পরিকল্পনা যত আগে থেকে হয়, ততই ভাল। কারণ সেক্ষেত্রে যে যে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, তা পর্যালোচনা করে সম্ভাব্য সমাধানসূত্র প্রস্তুত করে রাখা যায়। শেষ মুহূর্তে ছক কষতে বসলে, অনেক সময়ই তা পরিণতি পায় না। ব্যর্থ হয়। তাই আর্থিক পরিকল্পনা যদি হয় উদ্দেশ্য, তাহলে তা শুরু করেন আগে থেকে। পর্যাপ্ত সময় দিলে ফলও হবে ভাল। পরামর্শে দেবাশীষ দীর্ঘাঙ্গি
লংজিভিটি রিস্ক-দীর্ঘ দিন ধরে বেঁচে থাকার ফলে যে অসুবিধাগুলিতে পড়তে হয়, তা নিয়ে সম্যক ধারণার অভাব দেখতে পাই চারদিকে। স্বাস্থ্য নিয়ে বলছি না, আমার বক্তব্য মূলত আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে। বা, বলা চলে, স্বাচ্ছন্দ্যের অভাব হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে। বৃদ্ধ বয়সের জন্য প্রস্তুত থাকতে সবাই পারেন না, নানা কারণে লংজিভিটি রিস্ক তাঁদের উপর জাঁকিয়ে বসে।
এ দেশের বেশিরভাগ নাগরিকের জন্য প্রাচীন ট্র্যাডিশন আজও গ্রহণযোগ্য। আমরা মনে করি আমাদের সন্তান-সন্ততিই বয়সকালে আমাদের দেখভাল করবে। পরিবারের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ি অনেকেই। বৃদ্ধ বয়সে যে রেগুলার ইনকাম প্রয়োজন হয়, তার বন্দোবস্ত আগে থেকে করি না। কবে থেকে এই ব্যাপারে আর্থিক পরিকল্পনা করলে ভাল হয়, তা নিয়েও সঠিক চিন্তা করি না। মৃত্যু তো অনিবার্য বটেই, তবে একইভাবে অনিবার্য হল রিটায়ারমেন্ট। অবসর জীবন আসবেই। কিন্তু এ কথা ভুললে চলবে না কারওরই। প্রসঙ্গটা আরও বড় আকার নিয়ে নেয় এ যুগের ইনফ্লেশনের দৌলতে। দাম বাড়া নিয়ে দুঃশ্চিন্তা কম নেই, জীবনযাত্রার মান ঠিক রাখা বেশ মুশকিল কারণ খরচ ক্রমাগত বাড়ছে। নগরায়ণ, যৌথ পরিবারে ভাঙন, জীবনশৈলীতে পরিবর্তন-সবই দ্রুত হয়ে চলেছে আমাদের চারপাশে। ‘লাইফ এক্সপেক্টেন্সি’ একইসঙ্গে যে বাড়ছে, তা তো বলাই বাহুল্য। কিন্তু সামাজিক সুরক্ষা কি উন্নততর হচ্ছে? না। সেই জন্য এক শ্রেণীর মানুষ প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছেই নিজেদের অসহায় ভাবছেন এবং পরের প্রজন্মের কাছে এঁরাই নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন।
আমরা, যাঁরা আর্থিক পরিকল্পনা করায় সাহায্য করি, সেই জন্য বার বার বলি, তাড়াতাড়ি শুরু করতে। যথাসম্ভব আগে থেকে প্ল্যান করুন। কেরিয়ারের গোড়া থেকে ভাবুন, তাতে পরে অসুবিধার হাত থকে বাঁচতে পারবেন। এরই মধ্যে দিন যত এগিয়ে যাবে, আপনাকে নানা প্রয়োজনের কথা ভাবতে হবে। পরিকল্পনা জারি রাখতে হবে যাতে উচ্চশিক্ষা, বিয়ে, নিজের বাড়ি অথবা এমার্জেন্সি ফান্ড-এই সবই যাতে আয়ত্তের মধ্যে চলে আসে। মনে রাখুন, আরও এক জরুরি কথা। হ্যাঁ, জীবন বিমার কথা বলছি। বিশেষ করে আজকের দিনে ডেফার্ড অ্যানুইটি প্ল্যানের কথা ভুলবেন না। অথবা ক্রিটিক্যাল ইলনেস রাইডারের কথাও যেন মনে থাকে।
মোট কথা, রিটায়ারমেন্ট প্ল্যানিংয়ের জন্য কোনও বিশেষ ‘ইভেন্ট’ বা ‘ট্রিগার’ থাকতে হবে না। এখনই প্ল্যান শুরু করা যায়, কোনও বড় মাপের ঘটনার জন্য অপেক্ষা করার দরকার নেই। সম্প্রতি এক সমীক্ষার ফল পড়লাম, দেখতে পেলাম বিরাট সংখ্যক মানুষ আজ ‘ডিপেন্ড্যান্ট’-মানে পরিবারের উপর নির্ভর করেন যখন অবসর নেন। এমন হওয়া কাম্য নয়। তাই বারে বারেই আমরা সিস্টেম্যাটিক পদ্ধতি মেনে লগ্নির কথা স্মরণ করিয়ে দিই। যদি ধারাবাহিকভাবে তা আপনি করতে পারেন, তাহলে লাভবান হবেনই, এ কথা জোর গলায় বলা যায়। রিটায়ারমেন্ট কর্পাস গঠন করার প্রয়োজনীয়তা অপেক্ষাকৃত অল্প বয়স থেকে বুঝতে হয়, এবং অন্যদের শেখাতেও হয়। সিপ করার উপযোগিতা নিয়ে নতুন করে আর কী বলব! হাতে-কলমে করে দেখুন, উপকৃত হবেন। আন্দাজ ২৫ বছর বয়স থেকে সিপ করছেন অবসরের আগে পর্যন্ত, এমন মানুষই আমাদের কাছে ‘রোল মডেল’ হতে পারে। নিজের সামাজিক বৃত্তের মাঝে নিশ্চয় এমন লগ্নিকারী খঁুজে পাবেন। তঁার সঙ্গে কথা বলে দেখুন, উৎসাহ পাবেন আপনিও। সব সময় মনে রাখবেন, আপনার দরকার ভাল এবং পেশাদার পরামর্শদাতা। তিনিই শেষ পর্যন্ত আপনাকে সাহায্য করবেন। সঠিক প্রোডাক্ট বেছে নিতে পারবেন তাঁরই পরামর্শে।
(লেখক বিনিয়োগ উপদেষ্টা)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.