প্রতীকী ছবি
কৌশলী চালেই রিটার্নে বাজিমাত, জীবনে যে সিদ্ধান্তই নেন, তার পিছনে কি থাকে নিরন্তর ভাবনা-চিন্তা, দীর্ঘ কিন্তু সুষ্ঠু পরিকল্পনা? তাহলে ‘ট্যাকটিক্যাল অ্যালোকেশন’ হতেই পারে আপনার সেরা অস্ত্র। যদি চান স্বল্প সময়ের জন্য অ্যালোকেশন করে লাভের কড়ি ঘরে তুলতে, তাহলে ট্যাকটিক্যাল অ্যালোকেশনের উপর ভরসা রাখতেই পারেন। তবে তার আগে জেনে নিন এর অ-আ-ক-খ। লিখলেন বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ সিদ্ধার্থ চ্যাটার্জি
অ্যালোকেশন সম্বন্ধে আমাদের একটা ধারণা আছে বটে। সাধারণভাবে ৬০% ইকুইটিজ, ৩০% ফিক্সড ইনকাম, ১০% সোনা–এই রকম আর কি! ৬০% ইকুইটিজ-এর মধ্যে ২০% মিড ক্যাপ, ৭০% লার্জ ক্যাপ, ১০% থিম্যাটিক। মোটামুটি সকলেই এই ধরনের একটি অ্যালোকেশন করেন। যে কোনও বিনিয়োগকারীর এই ধরনের একটি অ্যালোকেশনের মাধ্যমে লং টার্ম গোল মাথায় রেখে বিনিয়োগ করেন। এই আশায় যে বিভিন্ন মার্কেটের পরিস্থিতিতে এই ধরনের একটা ‘মিক্স’ কাজ করবে এবং তার যে লক্ষ্যমাত্রা আছে, তা সিদ্ধ হবে। ব্যাপারটা ঠিক না বেঠিক সেটা নিয়ে তর্ক করে কোনও লাভ নেই।
ট্যাকটিক্যাল অ্যালোকেশন হল স্বল্প সময়ের জন্য অ্যালোকেশন করে মুনাফা অর্জন করা। এটি এক ধরনের সুযোগ – আর সুযোগের সদ্ব্যবহার করাটাই উচিত। তবে এটি কিন্তু পুরনো অ্যালোকেশনের থেকে আলাদা, কারণ পুরনো অ্যালোকেশনের আধার হল ‘লং টার্ম গোল’ অর্থাৎ দীর্ঘমেয়াদি উদ্দেশ্যসাধন। যদি নতুন টাকা না থাকে, তাহলের পুরনো অ্যালোকেশনের থেকে কিছুটা ‘রিডিম’ করে অর্থাৎ বেচে দিয়ে ট্যাকটিক্যাল অ্যালোকেশনে ঢুকে পড়া সম্ভব কিছু সময়ের জন্য। এর পিছনে তত্ত্ব হল–Tactical allocation aims to exploit deviation in asset class performance over a short term।
ধরা যাক, একজন ইনভেস্টরের অ্যাসেট অ্যালোকেশন ইকু্যইটি মার্কেটে ৪০% থেকে ৬০%। যদি শেয়ার বাজারে পতন হয়, তখন ট্যাকটিক্যাল অ্যালোকেশন ৪০% বাড়িয়ে ৬০% পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যেতে পারে কম সময়ের জন্য। যদি ৬০% ‘অ্যালোকেটেড’ আগে থেকেই হয়ে থাকে, তাহলে ৪০% যেটা আছে, তার থেকে অল্প সময়ের জন্য ২০% খরচ হতে পারে। আবার বাজার যদি খুব গরম হয়ে যায় তখন ইক্যুইটি কমিয়ে ৪০%-এ নিয়ে আসা যেতে পারে। এতে রিটার্নটা ভালো হওয়ার সুযোগ বৃদ্ধি পায়। আমরা সাধারণভাবে বিনিয়োগ করে বসে থাকি–একটু একগুঁয়েমি আছে এর মধ্যে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সাইকেল তৈরি হয় ইন্ডাস্ট্রিতে। তখন সেই সব শেয়ার আপেক্ষিকভাবে বেশি বৃদ্ধি পায়। ট্যাকটিক্যাল অ্যালেকেশন সেই বৃদ্ধিকে ধরতে সাহায্য করে।
বাজারের বিভিন্ন পর্যায় চলে। পর্যায়গুলো অনেকটা এ রকম–
(১) অর্থনীতিতে মন্দা এসে গিয়েছে– শেয়ারের দামে তারই জন্য মন্দা। সেই সময় ট্যাকটিক্যাল অ্যালোকেশন ফার্মা, এফএমসিজি, ইউটিলিটিজ-এ কাজ দেয়।
(২) অর্থনীতি চাঙ্গা হতে শুরু করেছে–তখন অটো, মেটাল, আইটি, ফিনান্সিয়াল শেয়ার ঊর্ধ্বগামী হওয়া উচিত।
(৩) অর্থনীতি দ্রুত গতিতে ধাবমান–তখন ফিনান্সিয়াল, রিয়াল এস্টেট, কনজিউমার ডিসক্রিশনারি, ক্যাপিটাল গুডস-এর শেয়ারে ঊর্ধ্বগতি দেখা যাবে। অর্থনীতির বিভিন্ন ধাপ আপনাকে এই ট্যাকটিক্যাল অ্যালোকেশন করতে সাহায্য করবে এবং রিটার্নও বেশ ভালো তৈরি হবে। অর্থাৎ আপনাকে সক্রিয় হয়ে টাকার অ্যালোকেশন করতে হবে–নিষ্ক্রিয় হলে চলবে না।
এতে কি ঝুঁকি আছে?
বেশি রোজগার করার চেষ্টার হিতে বিপরীত হতেই পারে। থিম বা থিমের মধ্যে থিম খুঁজতে হয়। যেমন অটো থিম আপনি সময়মতো ধরতে পারলেন না! তখন সাব থিম হয়ে উঠবে অটো অ্যানসিলিয়ারি বা অটো সংক্রান্ত ব্যবসা যেমন টায়ার বা ব্যাটারি। অটো থিম চললে এরাও চলবে। এটি এক ধরনের ট্যাকটিক্যাল অ্যালোকেশনের নমুনা। অনেক সময় মোমেনটাম থিম বা হাই বিটা, বা সেক্টর যেমন ফার্মা বা বা প্রতিরক্ষা ইত্যাদি।
মোমেনটাম থিম কী?
যে শেয়ারের দামে গতিবেগ আছে। এই বেগ কিছু কিছু শেয়ারে ক্রমাগত চলতে থাকে। টেকনিকাল চর্চায় ‘মুভিং অ্যাভারেজ কনভার্জেন্স ডাইভার্জেন্স’ (এমএসিডি) একটি ভাল ইঙ্গিত। দুটি ‘মুভিং অ্যাভারেজ’-এর সম্পর্ক দামের সঙ্গে স্থাপন করা হয়।
হাই বিটা কী?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.