্পষ্ট বক্তব্য আছে। রেট পরিবর্তনে, বিশেষত ডিপোজিট রেট কমে এলে, অনেকেই অসুবিধায় পড়তে পারেন। এই দলে আছেন সিনিয়র সিটিজেনরা। এছাড়াও অনেক সাধারণ মানুষ ফিক্সড ডিপোজিট এবং বন্ডে বিনিয়োগ করেন। নিয়মিত ইনকাম হাতে পাওয়া তাঁদের মূল লক্ষ্য। এই অংশটির কথা ভাবুন। ডিপোজিট বাবদ যে ধারাবাহিক উপার্জন ইন্টারেস্ট পে আউটের মাধ্যমে তাঁরা পান, তা কমে আসার সম্ভবনায় কেউই খুশি হবেন না। তাঁদের হাতে কম টাকা থাকা মানে অর্থনীতির জন্য, বিশেষত ডিসক্রিশনারি স্পেন্ডিংয়ের জন্য, খুব ইতিবাচক নয়। এঁদের অনেকেই বিভিন্ন সমস্যায় থাকেন, দেখতে পাই। জীবনযাত্রার প্রয়োজনে ভেরিএবল এক্সপেল কমিয়ে আনার চেষ্টা করছেন বহু সাধারণ মানুষ, তাও বুঝতে পারি।
সব মিলিয়ে যে পয়েন্টগুলোর দিকে আমি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, সেগুলি একত্রিত করলাম। আপনাদের নিজেদের ধারণার সঙ্গে মিলছে কি না, দেখে নিন।
১। ফিক্সড ইনকাম এখন আপনার পক্ষে কতটা জরুরি? কোনও বিকল্পের সন্ধান কি অন্য অ্যাসেট ক্লাসে খুঁজে নিতে চান?
২। যদি অসুবিধা না হয়, আর ঝুঁকি নিতে রাজি থাকেন, তাহলে নিজের অ্যালোকেশন বদলানোর ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করুন। তবে অবশ্যই বিনা পেশাদারী পরামর্শে হঠকারী সিদ্ধান্ত নেবেন না।
৩। কেবল ডিপোজিট, বস্তু ইত্যাদি ব্যবহার করেও নিজের যথাযথ ফিনান্সিয়াল প্ল্যানিং করা সম্ভব। যদি বিভিন্ন ব্যাঙ্ক বা ফিনান্স কোম্পানির ডিপোজিট নেওয়ার কথা ভাবেন, নির্দিষ্টভাবে তাদের শর্তগুলি জেনে নেবেন।
৪। সব সময় মনে রাখুন, রিটার্নই শেষ কথা নয়। “হাই ইল্ড” পাওয়ার মরিয়া চেষ্টায় অনেকেই সুরক্ষার প্রসঙ্গটি ভুলে যান অথবা এড়িয়ে যান। উচ্চহারে রিটার্ন চাই, অথচ ক্রেডিট রেটিং সম্বন্ধে উদাসীন, এমন যেন না হয়।
পরিশেষে বলি নিয়মিত উপার্জন, সময়সীমা মেনে প্রিন্সিপাল ফেরত, বাঁধা-হারে রোজগার এই বিষয়গুলির দিকে মন দিন। ইনভেস্টর হিসাবে আপনার দায় কম নয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.