প্রতীকী ছবি
গত কয়েক দিনে ইকুইটি মার্কেট বেড়েছে, এবং বাজারের একাংশের কপালের ভাঁজ কিছুটা হলেও কমেছে। ইনভেস্টররা কি কেবলই অতি স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা করে বারবার আশাহত হচ্ছেন? এই প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন গৌতম কর্মকার। ইন্ডিপেন্ডেন্ট কনসালট্যান্টস অ্যান্ড অ্যাডভাইসরস অ্যাসোসিয়েশনের (আইকা) কর্ণধার চটজলদি লাভ ঘরে তোলার প্রবণতা এবং সেই সম্পর্কিত ঝুঁকির কথা জানিয়েছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নীলাঞ্জন দে।
ইকুইটি বাজারে তো খুব ওঠাপড়া দেখছি। লগ্নিকারীরা অধৈর্য হয়ে পড়ছেন, তাও বুঝতে পারছি। কী করণীয়?
দেখুন, বাজার তো বাড়াকমার মধ্যেই থাকবে। কোনও স্থায়ী ন্যারেটিভ যে কখনওই হবে না, তা বলাই বাহুল্য। ইনভেস্টররা তা বেশ জানেন, তবে তাঁদের মধ্যে অনেকেই অতি দ্রুত রিটার্ন খুঁজতে থাকেন। আমার এই বিষয়ে বক্তব্য খুব পরিস্কার–ঝুঁকি যে আছে তা ভুললে চলবে না। বহুবার দেখতে পেয়েছি, খুব তাড়াতাড়ি বাজারের গতি কমেছে বা বেড়েছে, গ্রোথের অভিমুখের হঠাৎ পরিবর্তন হয়েছে। ছোট লগ্নিকারীর দল প্রায় প্রতিবারই আটকে পড়েন, এ-ও বারবার দেখা গিয়েছে। আমরা যদি ভ্যালুয়েশনের তোয়াক্কা না করে চড়তে থাকা বাজারে ক্রমাগত কিনতেই থাকি, তাহলে পড়ন্ত মার্কেটে অবশ্যই অসুবিধায় পড়ব। সেন্টিমেন্ট বদলে যেতে সময় লাগে না, তাই সব ধরনের পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হয় নিজেকে। অনেকেই তা পেরে ওঠেন না। তাঁদের উদ্দেশ্য বলি, পরিকল্পনায় ঘাটতি যেন না হয়। যে লক্ষ্য নিয়ে বাজারে পা রেখেছেন তা পূরণ করার চেষ্টা করুন। তাতে সময় লাগতে পারে, সেই সময় দেওয়ার জন্য তৈরি থাকতে হবে আপনাদের।
ইকুইটি ছেড়ে অন্য অ্যাসেট ক্লাসের দিকেও মন দিতে হবে, তাই তো?
হ্যাঁ, অবশ্যই। অ্যাসেট অ্যালোকেশনে বিশ্বাসী আমি। কেবল একটি মাত্র অ্যাসেটে সম্পূর্ণ ভাবে নির্ভরশীল হওয়া খুব বিপজ্জনক। তাই স্টক মার্কেটের বাইরে যাওয়ার কথাও ভাবুন। তবে তা আপনার ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতার সঙ্গে মিলিয়ে করতে হবে। যদি ডেট, গোল্ড, রিয়েল এস্টেট ইত্যাদিতে যথেষ্ট অ্যালোকেশন করতে হয় তাও করে ফেলুন। এর জন্য হয়তো আমূল পরিবর্তন করতে হবে আপনার নিজের এতদিন ধরে চলতে থাকা পরিকল্পনার। তবে তা ভালর জন্যই হবে, এই ভরসাটুকু রাখুন। নিজের অ্যাসেট অ্যালোকেশনে রদবদল আনা মাঝে মাঝে জরুরি হয়ে পড়ে মনে রাখুন। রিব্যালেন্সিং করার প্রয়োজন যদি হয়, তাও করতে ভুলবেন না। পরিস্থিতি কেমন, আপনার নিজের প্রোফাইল কেমন, এই সমস্ত বিষয় খুব প্রাসঙ্গিক হয়।
এই মুহূর্তে লগ্নিকারীদের কোন বিষয়গুলি নিয়ে সতর্ক থাকা দরকার?
সব কিছু ছেড়ে দিয়ে কেবল তথ্য সুরক্ষা নিয়েই বলি, বিষয়টি আজকের দুনিয়ায় খুব গুরুতর। বিভিন্ন রেগুলেটর, ক্যাপিটাল মার্কেট নিয়ন্ত্রক সেবিও এই তালিকায় আছে, এই প্রসঙ্গে বার্তা দিয়েছেন। সিকুইরিটির প্রশ্নে আপোস নয়। প্রতিটি লগ্নিকারী যেন মেনে চলেন সাধারণ কিছু সুরক্ষা সংক্রান্ত নিয়ম। ব্যাঙ্কিং সূত্র থেকে পাওয়া খবরাখবর দেখুন। তথ্য সম্বন্ধীয় সতর্কতা জারি রেখেছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। নিজের তথ্য গোপন রাখবেন, কারণ বাজারে বহুলাংশে ফ্রড বেড়েছে। অসাধু ব্যক্তিদের নিরন্তর চেষ্টা প্রতিহত করতে হবে আমাদের সবাইকে। সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ যেন অসাধু ব্যক্তির হাতে না চলে যায়। বস্তুত, আমি বলব যে, সব পক্ষকেই এই বিষয়ে যৌথভাবে দায়িত্ব দিতে হবে। আইকার পক্ষে বলতে পারি আমরা নিজেদের দায় বহন করতে প্রস্তুত, ইনভেস্টর এডুকেশন নিয়ে ইতিপূর্বে একাধিক বার এগিয়ে এসেছি আমরা। ভবিষ্যতেও সেই জাতীয় প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে রাজি আমাদের সদস্যরা।
ইদানীং তো একাধিক ‘কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট’ এবং সেই সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা বেড়েছে। এই ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?
হ্যাঁ, এই ধরনের ইস্যুতে যাতে ইনভেস্টরদের ক্ষয়ক্ষতি না হয়, তা দেখতে হবে। বিগত কয়েক বছরে দেখা যাচ্ছে, কনফ্লিক্ট নিয়ে সব মহলই সজাগ। নিয়ন্ত্রক এবং নীতি নির্ধারক যে স্বচ্ছতা চাইছেন, তা হবে বিভিন্ন নিয়মকানুন বলবৎ হলে। আমরা নিজেদের পরিসরে গ্রাহকদের সতর্ক করে দিচ্ছি। আমার ধারণা আগামী প্রজন্মের কাছে ইতিবাচক বার্তা পৌঁছবে। এখন এই প্রযুক্তিকরণের যুগে, যখন বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প এবং পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে, আম আদমির হাতে বিকল্পের অভাব নেই। বরং অনেক নতুন পথ খুলে গেছে তাঁর সামনে। এখন দরকার সঠিক পরামর্শ। তা না হলে বিপথে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে, রিস্কের মাত্রাও বৃদ্ধি পায়। ইনভেস্টরদের সঠিক পথে চালনা করার দায়িত্ব সবাইকার, তাতে তাঁরা ঠকবেন না, সুরক্ষিত থাকবেন। লগ্নির মাত্রা এবং পদ্ধতি, দুই-ই শক্তিশালী হয়ে উঠবে ভবিষ্যতে, তাই এখন থেকেই সে ব্যাপারে প্রস্তুত থাকতে হবে সংশ্লিষ্ট সবাইকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.