প্রতীকী ছবি
সোনায় লগ্নির সঙ্গে রোজকার সঞ্চয়ের সমন্বয় ঘটানো সম্ভব। আর তার জন্য ডিজিটাল পথে এগোনোটা বাঞ্ছনীয়। যুগের দাবি মেনে পথ চলায় কী কী সুযোগ-সুবিধা গোল্ড-গ্রাহক হিসাবে আপনি পেতে পারেন, তারই বিস্তারিত ব্যাখ্যা এই লেখায় করলেন জার সংস্থার কো-ফাউন্ডার, নিশ্চয় এজি
সঞ্চয় আর লগ্নির ক্ষেত্রে পরিমাণ যত অল্পই হোক, সেটা জরুরি। কথাটা ডিজিটাল মাধ্যমে কেনা সোনার বেলায় ততটাই সত্যি, যতটা অন্য কোনো সম্পদের বেলায়। আমরা এখন ডিজিটাল যুগে বাস করছি আর এর ফলে এমন অনেক সুযোগসুবিধার সহজ পদ্ধতি আমাদের জীবনের অঙ্গ হয়ে গিয়েছে যেগুলো আমাদের বাবা-মায়েরা বা তাঁদের বাবা-মায়েরা পাননি। আমাদের এখন আর ঘন্টার পর ঘন্টা গয়নার দোকানে কাটানোর দরকার নেই কারণ এখন সোনা ডিজিটালি কেনা যায়। অল্পবয়সি ভারতীয়রা সোনা কেনার সাবেকি পদ্ধতির তুলনায় এখন এটাই অনেক বেশি পছন্দ করেন। ফিনটেক প্ল্যাটফর্মগুলোর ক্রমবর্ধমান ব্যবহার এবং জুতসই লগ্নি বিকল্প হিসাবে ডিজিটালি সোনা কেনার ব্যাপারে ক্রমবর্ধমান সচেতনতার ফলে, KPMG-র হিসাব অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে ভারতে এর বাজার ১০০ বিলিয়ন ডলার ছুঁয়ে ফেলবে।
মূল্য ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় সোনা কেনার সুবিধা
ডিজিটাল সোনা কেনা এত জনপ্রিয় বিকল্প হয়ে উঠেছে কেন? সম্ভবত এর নেপথ্যে অনেক রকম কারণ আছে, তবে কয়েকটি প্রধান কারণ হল মূল্য নির্ধারণে স্বচ্ছতা এবং ছোট, সাধ্যমত লগ্নির বিকল্প থাকা। যেমন- নামকরা অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো দর সম্পর্কে রিয়েল-টাইম আপডেট দেয়, সঙ্গে স্বচ্ছ মূল্য নির্ধারণ প্রণালী। ফলে কোনো দ্বিধা দ্বন্দ্ব ছাড়াই ক্রেতাদের মৌলিক বাজার দর জানতে পারা নিশ্চিত করা যায়। উপরন্তু সাবেকি ইটকাঠের তৈরি গয়নার দোকানে কমপক্ষে কতটা সোনা কিনতেই হবে তার সীমা অনেক উঁচু। অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো ১০/- টাকার সোনা লগ্নিরও সুযোগ দেয়। ফলে এটা অনেক বেশি নাগালের মধ্যে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বিকল্প।
অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো এখন স্রেফ আর্থিক প্রণালীগুলোর বদলে আচরণগত অর্থনীতিকে কাজে লাগিয়ে সমস্ত বয়সের এবং আর্থসামাজিক স্তরের মানুষের মধ্যে সঞ্চয়ের অভ্যাস তৈরি করতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এই নির্ঝঞ্ঝাট লগ্নির যাত্রায় মাত্র ৪৫ সেকেন্ড সময় লাগে। এতে ক্রেতারা ২৪ ক্যারাট, ৯৯.৯% বিশুদ্ধ সোনায় মাত্র ১০ টাকা দিয়েও লগ্নি করতে পারেন। এটি সম্ভব হয় সহজ রোজকার সঞ্চয় আর খরচের সমন্বয়ের জন্যে। UPI ম্যান্ডেটের মাধ্যমে যে ব্যবস্থা চালু আছে তার UPI 2.0 পরিকাঠামো ব্যবহার করে। এই সমন্বয়ের সুবাদে প্রত্যেকদিন আগে থেকে ঠিক করা কিছু পরিমাণ টাকা প্রতিদিন কেটে নেওয়া হয়। এইভাবে দৈনিক সঞ্চয়ের অভ্যাসের চর্চা করা হয়, যা প্রত্যেক ডিজিটাল লেনদেনকে সোনায় লগ্নি করার সুযোগে পরিণত করে। মাত্র ১০/- টাকার নিম্ন সীমা থাকায় ব্যবহারকারীরা অনায়াসে নিয়মিত লগ্নি জমিয়ে তুলতে পারেন। সাবেকি লক্ষ্মীর ঝাঁপির অনুপ্রেরণায় তৈরি এই পদ্ধতি সঞ্চয় সহজ করে দেয়, পাশাপাশি ব্যবহারকারীদের নিজেদের সম্পদ ক্রমশ বাড়িয়ে তোলারও সুযোগ দেয়।
সঞ্চয় ও লগ্নির গেমিফিকেশনের সুবিধা
ডিজিটালি সোনা কেনার এক অগ্রগণ্য প্ল্যাটফর্ম সঞ্চয় ও লগ্নির অভ্যাসকে ‘গেমিফাই’ করেছে যাতে ব্যাপারটি ব্যবহারকারীদের জন্যে আরও স্পষ্ট ও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। এই উদ্দেশ্যে এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীদের ধারাবাহিক হতে উৎসাহ দেয় এবং ধারাবাহিকতার জন্যে পুরস্কৃত করে, ফলে বেশ কিছুদিন ধরে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে ওঠে। যেমন যদি কোনও ব্যবহারকারী কয়েক মাস অ্যাপটা না খোলেন, কেবল কয়েকটা SIP সেট করে রেখে দেন, তাহলে অন্য অ্যাপগুলো কেবল তাঁদের পোর্টফোলিও স্ট্যাটাস দেখাতে পারে। কিন্তু ডিজিটালি সোনা কেনার এই অ্যাপ, সক্রিয় না থাকার সময়ে তাঁদের যথাযথ অন্যান্য সঞ্চয় এবং এই সময়ে জমা হওয়া সোনার পরিমাণ ডিজিটালি হাইলাইট করে দেখাবে। ফলে ব্যবহারকারীরা নিজেদের তাৎক্ষণিক জয়গুলো দেখিয়ে আরও বেশি সঞ্চয় করতে উৎসাহিত হন। ফলে ‘ইন্টারঅ্যাক্টিভ ফ্লো’ আর ‘গেমিফায়েড এনগেজমেন্ট’ ব্যবহারকারীদের দৈনিক সঞ্চয়ের দিকে ঠেলে।
ব্যবহারকারীদের দৈনিক সঞ্চয়ের অভ্যাস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করায় স্পষ্ট উন্নতি লক্ষ করা যায়। এর ফল হিসাবে চতুর্থ মাসে পৌঁছতে পৌঁছতে ব্যবহারকারীরা শুরুর সময়ের চেয়ে ৪০-৫০% বেশি সঞ্চয় করে ফেলেন। প্রথম বছর শেষ হতে হতে তাঁদের সঞ্চয় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে। ২৪ মাসের মধ্যে ব্যবহারকারীরা প্রাথমিক লগ্নির প্রায় ১.৭ গুণ সঞ্চয় করতে পারেন। এইভাবে সঞ্চয়ের অভ্যাস ক্রমশ বাড়ানো হয় ঠেলে ঠেলে সঞ্চয়ের সুঅভ্যাস তৈরি করে। এই সহজ কৌশল রোজকার খরচকে এমন এক স্থিতিশীল পথে নিয়ে যায় যাতে সঞ্চয়ই স্বভাব হয়ে দাঁড়ায় এবং সম্পদ জমতে থাকে। এই কৌশল সেইসব লোকের জন্যেও কার্যকরী যাঁদের আর্থিক জ্ঞান সীমিত এবং যাঁরা আর্থিক প্রোডাক্টগুলির জটিলতা আর লগ্নি শুরু করার আদবকায়দা সম্পর্কে দ্বিধাগ্রস্ত।
লগ্নির এই পদ্ধতি আর্থিক নিয়মানুবর্তিতা তৈরি করে এবং মানুষকে দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক লক্ষ্য পূরণ করার শক্তি দেয়। লক্ষ্যটি জরুরি, তা সে তহবিল তৈরি করাই হোক আর ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা করাই হোক। ২৪/৭ নাগাল পাওয়া, সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি এবং সাধ্যের মধ্যে থাকা সবচেয়ে বড় কথা হল, এই প্ল্যাটফর্ম ফান্ডগুলোর নমনীয়তা এবং সাধ্যের মধ্যে থাকা নিশ্চিত করে। তাঁরা ইচ্ছা করলে নগদ টাকা তুলতে পারেন বা সঞ্চিত সোনাকে আসল সোনায় বদলেও নিতে পারেন। তাছাড়া ব্যবহারকারীরা মাত্র ১০০ মিলিগ্রাম সোনা থেকেই আসল সোনায় বদলে নেওয়া শুরু করতে পারেন। এই সোনা একেবারে তাঁর বাড়ির দরজায় পৌঁছে দেওয়া যেতে পারে সোনার কয়েন হিসাবে অথবা কিউরেটেড সম্ভারের গয়না হিসাবে।
গত কয়েক বছরে একাধিক কারণে মেট্রো শহরের বাইরের ক্রেতাদের মধ্যে ডিজিটালি কেনা সোনা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ছে। একদিকে আর্থিক পরিষেবা সংস্থাগুলো ডিজিটাল সোনার উপস্থিতি ছড়িয়ে দিতে এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তি প্রকল্পগুলোর প্রচারে অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করেছে, অন্যদিকে প্রযুক্তি সারা ভারতের মানুষের কাছে পৌঁছনোর ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছে। স্মার্টফোনের সর্বত্র উপস্থিতি এবং সাধ্যের মধ্যে থাকা ডেটা প্ল্যান আজ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর আরও বেশি নাগালে আসা নিশ্চিত করেছে।
সহজ নাগাল এমনকি নন-মেট্রো অঞ্চলের ক্রেতাদেরও ডিজিটালি সোনা কেনার জন্য প্ল্যাটফর্মগুলোর সঙ্গে আদানপ্রদান করার এবং তাদের বিশ্বাস করার সুযোগ দিয়েছে। ফলে তাঁদের সচেতনতা ও গ্রহণ করার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। এইসব সুবিধা থাকা সত্ত্বেও এটা বোঝা জরুরি যে সোনার দাম বাজারের ওঠাপড়ার উপরে এবং নিয়মকানুন সংক্রান্ত ব্যাপারের উপরে নির্ভর করতে পারে। সোনা কোনও নিয়মিত/পরোক্ষ আয়ও জোগায় না। তবু একথা মনে রাখতেই হবে যে সোনার দাম ঐতিহাসিকভাবে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতাই বজায় রাখে। সুতরাং স্বল্প সঞ্চয়ের মধ্যে দিয়েও সোনায় সঞ্চয় করলে তা সর্বদা লাভজনক হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.