প্রতীকী ছবি
স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখা যেমন অভ্যাস, তেমনই অভ্যাস হল নিয়মিত সঞ্চয় করা। শৈশব থেকেই দেওয়া উচিত সঞ্চয়ের পাঠ। যাতে পরবর্তীতে হঠাৎ ঘনিয়ে আসা কোনও আর্থিক বিপদ সামাল দেওয়া যায় অনায়াসেই। কিন্তু সঞ্চয়ের সঠিক অভ্যাস গড়ে তোলারও কিছু নিয়ম-কানুন আছে। কীভাবে সঞ্চয় করলে তা আক্ষরিক অর্থেই পরবর্তীতে কাজে আসবে, তা বোঝা জরুরি। সেই সূত্রই বাতলে দিলেন লগ্নি পরামর্শদাতা ও সঞ্চয় সহযোগী শমীৎ রায়।
প্রত্যেক মাসের ২ তারিখ সঞ্চয় অবশ্যই করুন। সঞ্চয় হল অভ্যাস, অন্যান্য অভ্যাসের মতোই। কোনও কিছু একদিনে বা অল্প দিনে তৈরি হয় না। কোন সংগীতশিল্পী বা খেলোয়াড় বা রাজনীতিক–সকলকে প্রত্যেক দিনের অভ্যাসই বড় করে তোলে। সঞ্চয় হল অভ্যাস, সঞ্চয় করা হল অভ্যাস তৈরি করা। আবার অভ্যাস ও বদঅভ্যাস দুই ভাই একসঙ্গেই মানুষের মধ্যে থাকে এবং সারা জীবন ধরে চলে। এই দুই ভাইয়ের মধ্যে সব সময় লড়াই চলে। মানুষের জীবনে প্রথম অবস্থায় বদ অভ্যাসের আধিপত্য বেশি থাকে। পরে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ যেমন শিক্ষা-দীক্ষা লাভ করতে থাকে, সেরকম অভ্যাসের আধিপত্য আসে বদ অভ্যাসের উপর।
এখানে বলা দরকার অভ্যাস= সঞ্চয় করা। বদ অভ্যাস = খরচা (বাজে)
আমি যদি মাসের গোড়ার দুই তারিখে সঞ্চয় করি তাহলে আমার সঞ্চয় হল। কিন্তু যদি ভাবি পরে সঞ্চয় করব, তাহলে হতে পারে আর হলই না, কোনও বিশেষ একটি এমন কাজ এসে গেল, যার জন্য। আবার দেখা গিয়েছে, যিনি বা যাঁরা মাসের প্রথমে সঞ্চয় করেন, আর যিনি বা যাঁরা মাসের শেষে সঞ্চয় করেন, তাঁদের মধ্যে মাসের প্রথমে যাঁরা সঞ্চয় করেন তাঁরা এগিয়ে থাকেন শেষে যারা সঞ্চয় করেন, তাঁদের থেকে। এখানে বলা দরকার যে, শুধু অভ্যাস করার থেকে গাইডের সাহায্যে সুঅভ্যাস গড়ে তোলাই সমীচিন।
যেমন বাবা আর শিশু সন্তান মেলায় বেড়াতে গেলে, কোন হাত ধরাটা লাভজনক? শিশু সন্তানের বাবার হাত ধরা না বাবার শিশু সন্তানের হাত ধরাটা? যে গাইড করবে সে যদি ভুলও করে, সে-ই আবার শুধরাবে। কিন্তু নিজে নিজে ঠিক হতে পারে আবার ভুল হলে, সংশোধন করতে সময় লাগবে। আমাদের প্রত্যেকের জীবনে তিনটি অধ্যায়, অর্থনৈতিকভাবে।
প্রথম: সঞ্চয় সংগঠিত করা। এই কাজে পদার্পণ করলে আমাকে যেটা মাথায় রাখতে হবে, সেটা হল, আমি টাকা চাইলে যেন পাই। সেটাই সঞ্চয়। যেটাকে আমরা বলি ‘Liquidity’। আরও বলি Emergency Fund / Contingency Fund. এটা আমার এবং আমার পরিবারের জন্য খুবই দরকার। তার সাথে সুরক্ষা বা স্বাস্থ্য বিমা এবং জীবন বিমা।
দ্বিতীয়: সঞ্চয় সরক্ষিত করা। এর জন্য বিশেষ ভাবে দরকার অ্যাসেট অ্যালোকেশন। বেশি সুরক্ষা বা কম সুরক্ষা, কোনওটাই ভালো নয়। এর ভালো উদাহরণ (নিজের বয়স ১০০ থেকে বাদ দিয়ে) Debt Part বা Safe এবং বাকী টা Equity Part বা Risk.
তৃতীয়: সঞ্চয় বিতরণ। আমার স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তি আমি আমার জীবদ্দশাতে বা মৃত্যুর পর কি করব, তা লিখিত করা। আমাদের জীবনটা বৈচিত্র্যময়। মনের ভাব এবং বাস্তব অনেক সময় আলাদা হয়েও যায়। তাই :
একটি প্রবাদবাক্যের উল্লেখ করছি। “সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে”। যে সংসারে সঞ্চয়ের দায়িত্ব রমণী নেবে সেখানে সমৃদ্ধি আসবেই আসবে। কারণ প্রকৃতিগত ভাবে মহিলারা গৃহকর্মে নিপুণ হন। ছোটবেলায় দেখেছি, বাড়িতে প্রতি বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীপূজা হতো এবং বাড়ির বড়রা গুল্লাক বা মাটির ভাঁড়ে পয়সা জমাতেন। পরে আবার বাড়িরই কোনও কাজে সেই পয়সা কাজে লাগাতেন। এটিও এক ধরনের হ্যাবিট বিল্ডিং। উপার্জন আর সঞ্চয় সম্পূর্ণ আলাদা। অনেক মানুষ জীবনে প্রচুর উপার্জন করলেও কিন্তু যথেষ্ট সঞ্চয় করতে পারেন না। তাই নিয়ম করে এই কাজটি করাই ভালো। আমার মতে,“স্বাস্থ্যই সম্পদ আর সচেতনতাই সমৃদ্ধি”। সঞ্চয়ের তারিখ প্রতি মাসের ২ তারিখ। টাকার অঙ্ক যা-ই হোক না কেন!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.