বিনিয়োগের জগতে সঠিক পোর্টফোলিও তৈরি করা প্রত্যেক গ্রাহকেরই অগ্রাধিকার থাকে। কিন্তু বহু ঝুঁকি মেপে এগোলেও কখনও কখনও অজ্ঞতাজনিত কোনও ভুলে ঘটতে পারে লোকসান। খুব সাধারণ সেই সমস্ত ভুল কীভাবে এড়াবেন, সেই পরামর্শই দিলেন এবারের অতিথি পরিমল চন্দ্র দাস
বিনিয়োগের জগতে রিটার্নের স্থিরতা অধিকাংশ সময়েই থাকে না, বাজারের ওঠাপড়ায় পোর্টফোলিওর ভ্যালুয়েশনে কম-বেশি হতেই তাকে। তবুও সাধারণ কিছু নিয়ম মেনে চললে অল্প হলেও তার অভিঘাত কমিয়ে আনা যায়, সুরক্ষিত থাকা যায়। নিজের প্রয়োজনের সঙ্গে ফাইন্যান্সিয়াল প্রোডাক্টের ‘ম্যাচিং’ না করতে পারলে কিন্তু অনিশ্চয়তার শিকার হতেই হবে। অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বলছি, আমাদের মধ্যে এমন অনেক ইনভেস্টর আছেন যাঁরা এই ভুলটি করেছেন, অর্থাৎ ভালভাবে প্রয়োজন এবং প্রোডাক্ট, এই দুইয়ের মধ্যে সাযুজ্য আনেননি। তার ফলে তাঁদের রিটার্ন কম হয়েছে, এও বলা যায়। পোর্টফোলিও কেমন হবে?
এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে কাগজ পেন্সিল নিয়ে বসুন, নিজের রিস্কের ব্যাপারে ধ্যানধারণা পাকাপোক্তভাবে লিখে ফেলুন। কী ধরনের ফাইন্যান্সিয়াল প্রোডাক্ট আপনার ক্ষেত্রে যথাযথ হবে, তা এই হিসাব থেকেই বোঝা যাবে। মনে করুন, আপনি নিজে একজন রক্ষণশীল বিনিয়োগকারী, খুব তাড়াহুড়োয় কোন ঝুঁকিপূর্ণ লগ্নি করতে চান না। আপনার চরিত্রের এই দিকটি সম্পূর্ণভাবে প্রতিফলিত হবে আপনার পোর্টফোলিওতে। আর এই বিষয়েই উদাসীন থাকলে, প্রোডাক্ট নির্বাচনে ভুল হবে, উদ্দেশ্য সাধন হবে না।
ইকুইটি-ডেট অ্যালোকেশনে ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে, রিস্কের ধারনার সঙ্গে খাপ খাইয়ে। যে মানুষটি বেশি ঝুঁকি নিতে কুন্ঠিত নন, হয়তো তিনি অল্পবয়সী বা আর্থিকভাবে খুব সমর্থ, তাঁর জন্য ইকুইটি প্রোডাক্টই যথাযথ। হ্যাঁ, সেখানে পারফরম্যান্স অনিশ্চিত হবে, স্টক মার্কেটে ভোলাটিলিটি তো থাকবেই। সেই সঙ্গে রিটার্নের সম্ভাবনাও বাড়বে, অন্তত ডেটের তুলনায়। ডেট অনেক বেশি স্থির এবং শান্ত, তবে ক্রেডিট এবং ইন্টারেস্ট রেটজনিত রিস্ক সেখানেও কিছু কম নেই আজকের পরিস্থিতিতে। এমনই বেখাপ্পা অ্যালোকেশন দেখি জীবনবিমার ক্ষেত্রে। সাধারণ মানুষের অনেকেই প্রোডাক্ট কিনেছেন, একাধিক বিমা সংস্থার কাছে গিয়েছেন, কিন্তু পরিকল্পিতভাবে তা করেননি। প্ল্যানের অভাব, তবে প্রোডাক্টের ভার বেশি – এতে কার্যসিদ্ধি হয় না। অবাঞ্ছিত বিমা প্রকল্পের প্রিমিয়াম দিতে হয় বেশ কিছু বছর ধরে। এতে ইনসিওরেন্স সেক্টরের উপরই অসন্তোষ জন্মায়, বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন বিনিয়োগকারী। অথচ বিমার বিকল্প নেই, সমসাময়িক বিশ্বে এর প্রয়োজনীয়তার কথা নতুন করে আমাকে বলতে হবে না।
এই প্রসঙ্গে সামান্য কয়েকটি বিষয় ছুঁয়ে যেতে চাই।
# বয়স, রোজগার, দায়িত্ব – সব বুঝে নিয়ে নিজের রিস্ক প্রোফাইল স্থির করুন।
# একই ধরনের প্রোডাক্ট বার বার কিনবেন না ; এই অভ্যাস যদি থাকে, ত্যাগ করুন।
# নিজের পোর্টফোলিও যথেষ্ট ডাইভারসিফায়েড আছে তো? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজুন।
# ব্যক্তিগত জীবনে পরিস্থিতি যদি বদলে যায়, তাহলে প্ল্যানেও পরিবর্তন আনুন। তার জন্য কয়েকটি বিশেষ ধরনের প্রোডাক্ট কিনতে হতে পারে বা পোর্টফোলিও থেকে বাদও দিতে হতে পারে।
# নিয়ম করে নিজের পোর্টফোলিওর ভ্যালুয়েশন দেখুন, কোনও অংশে ধারাবাহিকভাবে লোকসান (আন্ডার পারফরম্যান্স) হচ্ছে কিনা তা বোঝার চেষ্টা করুন। তারপর সিদ্ধান্ত নিন। একইভাবে প্রফিট বুকিং করার বিষয়ে চিন্তা করুন। তারপর সিদ্ধান্ত নিন। সুযোগ এলে তার সদ্ব্যবহারের চেষ্টা করাই ভাল ইনভেস্টমেন্টের নীতি।
শেষে বলি শুধু বিমা কেন, মিউচুয়াল ফান্ড বা ডিপোজিটও যেন আপনার নজরের বাইরে না যায়। বহু প্রকল্প বাজারে আজকাল সহজলভ্য, প্রতিযোগী একাধিক ফান্ড হাউস বা ডিপোজিট মোবিলাইজিং সংস্থার প্রোডাক্ট পাশাপাশি রেখে বিচার করুন। দেখবেন, অনেক মিল আছে বিভিন্ন প্রোডাক্টের মধ্যে। সেক্ষেত্রে নির্বাচন সহজ হয়ে গেলেও, ঠিক কীসের ভিত্তিতে প্রোডাক্ট বেছে নেবেন, তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনাকেই।
(লেখক অর্থনৈতিক পরামর্শদাতা)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.