এ কথা সর্বজনবিদিত যে আমাদের দেশের অনেক বেশি সংখ্যক মানুষ আজ রিটায়ারমেন্ট প্ল্যানিংয়ের উপর জোর দিচ্ছেন। তাঁদের অনেকেরই পরিকল্পনার কেন্দ্রে আছে ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম, যার দায়িত্বে আছে পেনশন ফান্ড নিয়ন্ত্রক যা পিএফআরডিএ (পেনশন ফান্ড রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অথরিটি) নামে পরিচিত। পিএফআরডিএ-র তৈরি করা রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্কই হল আধুনিক রিটায়ারমেন্ট-মনস্ক নাগরিকের প্রধান হাতিয়ার, জানাচ্ছেন পিএফআরডিএ-এর চেয়ারপার্সন, সুপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায়। শুনলেন নীলাঞ্জন দে। ‘সঞ্চয়’-এর পাতায় রইল তাঁর এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার।
পেনশন মার্কেট এই মুহূর্তে কোথায় দাঁড়িয়ে?
দেখুন, ভারতবর্ষের গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট বা জিডিপি-র মাত্র ১২ শতাংশ হল পেনশন অ্যাসেটস। তুলনায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা বা ইউনাইটেড কিংডমের ক্ষেত্রে সংখ্যাটি ৮০ থেকে ১২০ শতাংশ। তাই আমাদের দেশের বিপুল সম্ভাবনার কথা বলাই বাহুল্য। তবে হ্যাঁ, আজ পেনশন সেক্টর বেশ ছড়ানো-ছেটানো। তার একটি বড় কারণ হল একাধিক পেনশন স্কিমের উপস্থিতি।
ইপিএফ তথা ইপিএস (ইপিএফও-র অন্তর্গত), এনপিএস তথা এপিওয়াই, কোল মাইনস পিএফ, সিমেনস পিএফ ইত্যাদি মিলিয়ে পরিধি বেশ বিস্তৃত। জনসংখ্যার যে অংশটিকে আমরা ওয়ার্কিং পপুলেশন বলি, সেই আটচল্লিশ কোটির বৃহৎ ভাগটি অসংঘটিত সেক্টরে নিয়োজিত। সুতরাং এই গোষ্ঠীটিকে পেনশনের বৃত্তের মধ্যে নিয়ে আসার অবশ্যই প্রয়োজন আছে। আগামী দিনে যে সমস্ত সংস্কার আমরা আনব, তাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য এটিই হবে।
সংস্কারের কথাই যখন বললেন, কি ধরনের অদল বদল আসতে পারে বলে মনে করেন?
সংক্ষেপে বলতে গেল, সাবস্ক্রাইবার যাতে একটি “মিনিমাম এ্যাসিওরড রিটার্ন” (Minimum Assured Return) পান, তার জন্য আমরা সচেষ্ট হয়েছি। এমন রিটার্ন দিতে সক্ষম হবে, তেমনই একটি স্কিম আনার প্রয়াস চলছে। স্কিমটি অবশ্যই পিএফআরডিএ অ্যাক্ট (PFRDA Act)-এর আওতায় থাকবে। মনে করিয়ে দিই, অ্যানুইটির রেট কমে আসছে। এর প্রেক্ষিতে অ্যাডিশনাল পেআউট দেওয়ার সম্ভাবনা আমরা খতিয়ে দেখছি। উদ্দেশ্যটি খুব সরল- সাবস্ক্রাইবারদের হাতে নিয়মিত পেমেন্ট। বিশেষত যখন তাঁরা এনপিএসের সময় রেখার বাইরে চলে যাবেন।
যদি নির্দিষ্টভাবে কিছু জানতে চান, তাহলে বলি যে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ধারাবাহিকভাবে পরিষেবা দেওয়াই হল আমাদের সমস্ত সংস্কারের লক্ষ্য। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে, বিশেষ করে এই প্যানডেমিকের ভয়াবহ পরিমণ্ডলে, আমরা নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যেতে চাই।
আগামী দিনে নতুন সাবস্ক্রাইবাররা কি পরিষেবা পাবেন?
আমরা সাম্প্রতিককালে একগুচ্ছ সুবিধা নিয়ে এসেছি। যাঁরা এনপিএস-এর আওতায় আসতে চলেছেন, তাঁরা নিশ্চয় এগুলির সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল হবেন, আশা করি। যেমন ধরুন আমাদের ডি-রেমিট সংক্রান্ত নিয়ম, যার মাধ্যমে ‘সেম ডে ন্যাভ’ (যেখানে সকাল সাড়ে ন’টার আগে কন্ট্রিবিউশনের শর্ত আছে) পাওয়া সম্ভব হয়। এছাড়াও ডিজিটাল এনরোলমেন্ট নিয়ে জানা বাঞ্ছনীয়। এটি আধার অথেন্টিকেশন, ভিডিও কেওয়াইসি ইত্যাদি দ্বারা করা যায়।
অন্যদিকে নতুন একটি সুবিধার কথা বিশেষভাবে বলে রাখি। এনপিএস-এর জন্য ন্যূনতম ‘এন্ট্রি এজ’, অর্থাৎ অন্তর্ভুক্তির বয়স, ৬৫ থেকে ৭০ করা হয়েছে। কন্ট্রিবিউশনের বয়স ৭০ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ করা হয়েছে। মানুষের গড় আয়ু (লাইফ এক্সপেকটেন্সি) বেড়ে যাওয়া ও আরও বেশিদিনের জন্য রিটায়ারমেন্ট প্ল্যানিং-এর সুবিধা দেওয়া, এই দুই কারণেই তা করা হয়েছে। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, শর্তাধীনভাবে কোন সাবস্ক্রাইবার তাঁর নিজস্ব কন্ট্রিবিউশনের পঁচিশ শতাংশ পর্যন্ত কোভিড চিকিৎসার জন্য তুলতে পারবেন।
তাহলে রিটায়ারমেন্ট মার্কেট এখন কোনমুখী? আগামী পাঁচ বছর পেনশনের বিস্তার কেমন হবে?
আমি একটা খুব দরকারি বিষয়ের উপস্থাপনা করছি। বয়স্ক নাগরিকদের কথাই বলছি। আগামী তিন দশকে আনুমানিক ২০৫০ সালে, ষাট বা তার বেশি বয়সি যারা, তাদের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে ১০ থেকে ২০ শতাংশে পৌঁছবে। এবং তাদের জন্য পর্যাপ্ত পেনশন কভারেজ যে খুবই জরুরি, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।এবার আসি এনপিএস তথা এপিওয়াই-এর সামগ্রিক অ্যাসেট আন্ডার ম্যানেজমেন্ট-এর কথায়। গত চার বছরে এই সংখ্যাটির বৃদ্ধি ৩৫ শতাংশ।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, পরের পাঁচ বছরে বৃদ্ধির হার বেশ ভাল থাকবে। আশা রাখি যে ২০২৬ সালে পেনশন অ্যাসেটস (কেবল এনপিএস এবং এপিওয়াই জুড়ে ধরে নিচ্ছি) কুড়ি লক্ষ কোটি টাকায় এসে দাঁড়াবে। সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যাও দ্বিগুণ হয়ে সাড়ে নয় কোটিতে পৌঁছে যাবে। শেষে বলি, ২০২০ সালের সোশ্যাল সিকিউরিটি কোড বাস্তবায়িত হলে সমগ্র পেনশন সেক্টরের রূপরেখার স্থায়ী বদল আসবে, এই আশা রাখি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.