নাম মাইক্রো। কিন্তু তা বলে সম্ভাবনায় একে নগণ্য ভাবলে ভুল করবেন। বিশেষজ্ঞরাই আশ্বস্ত করে বলছেন এ কথা। কেন? উত্তর খুঁজলেন নীলাঞ্জন দে।
তিনটি তথ্য দিয়ে আলোচনা শুরু করি। বিষয়গুলি জানা, কিন্তু ঝালিয়ে নিলে সুবিধা হবে।
১. Nifty Microcap 250 Index-এর ৫০ সপ্তাহের লো এবং হাই ছিল যথাক্রমে 8,567.20 পয়েন্টস এবং 16,656.05 পয়েন্টস। তাই এই দুই স্তরের তফাতের রেঞ্জ বোঝা খুব সহজ।
২. মাইক্রো ক্যাপ স্টকের প্রতি আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে, গত কয়েক মাসের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে কিনতে এগিয়ে এসেছেন বহু ইনভেস্টর। নতুন-পুরনো মিলিয়ে এঁদের উপস্থিতি বেশ চোখে পড়ার মতো।
৩. সেক্টরের কোনও নির্দিষ্ট বাছবিচার বা বিধিনিষেধ নেই। মাইক্রো ক্যাপ যে কোন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই উপস্থিতি থাকতে পারে। ইনভেস্টররা এগুলি থেকেই বেছে নিতে পারছেন তাঁদের মতামত অনুযায়ী ভালো স্টকগুলি।
মাইক্রো ক্যাপে ইদানীং অনেক ইনভেস্টর নিজের অ্যালোকেশন বাড়িয়েছেন। সাধারণত ধরে নেওয়া হয় যে মার্কেট ক্যাপ র্যাঙ্কিংয়ের প্রথম ৫০০-৬০০ স্টক ছেড়ে দেওয়ার পর যেগুলি থাকে, সেগুলিই মাইক্রো ক্যাপ হিসাবে গণ্য হতে পারে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে মার্কেট ক্যাপ এই সমস্ত স্টকের ক্ষেত্রে ৫০০০ কোটি টাকার কমই হয়ে থাকে।
এই প্রসঙ্গে কয়েকটি জরুরি কথা বলা যেতে পারে। এক, অনেক ছোট সংস্থাও বেশ লাভবান হয়েছে, সম্প্রতি ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতেও পেরেছে এগুলি। দুই, প্রফিট বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শেয়ার বাজারে স্টকের দামও উঠেছে। ভ্যালুয়েশনের বৃদ্ধি হওয়ায় বেশ লাভের মুখ দেখতে পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। তিন, ব্রোকারদের মতে এইসব কোম্পানির এক বড় অংশ আগামিদিনেও এমন ধারাটি ধরে রাখতে পারবে। প্রফিট বাড়বে, স্টকের দামও ঊর্ধ্বমুখী হবে। বিনিয়োগকারীদের সুবিধা হবে, ভালোভাবে ডাইভারসিফাই করতে পারবেন তাঁরা। এই প্রসঙ্গে জেনে রাখা ভালো:
১. মাইক্রো ক্যাপ স্টক মানেই কম দামের স্টক নয় কিন্তু। পেনি স্টকের (Penny Stock) সঙ্গে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। তার মানে স্বল্প দামের শেয়ার হওয়ার অর্থ মার্কেট ক্যাপ কম হওয়া নয়।
২. প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইনভেস্টরকে একগুচ্ছ শর্ত বুঝে নিতে হবে তবেই তাঁর সিদ্ধান্ত সঠিক হতে পারে। যেমন মাইক্রো ক্যাপের তালিকায় চিহ্নিত করা কোম্পানি যেন ভালোভাবে পরিচালিত হয়, সেখানে গর্ভনেন্স যেন উচ্চমানের হয়, বাজার যেন যথেষ্টভাবে বিস্তৃত হয়ে থাকে, টার্নওভার বাড়ার সুযোগ যেন থাকে ইত্যাদি।
৩. প্রফিট মার্জিন যদি না বাড়ে তাহলে স্টকের দামের উপর তার প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যাবে।
ঝুঁকি নিয়ে বাড়তি সতর্কতা:
হ্যাঁ, মাইক্রো ক্যাপে সত্যিই খুব রিস্কি বলে চিহ্নিত। তার মানে এখানে অনিশ্চয়তা বেশ উঁচু রকমের হতে পারে, তাই মাইক্রো ক্যাপে বিনিয়োগ করার সময় বাড়তি ঝুঁকিকে মান্যতা দিতে হবে বলে ইনভেস্টররা মনে করেন। পেশাদার ফান্ড ম্যানেজাররা তাই ভাবেন, এবং পোর্টফোলিওতে মাইক্রো ক্যাপের উপস্থিতি থাকলে সতর্ক থাকতে উপদেশ দেন। তবে খেয়াল করলে বোঝা যাবে বহু ক্ষেত্রে মাইক্রো ক্যাপেই বড়সড় রিটার্ন পেয়েছেন অনেকে। টাইটান ইন্ডাস্ট্রিজের কথা এই প্রসঙ্গে জানানো হয়। স্বর্গত রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা, যিনি লগ্নির জগতে বিখ্যাত ছিলেন। টাইটানকে চিহ্নিত করেছিলেন যখন স্টকটির দাম খুব অল্প ছিল। তারপর তো সেটির বিপুল সম্ভাবনার সুযোগ পেয়েছেন টাইটনের সাধারণ ইনভেস্টররাও।
অতএব স্টকের ফান্ডামেন্টালস দেখে নেওয়ার কথা বারবার বলেন পেশাদাররা। যাঁরা সরাসরি লগ্নি করতে চান না, তাঁরা মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে পারেন। উদাহরণ হিসাবে Motilal Oswal Nifty Microcap 250 Index Fund-এর কথা বলা চলে। সঙ্গের চার্টে চোখ রাখুন।
১. প্যাসিভ ফান্ড, ইনডেক্স অনুসরণ করে যথাযথভাবে।
২. ২৫০টি স্টক আছে এখানে। সংখ্যাটি কম নয়।
৩. মাইক্রো ক্যাপে লিকুইডিটিজনিত সমস্যা দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রে। তাই এই ফান্ডের জন্য প্রচুর অ্যালোকেশন সব সময়ই ভাল ফল নাও আনতে পারে। ইনভেস্টররা তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খুব সীমিত রাখেন নিজেদের এক্সপোজার।
কীভাবে লগ্নি করা উচিত?
সব পরামর্শদাতারাই বলছেন বুঝেশুনে লগ্নি করতে। একসঙ্গে অথবা একত্রে বড় মাপের বিনিয়োগ করে অসুবিধায় পড়ার সম্ভাবনা আছে বলে তাঁদের সতর্ক-বার্তা। সিপ করার উপকারিতা নিয়েও তাঁরা বলছেন। আস্তে আস্তে বড় তহবিল গঠন করার স্বপক্ষে যুক্তি দিচ্ছেন অনেকেই। নিজের পোর্টফোলিওর ১৫-২০% মাইক্রো ক্যাপে থাকতে পারে পরিস্থিতি যদি সহায়ক থাকে। তার উপরে অবশ্য যেতেই পারে, তবে সক্রিয়ভাবে লগ্নি করার সঙ্গে সঙ্গে স্টপ লস (Stop Loss) ও অন্য সতর্কতা মেনে চলতে হবে।
ইনভেস্টরদের একাংশ বলছেন সম্প্রতি প্রস্তাবিত বন্ধন মাইক্রো ক্যাপ ফান্ডের কথা, যেটির উদ্দেশ্য লং-টার্ম ক্যাপিটাল অ্যাপ্রেসিয়েশন।
১. ন্যূনতম ৮০% অ্যালোকেশন করা হবে এই শ্রেণির স্টকে। তবে ফান্ড ম্যানেজার (প্রয়োজন মনে করলে) অন্য মার্কেটে ক্যাপ-যুক্ত শেয়ারও কিনতে পারেন। শর্তসাপেক্ষভাবে।
২. স্ট্যান্ডার্ড রিস্ক ফ্যাক্টর (Standard Risk Factors) তো থাকবেই যেমন সব ক্ষেত্রেই থাকে। তবে ঝুঁকির কথা বিশেষভাবে খেয়াল রেখে স্কিম-স্পেসিফিক রিস্ক ফ্যাক্টর (Scheme Specific Risk Factors) ভালোভাবে পড়ে নেওয়া দরকার হবে।
৩. Nifty Microcap 250 এখানে বেঞ্চমার্ক হিসাবে ব্যবহার হবে।
৪. অ্যাসেট অ্যালেকেশন কেমন হতে পারে, তা জানতে চার্ট দেখুন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.