লক্ষ্য স্থির করলে তবেই না পূরণের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া যায়! অর্থনৈতিক পরিকল্পনাও এই নিয়ম মেনেই চলে। তাই নতুন ফিনান্সিয়াল ইয়ারের শুরুতেই আর্থিক পরিকল্পনা করে রাখুন। আখেরে তা কাজে আসবে আপনারই। কী কী দিকে রাখতে হবে বিশেষ খেয়াল, সূত্র খুঁজে দিলেন মান্না ক্যাপিটালের কর্ণধার, নিখিল কুমার মান্না
আপনার টাকা আপনার জন্য খাটুক, নতুন আর্থিক বছরের শুরুতেই আর্থিক পরিকল্পনা করুন। না হলে সারাজীবন টাকার জন্য খাটতে হবে। টাকা আপনার জন্য খাটুক তবেই আমৃত্যু সুখকর হবে। নিজেদের সময় কম থাকলে একজন সঠিক আর্থিক পরামর্শদাতা বাছুন। যে প্রোডাক্ট কিনছেন তার সেফটি, সিকিউরিটি, লিকুইডিটি, মুদ্রাস্ফীতিকে ছাপিয়ে রিটার্ন জেনারেট করে আপনার লক্ষ্যপূরণ করতে পারবে কি না দেখে নিন প্রথমেই।
নতুন আর্থিক বছর শুরু হয়ে গিয়েছে। চৈত্র সেলের বাজারে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে কেনা কাটার হিড়িক শেষ হল সদ্যই। বিক্রেতারা পুরোনো স্টক শেষ করে পয়লা বৈশাখ বাঙালিদের নতুন বছর শুরুর অপেক্ষায়, আবার নতুন নতুন জিনিসের পসরা সাজিয়ে ক্রেতাদের মনরঞ্জনের অপেক্ষায় প্রস্তুত। আমাদেরও জীবনচক্রের বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় বিগত বছরের আর্থিক অভিজ্ঞতাকে মাথায় নিয়ে নতুন বছরের শুরুতেই ফিনান্সিয়াল প্ল্যানিং করতে হবে। আমাদের লক্ষ্যগুলোকে পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে এবং নতুন লক্ষ্যপূরণের জন্য সঠিক পরিকল্পনা করতে হবে।
প্রথমত, স্বাস্থ্য বিমা আছে কি না দেখে নিন। না থাকলে কিনে নিন, থাকলে রিনুয়াল তারিখ লিখে লিপিবদ্ধ করুন এবং ১৫ দিন আগে রিনিউ করার উদ্যোগ নিন। আর্থিক স্বাধীনতা লাভ করতে হলে স্বাস্থ্য বিমা একটি অন্যতম উপাদান।
দ্বিতীয়ত, জীবন বিমা যা সংসারকে আপনার-আমার অবর্তমানে রক্ষা করে। যতগুলি পলিসি আছে তার প্রিমিয়াম দেওয়ার তারিখ লিখে রাখুন এবং গ্রেস পিরিয়ডের আগে জমা দেওয়ার চেষ্টা করুন। নিজের ‘হিউম্যান লাইফ ভ্যালু’ই হিসাব করুন। সেই মত জীবন বিমা করুন, বিভিন্ন কোম্পানির টার্ম প্ল্যান দেখুন। কারণ, কমপক্ষে এক কোটি টাকার বিমা লাগবে। বছরে ছয় লক্ষ টাকা উপার্জনকারীর এক কোটি টাকার কনভেনশনাল পলিসি কেনার ক্ষমতা হবে না। অথচ প্রয়োজন এক কোটির বিমা। তাই টার্ম প্ল্যানই আদর্শ। এছাড়া ICICI Lombard-এর মতো বিভিন্ন GIC, অতি অল্প মূল্যে ফ্যামিলি শিল্ড জাতীয় পলিসি এনেছে। যেগুলি কেবল দুর্ঘটনাজনিত বিমা এবং সম্পূর্ণ বা আংশিক অক্ষমতাজনিত কভারেজ দিয়ে থাকে, তার দিকেও নজর দিতে পারেন। সঠিক এবং প্রয়োজনীয় জীবন বিমা পলিসি সংসারের অর্থিক স্বাধীনতার একটি উপাদান।
তৃতীয়ত, যাঁরা GPF, PPF এ টাকা কাটান, শুরুতেই স্থির করুন বাড়াবেন না কমাবেন। এগুলোর পরিবর্তে মিউচুয়াল ফান্ডের ELSS স্কিম করবেন কি না, ভাবুন। গত ১৫ বছরের PPF এবং ELSS-এর রিটার্ন বিশ্লেষণ করুন। দেখুন কোন প্রোডাক্ট আপনাকে লিকুইডিটি বেশি দিয়েছে। সঙ্গে মুদ্রাস্ফীতির সাপেক্ষে বেশী রিটার্ন দিয়েছে। সেই মতো সিদ্ধান্ত নিন, বিশেষ করে যাঁরা পুরানো সিস্টেমে ট্যাক্স দিতে চান। বছরের শুরুতে প্লানিং করলে বছরে শেষে চাপ কমে।
চতুর্থত, আপনার লক্ষ্যগুলো সাজিয়ে নিন। যাঁরা টাকা খাটানোর জন্য বিনিয়োগ শুরু করেছেন, রিব্যালেন্সিং করার প্রয়োজন আছে কি না, দেখে নিন। পরামর্শদাতার সাথে বসুন। স্কিমগুলোর পারফরম্যান্স দেখে যদি সামান্য অদলবদল দরকার মনে হয়, করে নিন।
যাঁদের বয়স ২০-২৫ বছর, সদ্য উপার্জন করা শুরু করেছেন, তাঁরা ৫-৭ বছরের জন্য নিজের বিয়ের খরচের প্ল্যানিং করতে পারেন। অনেকে চাইছেন, এখন বাবা-মায়ের টাকা না নিয়ে নিজের টাকায় বিয়ে করতে। এই সময় কালের জন্য লার্জ ক্যাপ জাতীয় বিভিন্ন মিউচ্যুয়াল ফান্ড কোম্পানির স্কিম যথাযথ হবে। এতে নিজের আর্থিক স্বাধীনতা তৈরির সহায়ক হবে।
সন্তানের শিক্ষা: আজ শিক্ষাখাতে খরচ ১০% হারে বেড়ে চলেছে, এই খাতে টাকা খাটাতে হলে সেই ফান্ডে লগ্নি করুন দীর্ঘ মেয়াদে যেখানে ১০% বা একটু অধিক রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। সেক্ষেত্রে UTI, SBI, HDFC মিউচুয়াল ফান্ড-সহ অন্যান্য কোম্পানির চিলড্রেন্স স্কিমগুলি বিবেচনা করলে ভাল ফল পাওয়া যাবে।
সন্তানের বিবাহ: আপনি বাবা-মা হিসাবে এই দায়িত্ব এড়াতে পারবেন না। তাই বছরের শুরুতেই ভাবুন আগামী কত বছর পরে সন্তানের সম্ভাব্য বিবাহ হতে পারে। আর ওই সময় কত টাকা লাগতে পারে। সেই মতো প্ল্যান করুন। এখন অনেক কম টাকা খাটালে আগামিতে সুখের হবেই।
অবসর: রিটায়ারমেন্ট একটি অবশ্যম্ভাবী লক্ষ্য এবং খুব খরচবহুল। এই সম্পর্কে সংবাদ প্রতিদিন-এর সঞ্চয় পাতায় আগেও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এই লক্ষ্যকে বাস্তবে রূপায়িত করতে হলে প্রচুর ধৈর্য্য, নিয়মানুবর্তিতা বজায় রেখে লার্জ, মিড, মাল্টি ও স্মল ক্যাপ এর সংমিশ্রণে একটি জবরদস্ত পোর্টফোলিও বানাতে হবে। নজর রাখতে হবে যেন, এই পোর্টফোলিও বেঞ্চমার্কের তুলনায় ভাল পারফর্ম করে, ‘রিটায়ারমেন্ট গোল’ কে সফল করে এবং প্রয়োজনীয় কর্পাস তৈরি করতে সক্ষম হয়।
পরিশেষে বলি, সব ক্ষেত্রেই একজন দক্ষ, বিষয়ভিত্তিকভাবে শিক্ষিত আর্থিক পরামর্শদাতা বা আর্থিক পরিকল্পনাকারীর সহায়তা নেওয়া আবশ্যক। তিনিই আপনাকে আপনার সঠিক লক্ষে উপনীত হতে অনেকটা সাহায্য করতে পারবেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.