বাজারে ঝুঁকি থাকবেই। তা মেপে-বুঝেই এগোতে হবে বিনিয়োগ করতে চাইলে। কিন্তু এই ঝুঁকি বা ভোলাটিলিটি কি আদৌ মাপা সম্ভব? একটা আগাম ছবি কি পাওয়া যেতে পারে? বিশেষজ্ঞদের দাবি, পারে। যদি সংখ্যাতাত্ত্বিক পরিসংখ্যানের সাহায্য নেওয়া যায়। তথ্য দিয়ে বোঝালেন এবারের অতিথি সোমকান্তি সরকার
ইনভেস্টমেন্টের লক্ষ্য থেকে প্রায়ই বিচ্যূত হই আমরা। মার্কেট এমনই শক্তিশালী, নানা টানাপোড়েনের সঙ্গে যুঝতে হয় বিনিয়োগকারীকে। কাজেই যা রিটার্ন পাবার আশা করি, তার থেকে কম পাওয়া বেশ স্বাভাবিক ঘটনা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমার আজকের লেখা, বিষয় ‘ভোলাটিলিটি’। সাদা বাংলায় অস্থিরতা। বাজারের অনিশ্চয়তা থেকে দূরে থাকা দুষ্কর, তাই এর সঙ্গে মানিয়ে চলাই বুদ্ধিমান লগ্নিকারীর রীতি।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ভোলাটিলিটি কি মেপেজুখে নেওয়া সম্ভব? আমার উত্তর, হ্যাঁ অবশ্যই-বিশেষত যদি স্ট্যাটিসটিক্সের সাহায্য নেওয়া হয়। Standard Deviation-এর কথাই ধরুন। রিস্কের পরিপ্রেক্ষিতে, কোন লগ্নির আসল রিটার্ন ঠিক কতটা ‘ফ্লাকচুয়েট’ করল সেটির অ্যাভারেজ রিটার্নের তুলনায়, তা দেখাই এখানে উদ্দেশ্য। Standard Deviation ব্যবহার করে দু’টি লগ্নির তুলনা টানা যায়, আবার সংশ্লিষ্ট বেঞ্চমার্ক থেকে কতখানি বিচ্যুতি ঘটেছে, তার অঙ্কটিও কষে নেওয়া সম্ভব। এ তো হল শুকনো পরিসংখ্যান। আমরা জিজ্ঞাসা করতেই পারি অস্থিরতার কারণ কী?
ঠিক কোন কারণে ভোলাটিলিটি হয়? রাজনৈতিক কারণ ছেড়ে দিয়ে যদি শুধু অর্থনৈতিক কারণ খোঁজেন, তাহলে বেশি দূরে যেতে হবে না, সহজেই বুঝতে পারবেন। সরকারই শিল্প-বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রক, তাই সরকারী নীতি, প্রকল্পের রূপায়ণ বা নবীকরণ-এও অস্থিরতার জন্ম দিতে পারে। নতুন অর্থনীতি সংক্রান্ত ডেটা চলে এলে, বাজার তা জানতে আগ্রহী হয়। ভয়-ভীতির উৎপাদক হয়ে ওঠে খারাপ ফলাফল (বা ‘ম্যাক্রো’ স্তরের কোনও দুঃসংবাদ)। এই সমস্তই আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। অতএব আমরা কেবল কিছু কৌশল মেনে চলতে পারি, তার বেশি কিছু করা কার্যত অসম্ভব।
আমি প্রত্যেক লগ্নিকারীকে জানাতে চাই যে, নিজের পোর্টফোলিও যথাসম্ভব ডাইভারসিফাই করুন। কেবল একটি-দু’টি সেক্টরে নিজেকে আটকে রাখবেন না কখনওই। যদি আপনি স্টকে বিনিয়োগ করেন, নানা অর্থনৈতিক ক্ষেত্র থেকে নিজের স্টকগুলি নির্বাচিত করুন। এছাড়াও ইমার্জিং সেক্টরের খোঁজ রাখুন। যেমন ধরুন, নিউ এনার্জি। পুরোনো ক্রুড অয়েল-নির্ভর শিল্পের অভাব নেই, কিন্তু বিশ্বের নানা কোণে আজ নিউ এনার্জির ব্যবহার হচ্ছে, আগামিদিনে এর উজ্জ্বল উপস্থিতির কথা সকলেই জানেন। তাই এই সেক্টরে ভাল স্টক খঁুজে নেওয়ার চেষ্টায় থাকুন। একটি উদাহরণ দিলাম, এমন তো আরও আছে, সেগুলি চিহ্নিত করার চেষ্টা করুন।
ভোলাটিলিটির প্রসঙ্গে কয়েকটি সাধারণ কথা বলে বক্তব্য শেষ করি। এই বৈশিষ্ট্যগুলি দেখুন-
# অস্থিরতা ভোলাটিলিটির অঙ্গ, মধ্য বা দীর্ঘমেয়াদি ভোলাটিলিটি দেখতেই হবে, এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেয়।
# অস্থির বাজার কিন্তু প্রচুর সুযোগ দেবে যদি আপনি নিজে ধীরস্থির থাকেন। দাম পড়লে কিনুন, সেই সুযোগ পাবেনই। তবে দীর্ঘদিন কিছু না করে থাকবেন না, তাতে ক্ষতি হবে।
# অনন্তকাল অপেক্ষা করবেন না একদম সঠিক দাম পাওয়ার চেষ্টায়। প্রয়োজন বুঝে, পদ্ধতি মেনে, সিস্টেম্যাটিক প্রক্রিয়া চালু করুন।
# বিনিয়োগ করেছেন, ভাল কথা। নিজের হোল্ডিংটিকে সময় দিন, বিনা কারণে বিক্রি করা ঠিক নয়। হঠাৎ সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক ক্ষেত্রেই ভুল প্রমাণিত হয়, পরবর্তী কালে পস্তাতে হয়। পরিশেষে, কিছু চেনা আচরণবিধি মেনে চলুন। ভোলাটিলিটি আছে, থাকবেও-আপনি নিজের দায়িত্ব নিতে পিছপা হবেন না।
(লেখক লগ্নি বিশেষজ্ঞ)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.