বাজার কাঁপানো খবরটা এতদিনে জেনে ফেলেছেন নিশ্চয়ই! মিশে যাবে এইচডিএফসি এবং এইচডিএফসি ব্যাংক। গোড়া থেকেই এই সংযুক্তিকরণের গুণগান গাইছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশনের নিরিখে HDFC Bank-এর স্টক (Merged Entity) থাকবে প্রথম পাঁচের মধ্যেই। বিশ্লেষণে নীলাঞ্জন দে
স্টক মার্কেটে শোরগোল ফেলা HDFC এবং HDFC Bank-এর ‘মার্জার’ তথা সংযুক্তিকরণের খবর নিশ্চয়ই এতদিনে সকলেরই জানা। ট্রেডাররা তাঁদের কৌশলও ঠিক করে ফেলেছেন। HDFC এবং HDFC Bank-এর সম্মিলিত শক্তিতে ব্যাংকিং এবং ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টর যে সমৃদ্ধশালী হবে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই! যদিও শেয়ার বাজারের এই সেক্টরে ‘শর্ট টার্ম ভোলাটিলিটি’ হওয়ার ব্যাপারেও অনেকে নিশ্চিত। প্রথমদিনের উত্তাল ভাবনাকে পিছিয়ে ফেলে স্টক দুটি যে কিঞ্চিৎ স্থিতাবস্থায় পৌঁছেছে, তা এখন বোঝা যাচ্ছে। ব্রোকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য। লগ্নিকারীরা এগুলির ভিত্তিতে নিজেদের স্ট্র্যাটেজি তৈরি করতে পারবেন।
কেন কিনবেন HDFC Bank-এর শেয়ার?
দেখুন একটি অতি-বৃহৎ প্রতিষ্ঠান (Institution) গঠিত হবে এই মার্জার-এর পর। সেটি অবশ্যই বাজারে অগ্রণী ভূমিকা নিতে পারবে। মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশনের নিরিখে প্রথম পাঁচটি স্টকের মধ্যেই থাকবে। আর ব্যালেন্সশিটের সাইজ যে বিশাল হবে, তাতেও কোনও সন্দেহ নেই। সব মিলিয়ে তা খুব ভাল করে বাজার ধরতে পারবে। নিজস্ব পরিধি বাড়িয়েও তুলতে পারবে ‘মার্জড’ সংস্থাটি। উল্লেখ্য, মার্জারের পর HDFC Bank সম্পূর্ণভাবে ‘পাবলিক শেয়ারহোল্ডার’দের মালিকানায় চলে যাবে। HDFC-র এখনকার শেয়ারহোল্ডাররা তখন ব্যাংকের ৪১% হোল্ড করতে পারবেন। তাঁদের ভবিষ্যত বেশ ভালই। কারণ সম্পদ গঠন ও বৃদ্ধির সম্ভাবনা প্রবলতর হবে আগামিদিনে, ব্রোকাররা এমনটাই বিশ্বাস করেন।
কিছু জরুরি পরিসংখ্যান :
l একটি হিসাব অনুযায়ী, মার্কেট ক্যাপ হবে ১৩ লক্ষ কোটি টাকার বেশি।
l মোট লোন বুক : আনুমানিক ১৮ লক্ষ কোটি টাকা
l HDFC-র প্রায় ৭০% গ্রাহকরা কিন্তু HDFC Bank-এরও ক্লায়েন্ট নন।
l HDFC Bank-এর প্রায় এএশি ভাগ গ্রাহকের কোনও হোম মর্টগেজ জনিত লোন নেই।
শুকনো পরিসংখ্যানের বাইরে যে কথাটি বারবার আজ উচ্চারিত হচ্ছে তা HDFC Bank-এর ক্ষমতায়ন সম্বন্ধীয়। কোনও সন্দেহ নেই যে ব্যাংকিং ক্ষেত্রে ‘ডিসরাপশন’ আনতে চলেছে এই সংস্থা। এক ধাক্কায় ব্যাংকটি তিনটি সহযোগী সংস্থার বড় শেয়ারহোল্ডারও হয়ে যাবে। এই তিন সংস্থাই তাদের নিজস্ব ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে – এরই সঙ্গে ব্রোকাররা জানাচ্ছেন যে HDFC-র হোম লোনের পুরোটাই ব্যাংকের দায়িত্ব হবে আগামিদিনে। মোট পোর্টফোলিওর প্রায় এক-তৃতীয়াংশই হোম লোনের খাতে থাকবে (যা এখন কেবল ১১%)। এই প্রসঙ্গে কয়েকটি সতর্কবার্তাও দিচ্ছেন ব্রোকিং সংস্থাগুলির একাংশ।
এক, শর্ট টার্মে যে অনিশ্চয়তা থাকবে, তা কেবল অনুমান মাত্র নয়-এবং ভোলাটিলিটির জন্য যেন লগ্নিকারীরা সবসময় প্রস্তুত থাকেন। বিশেষ করে, সামনের কিছু মাসে।
দুই, ব্যাংকের বই-এর মধ্যে HDFC-র রিটেল লোন ছাড়াও রিয়েল এস্টেট ডেভলপারদের দেওয়া লোনও ঢুকবে। এর জন্য কর্তৃপক্ষকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
ব্রোকারদের মতে আগামীতে গৃহ লোনের ব্যবসাই প্রধান ‘গ্রোথ ড্রাইভার’ তথা বিকাশের চালিকাশক্তিগুলির অন্যতম হবে। এই সন্ধিক্ষণে হোম-লোনের বৃদ্ধি বেশ চোখে পড়ার মতো – বেশ কিছু কারণে দেশে এখন মর্টগেজ ঋণ ক্ষেত্রটি-মাপে বহরে বাড়বে। গত এক বছরের হিসাব মতো সর্বাধিক রিটেল ব্যবসা করতে সক্ষম হয়েছে HDFC। এই ট্রেন্ড যে কমে আসবে তার কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না বলেই বাজারের অনেকে মনে করেন। গত বৃহস্পতিবারের ট্রেডিং প্যাটার্ন যদি দেখা যায় তাহলে এই তালিকাভুক্ত সংখ্যাগুলি চোখে পড়বে। সমস্ত তথ্য ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে নেওয়া।
(লেখক লগ্নি পরামর্শদাতা)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.