প্রতীকী ছবি
স্বনির্ভরতা আশীর্বাদ। সুসময়ে নয়, জীবনের কঠিন পর্যায়ে এর গুরুত্ব বোঝা যায়। বিশেষ করে মহিলাদের স্বাধীন বলা তখনই সমীচীন হবে, যখন তাঁরা স্বনির্ভর হবেন। যত দ্রুত সম্ভব, এই সারসত্য বুঝুন। নচেৎ দেশ স্বাধীন হলেও মেয়েরা পরাধীনই থেকে যাবেন। লিখছেন নিবেদিতা মার্কেটিং অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন প্রাইভেট লিমিটেডের ডিরেক্টর, দোলন চক্রবর্তী।
স্বাস্থ্যই সম্পদ। আর এই সম্পদ ভালো থাকে যখন মানুষ দুঃশ্চিন্তা-মুক্ত থাকে। মানুষের দুঃশ্চিন্তার অন্যতম কারণ অর্থ। অর্থ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে না আসে সফলতা, না কাটে দিন। আজ খাওয়ার পর কাল কী খাব? ছেলে বা মেয়ের উচ্চশিক্ষার বন্দোবস্ত কী করে হবে? বা ঘরের মুমূর্ষু রোগীকে প্রাণে বাঁচাতে নার্সিং হোম বা হাসপাতালে কত খরচ পড়বে–এই সমস্ত সমস্যার সময় বোঝা যায় অর্থের প্রয়োজন কতটা। তখনই বোঝা যায়, অর্থের প্রকৃত মূল্য। অর্থমূল্য অর্থ দিয়ে নির্ধারণ করা যায় না। বিপদের দিনে বা সমাজে মাথা উঁচু করে সসম্মানে বাঁচতে গেলে অর্থের উপযুক্ত মূল্যায়ন হয়।
অর্থকে শুধুমাত্র উপার্জন করলেই হবে না অথবা উপর্জিত অর্থ দিয়ে দামী দামী জিনিসপত্র ক্রয় করে বিলাসবহুল জীবনযাপন করলেই হবে না। ভবিষ্যতের অর্থাৎ যখন উপার্জনের যোগ্যতা থাকবে না, তখনও সুন্দর ও সুনিশ্চিতভাবে জীবনযাপনের জন্য সঞ্চয় করতে হবে। সেক্ষেত্রে ওয়ারেন বুফেটের একটি কথা স্মরণীয়– “Don’t save the money that is left after spending. Rather only spend the money that remains after saving.” বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থায় সংসারে শুধু পুরুষ মানুষই উপার্জনকারী হলে চলবে না, স্ত্রী-পুরুষ উভয়কেই উপার্জনের সক্ষম হতে হবে। প্রায় ২০০ বছর আগে শ্রী শ্রী সারদা মা নারী শিক্ষা ও তাদের আর্থিক স্বনির্ভরতার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন – “There is no chance of welfare of the world unless the condition of women is improved. It is not possible for a bird to fly on one wing.”
আজ মেয়েরা দুর্বল নয়, সমস্ত ধরনের কাজে মহাকাশ থেকে সমুদ্রতল পর্যন্ত, কুটির শিল্প, কৃষি কাজ, নির্মাণ শিল্প–সর্বক্ষেত্রে পারদর্শিতার সঙ্গে পুরুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, সমস্ত উন্নত দেশের মতো আমাদের দেশের মেয়েরাও আর্থিক স্বাধীনতার পথে অগ্রগামী। আজ আর আগের মতো বাজার ফেরত পয়সা, রান্নাঘরের মশলার কৌটো বা আলমারির কাপড়ের তলায় লুকিয়ে ভবিষ্যতের রাখতে হয় না। তাঁরা নিজেদের উপার্জনের অর্থ স্বাধীনভাবে বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে পারেন।
তবু উন্নয়নশীল ভারতবর্ষে স্বাধীনতার ৭৬ বছর পরেও মহিলারা ‘সঞ্চয়’ বিষয়ে অসচেতন। তাঁরা তাঁদের উপার্জনের সবটাই সংসারে ব্যয় করে ফেলেন, এবং শেষ জীবনে আর্থিক দুর্দশার সম্মুখীন হন। বর্তমানে বিভিন্ন আর্থিক সঞ্চয় প্রকল্পে খুব অল্প বিনিয়োগের মাধ্যমে সেভিংস করা যায় নিয়মিতভাবে। যেমন- মিউচুয়াল ফান্ডের সিপ-এর (Systematic Investment Plan) মাধ্যমে ভবিষ্যতের স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন তাঁরা। তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে– “Success doesn’t come because of what you do occasionally. It comes from what you do consistantly.” অর্থাৎ ধারাবাহিকভাবে সাধ্যমতো অর্থ সঞ্চয়ের মাধ্যমেই একদিন মেয়েরাও সাধ-পূরণের যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে। আর তখনই আসবে মেয়েদের স্বয়ং সম্পূর্ণতা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.