ডিপোজিটে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বরাবরই উঠতির দিকে। এক শ্রেণির ইনভেস্টরের এর প্রতি ভরসা চিরকালীন। পাশাপাশি যুক্ত হচ্ছেন নতুন লগ্নিকারীরাও। তবে মনে রাখবেন, ডিপোজিটে যখন লগ্নি করবেন, তখন অবশ্যই সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটির সুরক্ষা নিয়ে সজাগ থাকবেন। বুঝিয়ে বলছেন এবারের অতিথি সোমকান্তি সরকার
ফিক্সড ডিপোজিটের সুদের হার যে বেড়েছে তা তো এখন বিনিয়োগের বাজারে সকলেই জানেন। সুদ-নির্ভর লগ্নিকারীর সংখ্যা আমাদের দেশে কম নেই। ‘সঞ্চয়’-এর পাঠকদের একটি বড় অংশ স্থায়ী আমানতে বিশ্বাসী বলেই আমার ধারণা। এঁরা, এবং এঁদের সঙ্গে আরও বহু মানুষ, যে ডিপোজিটে বিনিয়োগ করতে চাইবেন তাতে সন্দেহ নেই। এটাই স্বাভাবিক, কারণ উঁচু হারে সুদ পাওয়ার চেষ্টা সাধারণ (এবং রক্ষণশীল) ইনভেস্টর তো এবার করবেনই। ব্যাংক অথবা এনবিএফসি, বা যাঁরা ‘কর্পোরেট ডিপোজিট’ প্রকল্প পরিচালনা করেন, সর্বত্রই উৎসাহী বিনিয়োগকারীদের দেখা যাচ্ছে। সুদের হার উপর্যুপরি বেড়েছে, কারণ ব্যাংক নিয়ন্ত্রক রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া রেপো রেটে পরিবর্তন এনেছে। মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির জন্যই এই বদল।
এ তো হল এক তরফের কথা। এবার আমার বক্তব্য ভাল করে পড়ুন। তলিয়ে ভাবুন। দু’টি বিষয় আজ বিশেষভাবে তুলে ধরছি আপনাদের সামনে। এক, এই যে মুদ্রাস্ফীতির কথা বললাম, তা ফিক্সড ডিপোজিটরদের অন্যতম শত্রুবিশেষ, মনে রাখতে হবে। দুই, আমানত থেকে যে সুদ পান, সেই ইন্টারেস্টজনিত উপার্জন, আপনার জন্য করযোগ্য।
একটু বিশদে বলি। দ্বিতীয় বিষয়টি আগে ধরছি। সুদ যা পাবেন তা কিন্তু আপনার মোট আয়ের সঙ্গে যোগ হবে। তাই বছরের শেষে যখন উপার্জনের হিসাব করতে বসবেন, তখন সুদ-জনিত আয়ের কথা ভুলবেন না। এবার প্রশ্ন হল, কর দেওয়ার পর আপনার হাতে কতখানি পড়ে থাকছে? যদি ট্যাক্স দেওয়ার পরও আপনি খুশি থাকেন, তাহলে কিছু বলার নেই। তবে বিষয়টি মনে রাখবেন প্রতিবার।
এবার আসুন প্রথম বিষয়ে। মুদ্রাস্ফীতি যে বিনিয়োগের চরম ক্ষতিসাধক তা তো আর নতুন করে বলতে হবে না। কাজেই ‘ইনফ্লেশন-অ্যাডজাস্টেড রিটার্ন’ ঠিক কতখানি তো বোঝার দায়িত্ব আপনার। সব মিলিয়ে আমানতকারী হিসাবে ট্যাক্স এবং ইনফ্লেশনের হিসাব-নিকেশ চুকিয়ে আসল নির্যাসটুকুর সন্ধানে থাকা উচিত। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ যখন ডিপোজিটে লগ্নি করেন, তখন তাঁরা প্রকল্পের সুরক্ষা (এবং প্রতিশ্রুত রিটার্নের পূর্বাভাস) সন্বন্ধে যেন সজাগ থাকেন, এমনই আমি বলতে চাই। রেটিং নিয়ে পড়ে নিন ভাল করে, তা না হলে কেবল ভাল রেট আপনাকে প্রলোভিত করবে। সেই পরিস্থিতি কাম্য নয়। যদি নির্ভরযোগ্য প্রোমোটার পান (কর্পোরেট প্রকল্পের কথা বিশেষভাবে বলছি) তাহলে এগিয়ে যেতে পারেন।
তাই এক ঝলকে আমানত প্রকল্প সম্বন্ধে ধারণা গঠন করতে হলে, আপনাকে যা দেখতে হবে :
# ক্রেডিট রেটিং
# প্রমোটার সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা
# সুদের হার
# ইনফ্লেশন ও ইনকাম ট্যাক্সের অভিঘাত
শেষ কথার আগে আর একটা দরকারি ইস্যু তুলে ধরি। ফিক্সড ডিপোজিট আপনার মোট অ্যালোকেশনের ঠিক কতখানি, তা যাচাই করুন। যদি মনে করেন বর্তমান পরিস্থিতিতে আমানতে বড় বেশি লগ্নি হয়ে রয়েছে, আর আপনার রিস্ক প্রোফাইল অনুযায়ী অন্য ধরনের অ্যাসেটে আপনি বিলক্ষণ বিনিয়োগ করতে পারেন, তাহলে রি-ব্যালেন্স করার কথা ভাবুন। হয়তো তাতে আখেরে ভালই হবে।
নতুন অর্থবর্ষ আসছে। আশা করি, তা আপনার জন্য ইতিবাচক বার্তা বহন করে আনবে।
সুস্থ থাকবেন, ভাল থাকবেন।
(লেখক লগ্নি বিশেষজ্ঞ)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.