পারসোন্যাল ফাইন্যান্সের জগতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসাবে এবার পরিচয় করুন ইকুয়াল ওয়েট ইনডেক্স ফান্ডের সঙ্গে। এই ইনডেক্সের প্রতিটি স্টকে সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়। ফল? সন্তুষ্টির বিনিয়োগ, লাভের বিনিয়োগ। ব্যাখ্যায় নীলাঞ্জন দে
পারসোনাল ফাইন্যান্সের জগতে ইনডেক্স-বেসড ইনভেস্টিং যে নানা কারণে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, সে বিষয়ে আমরা সকলেই বর্তমানে ওয়াকিবহাল। এখন বেশ কিছু নতুন ধরনের সূচক নিয়ে চর্চা হয়, ব্যাপারটা আর নিছক সেনসেক্স এবং নিফটিতে আটকে নেই। এই দুটি ইনডেক্সের নাম আলাদাভাবে উল্লেখ করলাম, কারণ এগুলির অবদান অনস্বীকার্য, ভারতীয় স্টক মার্কেটের গতিবিধি সেনসেক্স এবং নিফটি দিয়েই প্রধানত মাপা হয়। তবে ওই যে বলা হল, অন্য ধাঁচের ইনডেক্সও বিনিয়োগকারীর নজরে আসছে, এবং স্বাভাবিকভাবেই এগুলির ভিত্তিতে নতুন ধরনের বিকল্পও এখন লগ্নিকারীর সামনে উপস্থিত।
সূচক-নির্ভর ইনভেস্টমেন্ট বলতে যা প্রথমেই মনে পড়ে তা হল, কোনও বেছে নেওয়া ইনডেক্সের অন্তর্গত স্টকগুলির অনুপাতেই লগ্নি করা। সোজা করে বললে, ফান্ড ম্যানেজার যদি দেখেন যে রিলায়েন্স ইন্ড্রাস্ট্রিজ নিফটির ১০ শতাংশ জুড়ে রয়েছে, তাহলে তাঁর নিফটি-ভিত্তিক ইনডেক্স ফান্ডটিও রিলায়েন্সকে ১০ শতাংশ ‘ওয়েটেজ’ দেবে। অর্থাৎ, সূচকটিকে যথাযথভাবে অনুকরণ করবেন, কারণ ইনডেক্স ফান্ডের মূল কথাই হল বেছে নেওয়া ইনডেক্সটিকে অন্ধভাবে মেনে নেওয়া। ফান্ড ম্যানেজার তাই সূচকটিকে হারিয়ে দিয়ে পারফরম্যান্স বাড়াতে চান না। ‘প্যাসিভ ইনভেস্টিং’ একেই বলে। তুলনায় অন্য ‘অ্যাক্টিভ’ ম্যানেজার চাইবেন সূচককে হারিয়ে, বেশি রিটার্ন এনে দেওয়া।
বলাই বাহুল্য বেশির ভাগ লগ্নিকারীই আজ পর্যন্ত অ্যাক্টিভ ম্যানেজমেন্টই চেয়েছেন, কেবলমাত্র বিগত কয়েকবছর ধরে পৃথিবীজোড়া উত্থান দেখছে প্যাসিভের দুনিয়া। ইনডেক্স নিয়ে চিন্তা-ভাবনা বেড়েছে, প্রচুর নতুন ইনডেক্স এসেছে এবং সেই ট্রেন্ডের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেশ কিছু ইনডেক্স-জড়িত প্রোডাক্টও এসে পড়েছে। এরই অন্যতম হল ‘ইকুয়াল ওয়েট ইনডেক্স ফান্ড’। এখানে ইনডেক্সটির অন্তর্গত প্রতিটি স্টকে সমান ওয়েটেজ দেওয়া হয় এবং এই সমান ভাবটি ধরে রাখার জন্য নিয়মিত ‘রি-ব্যালান্স’ করা হয় (সাধারণত প্রতি তিন মাসে, মানে কোয়ার্টারলি)। এই ব্যবস্থার নিহিত অর্থ তো বোঝাই যাচ্ছে – কোনও বিশেষ স্টক প্রাধান্য পাবে না, প্রতিটি একইভাবে সূচকটির মধ্যে গণ্য হবে।
একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি খোলসা হবে। ধরা যাক Nifty 50 Equal Weight Index-এর কথা। এখানে (Nifty 50-র মতোই) ৫০টি শেয়ার আছে, প্রতিটির ক্ষেত্রেই ২ শতাংশ ওয়েটেজ ধরা হয়েছে। তাই সর্বাধিক ওজনদার কোম্পানির স্টকও (যেমন রিলায়েন্স, ইনফোসিস বা এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক) ওই দু শতাংশ নিয়েই সন্তুষ্ট। এক নামী মিউচুয়াল ফান্ডের সমীক্ষায় দেখা গেছে গত একুশ বছরে Nifty 50 Equal Index Weightage বেশ ভাল করেই Nifty 50 Index-কে হারিয়ে দিতে পেরেছে।
যথারীতি রিস্ক সম্বন্ধে ধারণা তৈরি না করে, এমন কোনও ফান্ডে বিনিয়োগ করবেন না। স্টক মার্কেটের অনিশ্চয়তা তো এখানে সবথেকে তাড়াতাড়ি ধাক্কা দেবে, এবং অন্যান্য ইনডেক্স ফান্ডের মতোই এখানেও ‘ট্র্যাকিং এরর’ আসবে। তার মানে সূচকটিকে যথার্থরূপে অনুকরণ না করতে পারলে যে সমস্ত অসুবিধা হতে পারে, ইকুয়াল ওয়েটের ধারণাও তার ব্যতিক্রম নয়। প্রতিবার সূচক দেখে লগ্নি করার আগে তাই দু’বার ভাববেন, তারপরেই আঁটঘাঁট বেঁধে নামবেন।
(লেখক লগ্নি বিশেষজ্ঞ)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.