নতুন বছরে দেশের বাজার কেমন থাকতে পারে? বিশ্বব্যাপী ক্ষেত্রে কোন কোন ঘটনার প্রভাব পড়তে পারে? অ্যাসেট অ্যালোকেশনে কোন কোন কথা মাথায় রাখতেই হবে, রেখচিত্র এঁকে দিলেন এবারের অতিথি প্রসূনজিৎ মুখার্জি
তেইশে পা রাখলাম আমরা। কিন্তু প্রশ্ন, নতুন এই বছর তার ঝুলিতে বিনিয়োগ আর বিনিয়োগকারীদের জন্য কী কী চমক রেখেছে?
It’s the worst of times
It’s the best of times.
অর্থাৎ এটাই সবচেয়ে খারাপ সময়। আর তাই, এটাই সবচেয়ে ভাল সময়। ২০২৩ সালকে এই লাইন দু’টির মাধ্যমেই সবচেয়ে ভাল ব্যাখ্যা করা যেতে পারে বলে আমার অভিমত।
এবার আপনারা বলবেন, কেন? উত্তর, সব ধরনের বাজারের নিরিখে ভারতই এই মরসুমের সেরা ‘চয়েস বলে মনে হচ্ছে। কারণ দেশের বিনিয়োগকারীদের হাতে নিয়মিত অর্থ আসছে, যা অন্য বাজারগুলির ক্ষেত্রে ঘটছে না। অন্তত বিশ্বব্যপী প্রধান বাজারগুলির ক্ষেত্রে তো বটেই। অন্যান্য বাজারের তুলনায় অনেক আগে থেকে ভারতের জিডিপির হারে বৃদ্ধি হতে দেখা গিয়েছিল। আর সেটাই সংখ্যাগরিষ্ঠের কাছে এ দেশের সুনাম বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। ইনডেক্স-জনিত উপার্জনও বেড়েছে বেশ ভালই। কিন্তু সব কিছু যদি এতই ভাল-ভাল হয়, তাহলে আমার বক্তবে্য সেই ইতিবাচক সুরটা ধরা পড়ছে না কেন? এর কারণ, সমস্যা কম-বেশি এখনও রয়েছে, অন্তত যদি ভবিষ্যতের কথা ভেবে গোটাটাকে বিচার করি।
প্রথমত হল ‘বেস এফেক্ট’। আর এই প্রসঙ্গে বলি, গত দু বছরে ডিনোমিনেটর নিচুর দিকে ছিল, তাই ফল (কোশেন্ট) উঠেছিল উপরের দিকে। এই অনুপাতটিই বিকাশের সঠিক মাপকাঠি। ইকু্যইটি মার্কেট ভবিষ্যৎমুখী আয়ের উপর ভরসা রাখে অনেকটাই। সেই দিকে তাকিয়েই আগামী বছরে এই অনুপাতটি কম হতে পারে, কারণ ‘বেস এফেক্ট ডিভিডেন্ড’-এর অস্তিত্ত্ব আর নেই। ফলে আগামী কয়েক মাসে বিকাশের ধারা অব্যাহত থাকবে।
তবে এই ধারায় বাধা তৈরি করতে পারে বিশ্বের সামগ্রিক অবস্থা। ইউরোপে যুদ্ধ ছাড়াও আরও অনেক কিছুর প্রভাব অর্থনীতির উপর পড়ছে। শক্তিসম্পদের মূল্য, খাদ্যের মুদ্রাস্ফীতি আক্ষরিক অর্থেই চিন্তার বিষয়। শক্তি সম্পদের সঠিক মূল্য নির্ধারণের অভাবে বিকাশের গতি বার বার ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। আর ইউরোপের বাজারের অবস্থা তো বলাই বাহুল্য। অথচ ইউরোপ কিন্তু বড় ধরনের গ্রাহক, বড় ধরনের ব্যয়-নির্বাহক এবং ‘ফিনিশড প্রোডাক্টস’-এর বড় ধরনের বাজারও বটে। সে দেশের জনতার উপার্জিত অর্থের একটা বড় অংশ নিষিদ্ধ শক্তিসম্পদের খরচ নির্বাহে বেরিয়ে যায়। আর এ সবকিছুর পর বিবেচনার আর কিছু বাকি থাকে না। চাহিদা ক্রমশ কমতে থাকায় উন্নয়নশীল দেশগুলির রপ্তানি-বাবদ আয়ের উপর প্রভাব পড়ছে। আর এই তালিকায় ভারতও আছে।
এছাড়া রয়েছে খাবারের দামের সমস্যা। ইউরোপেই অবস্থান ‘বিশ্বের রুটির ঝুড়ি’-সহ একাধিক কৃষি-নির্ভর দেশের। ফলত বোঝাই যাচ্ছে, কীভাবে তা চিন্তার বিষয় হয়ে দঁাড়াচ্ছে। ভূ-রাজনৈতিক নানা ধরনের ঘটনার প্রভাব আর এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও প্রতিকূলতা সৃষ্টি করছে শিপিং লাইন। ক্রুড অয়েল অর্থাৎ অপরিশোধিত তেলের ট্যাঙ্কারগুলিকে আগের থেকে দীর্ঘতর রুট ব্যবহার করে আনা হচ্ছে, যার ফলে সব ধরনের খরচ বাড়ছে। ফলে সামগ্রিকভাবে চাষবাসেরও খরচ বাড়ছে। তবু এ কথা বলা সম্ভব নয় যে, সব কিছু ঠিক নেই। যদি মার্ক-টু-মার্কেট মেনে চলেন, তাহলে এক বছর বা তেমন স্বল্প মেয়াদের জন্য ভাল কিছু ডেট প্রকল্প পাবেন, যেখানে গ্রোথ যথাযথ হবে। এবং আগামি তিন-চার মাসে ‘আর্বিট্রাজ’-এর ক্ষেত্রেও যথেষ্ট সুযোগ পেতে পারেন। নগদ অর্থের ক্ষেত্রটিও আগামি ৪-৬ মাসে বেশ চনমনে থাকবে, বলা যায়। কাজেই অ্যাসেট অ্যালোকেশনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট বিকল্প রয়েছে, যা সঞ্চয়েও সাহায্য করবে। ভারতের ইকু্যইটি বাজারে গ্রাহকদের জন্য বলি, ‘প্ল্যানিং হরাইজন’ ন্যূনতম ৩ বছর হতে পারে। দেশি বাজারে তো বটেই, নন-ইউরোপিয়ান গ্লোবাল সেগমেন্টেও একটু একটু করে পা ফেলার কথা বিনিয়োগকারীরা ভাবতেই পারেন। যদি ধৈর্য্য ধরে থাকেন, তাহলে এই সমস্ত ক্ষেত্রগুলি নিরাশ করবে না বলেই মনে হয়। শুভ হোক নতুন বছর। শুভ হোক বিনিয়োগও।
(লেখক myplexus.com-এর চিফ অ্যানালিস্ট)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.