আয়-বাবদ মেলা অর্থ হোক বা বয়সকালে মেলা পেনশনের টাকা, সর্বোচ্চ উপযোগিতা তখনই মেলে যখন খরচে রাশ টানা যায়। কিন্তু তা কীভাবে? যত দিন যাচ্ছে, পারিপার্শ্বিক নানা কারণে চড়ছে খরচাপাতিও। এই পরিস্থিতিতে কোন বিনিয়োগ-পদ্ধতিতে মিলতে পারে এই সমস্যার সমাধান? জানালেন সৌমিক সাহা
কেমন আছেন দেশের সিনিয়র সিটিজেনরা? তাঁদের বেশিরভাগের সার্বিক ছবিটা কেমন? সম্ভবত, খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। দেশের প্রবীণ নাগরিকরা সামগ্রিকভাবে নানা কারণে মুশকিলেই আছেন। আজীবন টাকা জমিয়েও পরিণত বয়সে তেমন একটা সুবিধাজনক পরিস্থিতি অনেকেরই নেই।
বিশদে বলার আগে আমার পরিচিত এক প্রবীণ মানুষের উদাহরণ দিই। ২০০৭-০৮ সালে পোস্ট অফিসে টাকা রেখে MIS-এর মাধ্যমে মাসিক খরচাপাতি চালাতেন, সে সময় দশ লক্ষ টাকার লগ্নি থেকে আনুমানিক ৭,০০০ টাকা মাসে পেতেন। তাতে তাঁর খরচের একটা বড় অংশ মেটানো যেত। ২০১১ সালে রিনিউয়াল করলেন, তখনও তেমন অসুবিধা হয়নি। তবে গণ্ডগোলটা শুরু হল আনুমানিক ২০১৫-১৬ সাল থেকে। মান্থলি ইনকাম বাড়ল না, কিন্তু মাসের খরচাপাতি প্রায় দেড়গুণ বৃদ্ধি পেল। আজ সেই মানুষটির ৭,০০০ টাকার খরচ বেড়ে হয়েছে ১৮,০০০ টাকার কাছাকাছি। ওঁর ভয়, ভবিষ্যতে এই খরচ তো আরও বাড়বে, শেষ পর্যন্ত ওঁকে নির্ভর করতে হবে নিজের ছেলেমেয়েদের উপর। ভাববেন না এই দৃষ্টান্ত কেবলমাত্র একটা টুকরো ছবি। অগণিত সিনিয়র সিটিজেনের এটাই পরিস্থিতি, বিশেষ করে ষাঁরা কেবল ব্যাংক ডিপোজিট বা পোস্ট অফিসের আমানতের উপর ভরসা রেখেছেন। এবার তাঁদের জন্যই কলম ধরেছি, সুরাহা কীভাবে পাওয়া যায়, সেই পন্থা আলোচনা করছি।
সোজাসুজি বললে, মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগ এবং আনুসঙ্গিক স্ট্র্যাটেজির কথা ধরুন। হাইব্রিড ফান্ড, অর্থাৎ যেখানে ইকুইটি এবং ডেট, এই দুই অ্যাসেটই আছে, সঙ্গে গোল্ডও থাকতে পারে, বেছে নিন। এককালীন বিনিয়োগ করুন এবং নিজের প্রয়োজন বুঝে সিস্টেম্যাটিক উইথড্রয়াল প্ল্যান (SWP) শুরু করুন। মনে রাখবেন, কেবল হাইব্রিড ফান্ডই আপনার নজরে থাকবে তা নয়, ঝুঁকি নিতে আপত্তি না থাকলে ইকুইটি ফান্ডও বেছে নিতে পারেন। হাইব্রিড বললাম, কারণ একাধিক অ্যাসেট ক্লাসের সমন্বয় থাকে এই জাতীয় ফান্ডে, এবং ‘ডাউনসাইড রিস্ক’-এর পরিপ্রেক্ষিতে, এমন ফান্ড অনেক ক্ষেত্রে বেশ কার্যকরি হতে পারে।
অবশ্য, কোন ফান্ড নির্বাচন করবেন, তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। বলা বাহুল্য, মিউচুয়াল ফান্ডের দুনিয়ায় আজ নানা ধরনের প্রোডাক্ট পাওয়া যাচ্ছে, কাজেই বৈচিত্র্যের অভাব হবে না। এই প্রসঙ্গে বলে রাখি, ডাইভারসিফিকেশনের প্রয়োজনীয়তা কিন্তু ভুলবেন না। নিজের টাকা একাধিক জায়গায় ছড়িয়ে রাখুন, অবশ্যই ভাল পরামর্শদাতার সাহায্য নিন এর জন্য।
ফিরে আসি SWP-র কথায়। খেয়াল করে দেখবেন, নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সিতে টাকা পেতে পারবেন এর মাধ্যমে। হয়তো প্রতি কোয়ার্টারে আপনি হাতে টাকা পেতে চান, সংসার চালানোর খরচ তুলতে চান। তা খুব ভাল করেই সম্ভব, কাজেই SWP-কে নিজের অন্যতম বড় কৌশল হিসাবে দেখুন। এখানে মনে রাখুন, বাজারের নিয়ম অনুযায়ী কিন্তু আপনার ইউনিটের ভ্যালুয়েশন বদলাবে। ভাল মার্কেটে অবশ্যই আপনি সম্পদ গঠন করতে পারবেন, আপনার পরিশ্রম সার্থক হবে, চেষ্টা বৃথা যাবে না। তাই মূলধন বৃদ্ধির সম্ভবনা দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারীর জন্য সুখবর। ভুলবেন না, মুদ্রাস্ফীতি কিন্তু লগ্নিকারীর সর্বকালের শত্রু। মূলধন যদি যথেষ্ট ভাল ভাবে না বাড়ে, তাহলে সমূহ বিপদ। সেইজন্য আপনাকে বাজারে থাকতে হবে, সামান্য দু’-পাঁচ বছরের কথা বলছি না। যদি বিগত ১০-১৫ বছরের উদাহরণ দিই, তাহলে দেখবেন ভাল ‘পারফর্ম’ করা হাইব্রিড ফান্ড মূল্যবৃদ্ধির অভিঘাত কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছে, SWP চলা সত্ত্বেও। তাই লং টার্মের সুবিধার উপর জোর দিন, তাতেই কৌশলী বিনিয়োগকারীর মঙ্গল।
কেমন হতে পারে রিটার্ন? মাঝে মাঝেই এই প্রশ্নের সম্মুখীন হই। প্রতিবারই বলি- না আগে থেকে সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়, সমীচিনও হবে না। তবে এ কথা জোর গলায় বলা যায় যে, ধৈর্য্যশীল লগ্নিকারী আশাহত হবেন না। নির্দ্বিধায় SWP করুন, তার সুফল হাতে হাতেই পাবেন।
(লেখক বৃশাঙ্ক ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেসের সঙ্গে যুক্ত)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.