‘মাল্টি’ তথা ‘বহু’ শব্দটির গুরুত্ব আমাদের জীবনে অপরিসীম। একের বেশি এবং বৈচিত্রে ভরা কিছু আমরা সবেতেই চাই। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, মিউচুয়াল ফান্ডের জগতেও এই শব্দের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে এবং তা হল বিশেষভাবে ‘মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন’-এর ক্ষেত্রে। এর উপর ভিত্তি করে স্টকের শ্রেণিবিভাগ ঠিক কেমন হয়, কোন ক্ষেত্রে কেমন লগ্নি করলে ভরতে পারে লাভের ঝুলি, ব্যাখ্যা করলেন নীলাঞ্জন দে
‘মাল্টি’- সোজা বাংলায় ‘একাধিক’ বা ‘অনেক’- কথাটির সঙ্গে আমরা বেশ পরিচিত। মাল্টি-ভিটামিন ট্যাবলেট খাওয়া বা মাল্টি-গ্রেনস ব্রেকফাস্ট সিরিয়ালের স্বাদ গ্রহণ করা- এই সবই আমরা বিভিন্ন বয়সে করে থাকি। মিউচুয়াল ফান্ডের জগতে ‘মাল্টি’-র প্রয়োগ সাধারণত মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশনের ক্ষেত্রেই আমরা দেখি। সংক্ষেপে বললে, যে ফান্ডটির পোর্টফোলিওর মধ্যে একাধিক মার্কেট ক্যাপ সম্মিলিত স্টক দেখি, সেগুলিই মাল্টি ক্যাপ ফান্ড হিসাবে পরিচিত। এই মুহূর্তে বাজারে যে এই ধরনের ফান্ড রয়েছে, সেগুলির সবই মোটামুটি একটিই উদ্দেশ্যে লগ্নিকারীর দ্বারস্থ হয়েছে – দীর্ঘমেয়াদের জন্য বিনিয়োগকারীর টাকা (ক্যাপিটাল) বাড়িয়ে তোলা।
বিশদে কিছু জানানোর আগে বলি মার্কেট ক্যাপের মানে কী? নিচের ফর্মূলা দেখুন –
{ কোম্পানির মোট আউটস্ট্যান্ডিং শেয়ারের সংখ্যা } x
{ কারেন্ট মার্কেট প্রাইস-মানে এখনকার বাজারদর }
যেহেতু প্রতিটি কোম্পানির শেয়ারের সংখ্যা এবং সাম্প্রতিকতম দাম পরিবর্তনশীল, তাই মার্কেট ক্যাপের অদলবদল ক্রমাগত হতেই থাকে। এবং হিসাব বদলে যাওয়ার দরুন, যে কোনও স্টকের মার্কেট ক্যাপের বাড়া-কমা খুবই সাধারণ ঘটনা। স্বাভাবিকভাবেই, যে স্টকের দাম দ্রুত বাড়ছে, স্রেফ জনপ্রিয়তার কারণেই সেটির মার্কেট ক্যাপ উচ্চতর স্তরে পৌঁছে যেতে পারে। আমাদের দেশের শেয়ার বাজারে যে স্টকগুলি মার্কেট ক্যাপের নিরিখে প্রাধান্য পেয়েছে, সেগুলির নাম আমরা সকলেই জানি। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ, টিসিএস, এইচডিএফসি ব্যাংক, ইনফোসিস, স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া ইত্যাদি একেবারেই প্রথম শ্রেণির স্টক। প্রতিটি ক্ষেত্রেই মার্কেট ক্যাপ খুব উৎসাহভরে পর্যবেক্ষণ করে থাকেন বিনিয়োগকারীরা।
এবার আসি এই ক্যাপিটালাইজেশনের ভিত্তিতে স্টকের শ্রেণিবিন্যাসে। মূলত তিন ধরনের শ্রেণিতে লিস্টেড কোম্পানিগুলি ভাগ করা হয়- ‘লার্জ’, ‘মিড’ এবং ‘স্মল’।
২০১৭ সালের সেবি প্রণীত নিয়ম অনুযায়ী মার্কেট ক্যাপের ভাগ :
লার্জ ক্যাপ : এক থেকে একশো-তম স্টক
মিড ক্যাপ : ১০১ থেকে ২৫০-তম স্টক
স্মল ক্যাপ : ২৫১-তম থেকে শুরু।
আবার ভিন্ন একটি বিন্যাসের তত্ত্ব অনুযায়ী, লার্জ ক্যাপের অর্থ ২০,০০০ কোটি টাকা বা তার বেশি, মিড ক্যাপ ৫০০০-২০,০০০ কোটি টাকার মধে্য, এবং স্মল ক্যাপের পরিমাণ ৫,০০০ কোটি টাকার কম।
কেন আপনি মাল্টি ক্যাপ ফান্ড নিজের জন্য কিনতে চাইবেন? এই প্রশ্নের উত্তরে বলা চলে যে এই ধরনের ফান্ড আপনার অ্যাসেট অ্যালোকেশনে সাহায্য করবে। কেউ যদি বিভিন্ন মার্কেট-ক্যাপ শ্রেণিভুক্ত স্টকে নিজের টাকা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখতে চান, তাহলে এই পদ্ধতি মেনে চলতে পারেন।
মনে করুন আপনি আলাদা করে শুধু লার্জক্যাপ (বা মিডক্যাপ/স্মলক্যাপ) ফান্ডে লগ্নি করবেন না মনস্থ করেছেন। আপনি হয়তো চান যে কেবলমাত্র একটি প্রোডাক্ট বেছে নেবেন যেখানে সমস্ত ধরনের মার্কেট ক্যাপই উপস্থিত। সেক্ষেত্রে এই জাতীয় ফান্ড আপনার পক্ষে আদর্শ গণ্য করা যেতে পারে।
এক বছরের পারফম্যান্সের ভিত্তিতে যে ফান্ডগুলি নজর কেড়েছে:
বি.দ্র- রেগুলার প্ল্যানের তথ্য দেওয়া হয়েছে। কোনওরকম পক্ষপাতিত্ব করা হয়নি। বিনিয়োগকারী যেন শুধু ‘পাস্ট পারফরম্যান্স’ না দেখেন, অন্যান্য জরুরি তথ্যও যাচাই করে নেন কেনার আগে।
সেবির শর্ত অনুযায়ী ন্যূনতম ২৫% বিনিয়োগ করতে হবে প্রতিটি মার্কেট ক্যাপের শ্রেণিতে যদি একটি ফান্ড মাল্টি ক্যাপের তকমা পেতে চায়।
একটি ‘লাইভ’ উদাহরণ দিলে গড়পড়তা মাল্টি ক্যাপ ফান্ডের চরিত্রটি ও বৈশিষ্ট্যগুলি বুঝতে পারবেন। আমরা ICICI Prudential Multicap Fund বেছে নিয়েছি পাঠকদের সুবিধার্থে।
রিটার্ন (শুরু থেকে ধরলে) : ১৫.২০% (১৫ই নভেম্বরের ন্যাভ)
ন্যাভ : ~৪৬৫.৮৯ (পাশে পাঠকের চিঠির উত্তর দেখুন।)
হোল্ডিং-এর সংখ্যা : প্রায় ৮০টি শেয়ার
প্রথম ৫টি স্টক : ICICI Bank/HDFC Bank/TVS Motor Infosys/ Avenue Supermarts.
প্রথম ৫টি সেক্টর : ব্যাংক/কনস্ট্রাকশন/টেকনোলজি/ অটোমোবাইল/ হেলথকেয়ার।
(লেখক লগ্নি পরামর্শদাতা)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.