বাঁধা কিন্তু খোলা। হ্যাঁ, লোন এগেন্স্ট সিকিউরিটিজ-কে এইভাবেই বর্ণনা করা যায়। কারণ ল্যাস-কে হাতিয়ার করে সহজে ঋণ নেওয়া, সেই অর্থের লগ্নি এবং ঋণপ্রদানকারী ব্যাংকের সুদ মেটানো, সবটাই সম্ভব। অতি সুবিধাজনক এই ঋণ পরিষেবা নিয়েই এবার রইল বিস্তারিত বিবরণ।
বর্তমানে নিজের পোর্টফোলিওর একটি অংশ বাঁধা রেখে টাকা ধার করা কোন দুরূহ কাজ নয়, বরং বিনিয়োগকারীর সিংহভাগই এই কাজটি খুব দক্ষতার সঙ্গে করছেন। তাঁদের হাতে যে অস্ত্রটি রয়েছে তার পোশাকি নাম ‘লোন এগেন্স্ট সিকিওরিটিজ’ – সংক্ষেপে বললে ‘ল্যাস’। এই ‘ল্যাস’-এর কল্যাণে তাঁরা সহজে টাকা ধার করা, ধার করা টাকার লগ্নি এবং ঋণ প্রদানকারী ব্যাংকের সুদ মেটানো-তিনটি দিকই পটু হাতে সামলাচ্ছেন। আজ এই অতি সুবিধাজনক (হ্যাঁ, অন্য সবের মতো ঝুঁকি এতেও আছে) লোনের কথা
আলোচনা করছি।
মনে করুন আপনি মিউচুয়াল ফান্ড কিনেছেন, এবং মার্কেটের নিয়ম অনুযায়ী সেটির ওঠাপড়া হয়ে চলেছে। আপনার সামনে অন্য কোনও অ্যাসেট কেনার সুযোগ এল, তবে চটজলদি সেটির জন্য টাকা বের করতে পারলেন না। হয়তো সাময়িক লিকুইডিটির অভাবেই। কী করবেন? সুযোগ হাতছাড়া হলে আবার তা ফিরে নাও আসতে পারে! আপনি স্রেফ ফান্ডটি বাঁধা রেখে-সোজা ভাষায় মর্টগেজ করে-সেটির ভ্যালুর একটা বড় অংশ কোন ব্যাংক থেকে ধার নিলেন। ফান্ডটির উপর একটি ‘লিয়েন’ তৈরি হল। ধার করা টাকা নিয়ে এবার আপনি ইচ্ছামতো অন্য ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাসেট তৈরি করে নিতে পারবেন।
ধরে নিন আপনার মর্টগেজ দেওয়ার মতো অ্যাসেট আছে – ধরা যাক শেয়ার বা মিউচুয়াল ফান্ড যার ভ্যালু ২০ লক্ষ টাকা। আপনি এই ২০ লক্ষ টাকার অ্যাসেট ব্যাংকে গিয়ে তার উপর লিয়েন তৈরির সিদ্ধান্ত নিলেন। মনে করুন, ব্যাংক ৮০% পর্যন্ত ধার দিল। (পুরো ভ্যালুয়েশনের উপর পাবেন না) অর্থাৎ ১৬ লক্ষ টাকা আপনার হাতে চলে এল। এবার এই ১৬ লক্ষ টাকা নিয়ে অন্য অ্যাসেট কিনলেন। এক বা একাধিক উপায়ে লগ্নি করলেন, যাতে লাভবান হতে পারেন। সময়মতো সুদ মেটালেন, আবার সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যাংকে টাকা ফেরত দিলেন। লিয়েন উঠিয়ে নিল ব্যাংক, আপনার প্রথম অ্যাসেটটি ‘ফ্রি’ হয়ে গেল। আপনি যদি আগে লোন নিয়ে থাকেন এবং চালু গ্রাহক হন, একাধিকবার ল্যাস নিতে নিতে ব্যাংকের কাছে গিয়ে যথাসম্ভব কম সুদে এই পরিষেবা নেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন।
আপাতদৃষ্টিতে সরল হলেও, কয়েকটি কথা মনে রাখা দরকার। দেখুন, ‘ল্যাস’-এর ক্ষেত্রে আপনাকে সুদ গুনতে হবে। সেই সুদের হার অবশ্য ব্যাংকই ঠিক করবে, এবং সময়মতো তার ভিত্তিতে ইন্টারেস্ট দিতে হবে। প্রধান যে অ্যাসেটটি বাঁধা রাখলেন তার চরিত্র, ভ্যালুয়েশন এবং অন্যন্য কিছু শর্তই সুদের হার ঠিক করে দিতে সাহায্য করবে।
আপনাকে লোন নেওয়া টাকার উপর সুদ গুনতেই হবে, নচেৎ লিয়েনের নিয়ম মেনে ব্যাংক আপনার প্রথম অ্যাসেট পুরোপুরি বা আংশিকভাবে বেচে দিতে পারে। দ্বিতীয় অ্যাসেটটি যেন ভালভাবে, ভেবেচিন্তে কেনা হয়। অবশ্য একাধিকভাবে লগ্নি করে নানারকম অ্যাসেট তৈরি করতেই পারেন। সময় মেনে খেলতে হবে- সুদ সময় অনুযায়ী দিতে হবে, ফি যদি কিছু থাকে তা মেটাতে হবে, দরকার মতো বেচে দিয়ে ‘রিস্কি অ্যাসেট’ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
ব্যাংক জিজ্ঞাসা করবে না, লোনের টাকা নিয়ে আপনি কী করবেন? কোনও ‘মনিটরিং’ নেই। অর্থাৎ যা ইচ্ছা তাই করতেই পারেন – কিন্তু আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন, তেমন কিছু নিশ্চয়ই করতে চাইবেন না।
পরিশেষে বলি, ল্যাস একটি নিশ্চিন্ত পদ্ধতি। ভাল করে ব্যবহার করতে পারলে সুরক্ষিতভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ইনভেস্টরের হাতে সহজলভ্য অস্ত্র তুলে দিয়েছে ব্যাংক এবং অন্য লোন সংস্থা। শুধু দেখতে হবে ইন্টারেস্ট রেট যেন আপনার স্বপক্ষে থাকে। ব্যাংকের সঙ্গে থেকে দীর্ঘদিন ল্যাস নিতে নিতে অনেক বিনিয়োগকারীই খুব অভিজ্ঞ হয়ে ওঠেন। সাবধানে এগিয়ে যেতে পারলে, বিশেষত লোভে পড়ে বেশি ঝুঁকি না নিয়ে ফেললে, সাধারণ বিনিয়োগকারীও উপকৃত হবেন। বিস্তারিত জানতে আপনার ব্যাংকের ল্যাস ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন। তবে এখনকার চালু ইন্টারেস্ট রেটগুলি কেমন, এই দরকারি ব্যপারটি নিয়ে একটু পড়াশোনা করে নিন। আখেরে তাতে আপনারই লাভ হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.