ঋণগ্রহীতা যদি আগাম তাঁর সুদের হার সঠিকভাবে অনুমান করে নিতে পারেন, তবে পরবর্তীতে অবশ্যই লাভে থাকবেন। প্রয়োজনে লোন অবশ্যই নিন কিন্তু ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রেও থাকতে হবে খুব সতর্ক। ডিফল্ট-বাধা যেন রাস্তা না কাটে, বিশ্লেষণে সোমকান্তি সরকার
ইন্টারেস্ট রেট নিয়ে বিশদে কিছু লেখার আগে বলে রাখি যে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এ বিষয়ে সর্বত্র জোরদার চর্চা শুনতে পাবেন-কারণ সুদের হার সংক্রান্ত সব খবরই প্রতিটি বিনিয়োগকারীকে কম-বেশি ছুঁয়ে যাবে, তাঁদের ব্যবহারিক জীবনে খুব বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে বলেই আমার বিশ্বাস। আমাদের অনেকেই হয় ঋণদাতা বা ঋণগ্রহীতা-এই দুটি শ্রেণির কোনও একটির মধ্যে আছি। কোনও না কোনও সময় ধার দিয়েছেন, অথবা ধার নিয়েছেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই। সত্যি কথা বলতে, যদি কোনও ঋণগ্রহীতা আগাম তাঁর সুদের হার অনুমান করতে পারেন, তাহলে তাঁর অনেকটাই সুবিধা হতে পারে।
উদার অর্থনীতির সুযোগ নিয়ে, বিশেষত ইতিবাচক নিয়মকানুনের সাহাযে্য, আজ সাধারণ ভারতীয়রা অনেক বেশি মাত্রায় লোন তথা ঋণ নিতে পারছেন, ফেরত দেওয়ার ব্যাপারেও আজ তাঁরা যথেষ্ট অনুশাসিত। গৃহঋণ নিয়েছেন, এবং ফেরত দেননি ইচ্ছাকৃতভাবে, এমনটা সচরাচর হয় না, কারণ সিবিল স্কোর (বা বলা ভাল, ক্রেডিট স্কোর) খারাপ হওয়ার সম্ভাবনাজনিত ভয় মানুষের মনে তীব্রভাবে ঢুকে আছে। করোনার প্রভাবে এই নিয়ে সাময়িকভাবে অনেক প্রশ্ন উঠেছিল বটে, তবে এখন অবস্থা কিছুটা হলেও বদলে যাচ্ছে। আমাদের ব্যাংক নিয়ন্ত্রক এ ব্যাপারে ইতিবাচক নীতি গ্রহণ করেছিল, যেমন বিশ্বের আর পাঁচটা দেশেও হয়েছিল, এবং নতুন ব্যাঙ্কিং নিয়মকানুন সাধারণ গ্রাহকদের সুবিধাই করে দিয়েছিল। কয়েকটি সেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও, ব্যবসা-বাণিজ্য এখনও স্থিতিশীল রয়েছে, মূলত এই জন্যই।
আজ আমরা বিশ্বাস করি সুদের হারের পরিবর্তন আসবে আর কিছুকাল বাদেই। এর ফল, বুঝতেই পারছেন, পড়বে ‘কস্ট অফ লোন’-এর উপর। আপনি কী হারে লোনের টাকার উপর সুদ দেবেন, তা নির্ভর করবে আগামিদিনে ইন্টারেস্ট রেট কেমন থাকবে, তার উপর। EMI-এর পরিমাণ যদি বাড়ে, তাহলে কী করবেন? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য তৈরি থাকুন।
আবার, অন্যদিকে দেখুন, সুদের হার যদি বাড়ে, তাহলে আপনার ডিপোজিটও বেশি মাত্রায় রিটার্ন দেবে। সে ক্ষেত্রে লাভবান হবেন আপনিই। গ্রাহক হিসাবে আপনি কোন শ্রেণিভুক্ত, সে প্রশ্নও স্বাভাবিকভাবেই এসে পড়ে। মনে করুন, যদি বিশেষ কোনও কারণে, আপনাকে প্রসেসিং ফি দিতে হচ্ছে না, তাহলে আবার লাভ আপনারই। কোন tenure-এর জন্য লোন নেবেন-অর্থাৎ ঋণের মেয়াদ কত-তাও একটি জরুরি বিবেচ্য।
আমি চাই সকলেই লোন নিন, নিজের প্রয়োজনে ব্যাংকিং ক্ষেত্র আপনাকে ‘ট্যাপ’ করতেই হবে। এতে ক্ষতি নেই, বরং লাভই আছে। তবে ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। দেরি না করে নির্দিষ্ট সূচি মেনে চলুন, যাতে কখনই আপনি ‘ডিফল্টার’ না হন সে ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিন। ‘ইনফর্মাল সেক্টর’-প্রকান্তরে মানি লেন্ডার- প্রথমেই বেছে নেবেন না, তাতে সুদের হার ও অন্য শর্ত খুব কড়া ধরনের হয়ে থাকে। সরকারি হোক বা বেসরকারি, ব্যাংকের কাছেই প্রথমে যান, দেখে নিন কী হলে আপনার লোনের স্যাংশন হতে পারে। শর্তগুলি পূরণ করুন-ঋণ নিয়ে সন্তানের শিক্ষার জন্য খরচ করুন, কনজিউমার গুডস কিনুন, বাড়ি সারান।
এবার একটা গুরুতর বিষয়ে মন দিই। Fixed না Floating? এই প্রশ্নটি আমাকে অনেকেই করেন। যদি সুদের হার এখন বাড়ে, এবং ট্রেন্ড যদি কেবলই উর্ধ্বগামী থাকে, তাহলে ঋণগ্রহীতা হিসাবে আপনাকে এখনই নিচু হারে ফিক্সড রেটে ঋণ নিতে হবে। পরে যদি রেট বাড়ে, তাহলেও আপনি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।
(লেখক লগ্নি বিশেষজ্ঞ)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.