সাঁতার না শিখে জলে নামলে অনুশোচনা ছাড়া কিছু হাতেই আসবে না। তেমনই না জেনে-বুঝে পড়াশোনা করলে, সেই বিদ্যাও মস্তিষ্কে দীর্ঘস্থায়ী কখনও হবে না। বিনিয়োগের জগতও একই নিয়মে চলে। এই বাজারে টিকে থাকতে হলে যে কোনও বিষয়ে সম্যক জ্ঞান থাকাটা জরুরি। তাই আগে ভাল করে জানুন, বুঝুন তারপর লগ্নি করুন। দিশা দেখালেন এবারের অতিথি অশোক রায়
বিনিয়োগ করার আগে কিছু বিষয়ে ভাল করে জেনে বুঝে নিয়ে তবেই এগোনো উচিত। যে কোনও সাধারণ মধ্যবিত্তের কাছে টাকা-পয়সা খুবই পরিশ্রমের এবং কষ্টসাধ্য বিষয়। বিনিয়োগ করার আগে যথাযথভাবে জেনে বুঝে না নিলে, পরে অনেক ক্ষেত্রেই সময় এবং অর্থের অপচয় হয়। পাশাপাশি মানসিক যন্ত্রণাতেও পড়তে হয়।
যে কোনও টাকা যে কোনও জায়গায় ইনভেস্ট করার আগে আগে তিনটি বিষয় নিজের কাছে আগে পরিষ্কার করে নিতে হবে। আগে দেখুন, যে টাকাটা আপনি বিনিয়োগ করতে চাইছেন সেটা কী কারণে বিনিয়োগ করতে চাইছেন? তার পর দেখুন, কার জন্য বিনিয়োগ করতে চাইছেন? আরও একটা বিষয় যেন নিজের কাছে স্পষ্ট থাকে-ওই টাকাটা কখন আপনার প্রয়োজন হবে? এই তিনটি বিষয়ে স্বচ্ছ এবং সঠিক ধারণা থাকলে বাকি কাজকর্ম এগোবে স্বচ্ছন্দে, অনায়াসেই।
ধরা যাক কেউ বিনিয়োগ করতে চাইছেন, তার বাচ্চার উচ্চশিক্ষার জন্য বা তার অবসরের জন্য, বা এরকম কিছু অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণ করার জন্য। এর পর আপনাকে ঠিক করতে হবে, যখন আপনার টাকাটা লাগবে তখন কত টাকা লাগতে পারে? কারণ Inflation তথা মুদ্রাস্ফীতি তো আমার-আপনার জন্য চুপচাপ বসে থাকবে না! সেটা তার মতো করেই বাড়বে। ধরুন, যিনি তার বাচ্চার উচ্চশিক্ষার জন্য বিনিয়োগ করতে চাইছেন, তিনি কীভাবে তাকে কোনও রকম পেশাদার ব্যক্তির সাহায্য না নিয়ে নির্ণয় করতে পারবেন?
আমি দেখিয়ে দিচ্ছি: শিক্ষায় খরচ যে ভাবে বাড়ছে তাতে ধরা যাক, ‘এডুকেশন ইনফ্লেশন’ ৯%। এবার আপনি এক্ষেত্রে ফাইন্যান্স-এর থাম্ব রুল প্রয়োগ করে নিজে নিজেই নির্ণয় করতে পারেন। ‘রুল অফ ৭২’, এটি একটি থাম্ব রুল। এই রুলের সাহায্য নিয়ে কীভাবে আপনি আপনার ওই বাচ্চার ভবিষ্যতের শিক্ষার খরচ নির্ণয় করবেন? আপনাকে ৭২ কে ৯ দিয়ে ভাগ করতে হবে। তাহলে কত হবে? উত্তর-৮। তার মানে ৮ বছরে শিক্ষার খরচ আজ যতটা প্রয়োজন হচ্ছে তার দ্বিগুণ লাগবে।
অর্থাৎ আজ যদি কোনও হায়ার এডুকেশন কোর্স করতে একটা বাচ্চার ১০ লাখ টাকা লাগে। তাহলে ৮ বছর পর ওই এডুকেশন কোর্স করতে লাগতে পারে দ্বিগুণ, মানে ২০ লাখ টাকা। যদি শিক্ষার জন্য ব্যয় আপনার অনুমান অনুযায়ী ৯% রেটে বাড়ে, যদি বাস্তবে আরও বেশি রেটে বাড়ে, তাহলে তা ২০ লাখের থেকে বেশি হবে। আর যদি ওই ৯% এর থেকে কম রেটে বাড়ে, তাহলে তা কম হবে।
এবার আপনি যেখানে ওই শিশুটির শিক্ষার জন্য বিনিয়োগ করতে চান সেখানে কত শতাংশ রিটার্ন পেতে পারেন বলে আন্দাজ করছেন সেটা দেখে নিন। ধরুন, আপনি যে ধরনের ফান্ডে বিনিয়োগ করতে চাইছেন তাতে আপনি প্রত্যাশা করছেন যে আপনি ১২% রিটার্ন পেতে পারেন। তাহলে আবার ওই ৭২ কে ১২% দিয়ে ভাগ করে নিন, তাহলে হবে ৬। মানে আপনার বিনিয়োগ করা টাকাটা ৬ বছরে দ্বিগুণ হয়ে যাবে। এইভাবে আপনি মোটামুটিভাবে একটা পরিকল্পনা নিজে নিজেই করে নিতে পারেন। পরিকল্পনা না করতে পারলেও নিদেনপক্ষে একটা ধারণা তো করতেই পারবেন, তাই না?
(লেখক লগ্নি বিশেষজ্ঞ)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.