প্রতীকী ছবি
বয়স অল্প। কিন্তু তাতে কী? আজকের অঙ্কুরই তো আগামীর মহীরুহ, নয় কি? তাই দেরি না করে, ছোট্ট এই বয়সেই ভিত গড়ুন আপনার শিশুর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের। কীভাবে, কোন পথে এগোবেন, জানিয়ে দিলেন লগ্নি পরামর্শদাতা নীলাঞ্জন দে
বাচ্চাদের জন্য বিনিয়োগ করবেন কীভাবে? ‘সঞ্চয়’ এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে পৌঁছছে বিভিন্ন পেশাদারের দরজায়। নানা রকম আলোচনার ভিত্তিতেই আমাদের আজকের এই সংকলন। থিম ভিত্তিক ইস্যুতে
আছে :
(১) চিলড্রেন্স এডুকেশন প্ল্যানিং
(২) বাচ্চাদের জন্য বিশেষ চিলড্রেন্স ফান্ড
(৩) ইনভেস্টমেন্ট ক্যালকুলেটর
সকলেই চান ছোটদের ভবিষ্যত সুরক্ষিত করতে। আজকালকার নিয়মে হায়ার এডুকেশনের খরচা অনেক, তাই শিক্ষাখাতে লগ্নি সংক্রান্ত পরিকল্পনা যথাযথ হওয়া উচিত। নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আজকের এই লেখার প্রধান লক্ষ্য বাবা-মা বাড়ির বড়দের কাছে পৌঁছানো, যাতে প্ল্যানমাফিক সব করা সম্ভব হয়। প্রথমেই বলি দুটি বিশেষ কথা, যা ছাড়া ভাল প্ল্যান কার্যত অসম্ভব।
(১) বিমা – নির্দিষ্টভাবে বাচ্চাদের বিষয়টি মাথায় রেখে নানা ইনসিওরেন্স সংস্থার প্রকল্প খতিয়ে দেখার প্রয়োজন।
(২) মিউচুয়াল ফান্ড – দীর্ঘমেয়াদী ক্যাপিটাল গ্রোথ এনে বাচ্চাদের শিক্ষা-সংক্রান্ত খরচ সামলে নেওয়ার প্রসঙ্গটি বুঝতে হবে।
বাবা-মা যখন দুজনেই রোজগেরে হন, তখন ব্যাপারটি সহজ হয়ে যায়। যখন একজন অকালে, আচম্বিতে চলে যান–বহুবার দেখেছি সংসারের রোজগেরে মানুষটির অভাবে আর্থিক দুরবস্থা এড়ানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই একের উপার্জনের সংসারে টার্ম পলিসি খুব কাজে লাগতে পারে। একটু বড় করে ভাবা উচিত, কারণ ‘অ্যাক্টিভ ইনকাম আর্নার’ মারা গেলে তাঁর আয়ের স্রোত বন্ধ হওয়ায় রোজগারে ভাঁটা পড়ে। আমার মতে সব বাবা-মাকেই এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার। আমি তো মনে করি, টার্ম প্ল্যানের বিকল্প পাওয়া দুষ্কর। প্রতিটি সংসারেই একটা ভাল টার্ম কভারেজ যেন থাকে, তাতে ‘রিস্ক ম্যানেজমেন্ট’ যথাযথভাবে হতে পারবে।
এর পরের বিষয়টি ক্যাপিটাল গ্রোথের সঙ্গে সম্পর্কিত। বোঝাই যাচ্ছে আজকের দুনিয়ায় টাকাপয়সার যথাযথ অ্যাপ্রিসিয়েশন প্রয়োজন, কারণ ইনফ্লেশন-সহ অন্যান্য রিস্ক প্রচুর রয়েছে। তাই পরিকল্পিত পদ্ধতির ব্যবহার দরকার। বাচ্চার ভবিষ্যতের কথা ভেবে ওর জন্য সিপ করুন কয়েকটি ফান্ডে। এখানে আমি বলব না, ঠিক কতগুলো ফান্ড থাকলে তহবিল বাড়তে পারে, অথবা বলব না, মাসে কত টাকার সিপ করা দরকার হবে। তার বদলে অবশ্যই বলব ইক্যুইটি ভূমিকা সম্বন্ধে।
দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করার পক্ষে সহায়ক এই বিশেষ অ্যাসেট ক্লাসটি। সিপ করার বিষয়টি ভুলে গেলে চলবে না। বাচ্চার অল্প বয়সের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাবা-মা যদি সিস্টেম্যাটিক পন্থায় লগ্নি করেন, দশ-পনেরো-বিশ বছরের জন্য, তাহলে তার ফলাফল নিশ্চয়ই ইতিবাচক হবে, ধরে নিতে পারি। মুদ্রাস্ফীতির অভিঘাত নিয়ে আগেই বলেছি, সেটি আর অন্তরায় হিসাবে পথ আগলে দাঁড়াবে না দীর্ঘমেয়াদী সিপের ক্ষেত্রে।
এই প্রসঙ্গে ক্যালকুলেটরের ব্যবহার নিয়ে সংক্ষেপে জানাচ্ছি। লগ্নির গোড়াতেই এর ব্যবহারে বাবা-মা জেনে নিতে পারেন কয়েকটি দরকারি তথ্য। শিক্ষার জন্য তো বড় মাপের খরচাপাতি হতেই পারে, আজ যে কোর্স করতে বা কোয়ালিফিকেশন বাড়াতে দশ লক্ষ টাকা লাগে, আগামী দশ-পনেরো বছর বাদে তার বাবদ কত টাকা দরকার হবে, তার বিষয়ে নিশ্চয় একটা ধারণা করতে পারেন। বিদেশে (বা দেশেরই বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে বা বিশিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে) পড়ার জন্য তো বিরাট খরচ হতেই পারে, তাও ভুলে যাবেন না।
সবশেষে, কয়েকটি বিশেষ পরামর্শ দিতে চাই আপনাদের বাড়ির ছোটদের স্বার্থে।
১. স্কুল বা প্রাইমারি শিক্ষার জন্য যে ভাবে প্ল্যান করেন, সেই আগ্রহ বা উৎসাহ নিয়েই বাচ্চার জন্য ইনভেস্টমেন্টের বিষয়টি দেখবেন।
২. গোড়াতেই সিপ শুরু করুন, প্রয়োজন বুঝে সেগুলির পরিমাণ বাড়ান। টপ আপ করার আগে নিয়ম জেনে নিন উপদেষ্টার কাছে।
৩. যখন বিমার কথা ভাববেন টার্ম ছাড়াও অন্য বিশেষ প্রকল্প সম্বন্ধে জেনে নিন। উচ্চ শিক্ষার জন্য ধাপে ধাপে আপনার খরচ করতে হতে পারে। সাধারণত দেখি, তা ৪. ১৮ বছর বয়স থেকেই শুরু হয়ে যায়। তাই হাতে যথেষ্ট টাকা যাতে এসে যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
৫. বাচ্চাকে প্রথম থেকে লগ্নিমনস্ক করুন, মার্কেটে থাকতে গেলে রিস্ক নিতেই হবে, এই শিক্ষা দিন। রিটার্ন চাই, কিন্তু রিস্ক নেব না, এমন মানসিকতা লগ্নির বিপক্ষে কাজ করে।
৬. বাচ্চা যখন প্রাপ্তবয়স্ক হবে, তাকে টাকাপয়সা সংক্রান্ত দায়িত্ব নিতে হবে। অবশ্য একদিনেই তা হবে না, পর্যায়ক্রমে শিখে নেওয়া উচিত। আজকাল নানা রকম কোর্স করা যায় (যেখানে লগ্নি সম্বন্ধে জানানো হয়), সেগুলির প্রতি তার নজর আকর্ষণ করুন। ফল বৃথা হবে না, এমন আশা করাই যেতে পারে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.