বেশি রিটার্ন আনতে যাঁরা ঝুঁকি নিতেও পিছপা হন না, তাঁদের জন্য ভাল বিকল্প হতে পারে মাল্টি অ্যাসেট অ্যালোকেশন ফান্ড। স্থিতিশীল রিটার্ন আনার ক্ষেত্রে এই ধরনের ফান্ডের জুড়ি মেলা ভার। অজস্র সুযোগসুবিধার মধ্যে অন্যতম ডাইভারসিফিকেশন। ব্যাখ্যায় প্রেমাংশু দাশ
পার্সোনাল ফিনান্সিয়াল প্ল্যানিংয়ের প্রসঙ্গে আমরা যে কথাটা প্রায়ই শুনি তা ঠিক অ্যাসেট অ্যালোকেশনের প্রয়োজনীয়তা সংক্রান্ত। এটা আর কিছুই নয়, নিজের বিনিয়োগকে ডেট ও ডোমেস্টিক ইকুইটি ছাড়াও গোল্ড, রিয়েল এস্টেট, ইন্টারন্যাশনাল ইকুইটি, REITs (Real Estate Investment Trusts), InvITs (Infrastructure Investment Trusts) ইত্যাদির মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া। সঙ্গে লক্ষ্য অবশ্যই থাকে, বিনিয়োগকারীর ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা অনুযায়ী রিস্ক ও রিটার্নের মধ্যে সামঞ্জস্য তৈরি করা। আজকের আলোচনার বিষয় মাল্টি অ্যাসেট অ্যালোকেশন ফান্ড।
বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবির সংজ্ঞা অনুযায়ী এই ফান্ডকে কমপক্ষে তিনটি আলাদা অ্যাসেট ক্লাসের মধ্যে বিনিয়োগ করতেই হবে এবং প্রতিটিতে কমপক্ষে ১০% বিনিয়োগ হবে। বাজারের বর্তমান অবস্থান, ভবিষ্যৎ গতিপ্রকৃতি, দেশের ভু-রাজনৈতিক অবস্থা, রিস্ক ও রিটার্নের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান-এই সব কিছুর ওপর লক্ষ্য রেখেই বিনিয়োগ কোথায় কত হবে, তার পূর্ণ স্বাধীনতা থাকে ফান্ড ম্যানেজারের। গোল্ডের সঙ্গে ডোমেস্টিক ইকুইটির সম্পর্ক অনেক সময়ই বিপরীতমুখী। তাই কেবলমাত্র ডেট ও ইকুইটিতে বিনিয়োগ করা হাইব্রিড ফান্ডগুলির চেয়ে মাল্টি অ্যাসেট অ্যালোকেশন ফান্ড স্থিতিশীল পোর্টফোলিও রিটার্ন দিতে সক্ষম হয়।
ঝুঁকি বেশি নিয়ে রিটার্ন বেশি আনার জন্যে তো বাজারে অনেক ধরনের ইকুইটি ফান্ড আছে, কিন্তু আসুন দেখে নিই, মাল্টি অ্যাসেট অ্যালোকেশন ফান্ড কাদের জন্য আদর্শ।
(১) সাধারণ বিনিয়োগকারী যাঁরা মোটামুটি তিন বছরের জন্য বিনিয়োগ করতে চান এবং রিস্ক বেশি নিতে চান না, তাঁদের জন্য।
(২) নতুন বিনিয়োগকারী যাঁরা ‘মিউচুয়াল ফান্ড’ বিষয়টিকে পরখ করে দেখতে চান তাঁদের জন্যও বেশ ভাল।
(৩) এককালীন বিনিয়োগের জন্য।
(৪) যে সকল বিনিয়োগকারী প্রপার অ্যাসেট অ্যালোকেশন করতে পারেন না তাঁরা চোখ বুজে এই ধরনের ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন কারণ নামটাই তো মাল্টি অ্যাসেট অ্যালোকেশন ফান্ড।
(৫) বর্তমানে প্রচলিত আয়কর আইন অনুযায়ী ডেট ফান্ড, গোল্ড ফান্ড বা ইন্টারন্যাশনাল ফান্ডে ইন্ডেক্সেশন বেনিফিটের সুবিধা পাওয়া যায় না। তাই যাঁরা উঁচু হারে আয়কর দেন তাঁরাও এই ফান্ডে বিনিয়োগ করে ইন্ডেক্সেশন বেনিফিট-সহ ডেট ট্যাক্সেশনের সুবিধা নিতে পারেন।
(৬) অবসরকালীন এককালীন বিনিয়োগের মাধ্যমে যাঁরা প্রতি মাসে আয় চান।
ট্যাক্সেশন বেনিফিটস: এই ক্যাটেগরির ফান্ডের ট্যাক্সেশন ব্যাপারটি সামান্য জটিল, যেহেতু বিনিয়োগ কোথায় হবে তা সম্পূর্ণই ফান্ড ম্যানেজারের ইচ্ছাধীন তাই বিনিয়োগকারীকে আগেই জেনে নিতে হবে কোন ফান্ড ইকুইটি ট্যাক্সেশন এবং কোন ফান্ড ইন্ডেক্সেশন বেনিফিটের সুবিধা-সহ ডেট ট্যাক্সেশনের সুবিধা দেবে। ইকুইটি ট্যাক্সেশনের সুবিধা থাকা ফান্ডে কেবলমাত্র ১০% লং টার্ম ক্যাপিটাল গেন ট্যাক্স দিতে হয় যদি কোনও আর্থিক বছরে লাভের পরিমাণ এক লক্ষ টাকার বেশি হয় এবং বিনিয়োগের সময়সীমা এক বছরের বেশি হয়। সময়সীমা এক বছরের কম হলে শর্ট টার্ম ক্যাপিটাল গেন ট্যাক্স প্রযোজ্য। উল্টোদিকে ইন্ডেক্সেশন বেনিফিট-সহ ডেট ট্যাক্সেশনের সুবিধা পেতে গেলে সেই ফান্ডকে অবশ্যই ৩৫%-৬৫% এর কম ইকু্যইটিতে বিনিয়োগ করতে হবে এবং বিনিয়োগের সময়সীমা অবশ্যই তিন বছরের বেশি হতে হবে। ইন্ডেক্সেশনের নতুন নিয়ম ভাল করে জেনে নিন।
ছবিতে দেওয়া ফান্ডগুলি কোনও রকম পক্ষপাতিত্ব ছাড়াই কেবলমাত্র তিন বছর পার করেছে। এই শর্তেই নেওয়া হয়েছে, এছাড়া আরও ফান্ড বাজারে আছে। কিন্তু ৬-১১-২০২৩ তারিখের হিসাব অনুযায়ী সেগুলি তিন বছর অতিক্রান্ত হয়নি। তিন বছর আগে ও পাঁচ বছর আগে করা এককালীন ১০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগের বর্তমান বাজার মূল্য ও তার ফলে প্রাপ্ত বার্ষিক চক্রবৃদ্ধির হার ছবিতে আছে। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কেবলমাত্র নিপ্পন ইন্ডিয়ার ফান্ডে ইন্টারন্যাশনাল ইকুইটিতে বিনিয়োগ আছে যার পরিমাণ প্রায় ২০%। গত এক বছরে এই ক্যাটেগরির ফান্ডগুলির অ্যাসেট সাইজ প্রায় ডবল হয়ে গেছে। এটি কেবলমাত্র পরিসংখ্যান, কোনওভাবেই কোনও বিনিয়োগকারীকে উৎসাহিত করার জন্য নয়।
ছোটবেলায় পড়েছিলাম দুধ ‘সুষম খাদ্য’, কারণ দুধে তো আমাদের দেহের প্রয়োজনীয় সমস্ত ধরনের খাদ্য উপাদান থাকে। এক বাক্যে এটাকেও অনেকটা মিউচুয়াল ফান্ডের বাজারচলতি সমস্ত স্কিমের মধ্যে ‘সুষম স্কিম’ বলে ভাবতে পারেন! বাজারগত বিনিয়োগের যে রিস্ক তা অবশ্যই আছে এই ফান্ডে, বিনিয়োগের পূর্বে অবশ্যই আর্থিক পরামর্শদাতার সাথে কথা বলে নেবেন। ‘জয়, সুষম খাদ্যের জয়; জয়, সুষম মিউচুয়াল ফান্ড স্কিমের জয়।’
(লেখক বিনিয়োগ পরামর্শদাতা)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.