বিপদ দোরগোড়ায় কড়া নাড়তে পারে যখন-তখন। রোগভোগই যেমন। ‘ক্রিটিক্যাল ইলনেস’-এর ক্ষেত্রে অনেক সময় কী করণীয়, বুঝে উঠতে উঠতেই মূল্যবান সময় পেরিয়ে যায়, ঘটে যায় মহা-বিপর্যয়। তাই আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। মানে স্বাস্থ্যবিমা। কোন পথে এগোবেন, জানালেন শঙ্খদীপ দাস
বেজায় গরম। ফ্রিজের ঠান্ডা জল-এ.সি, পরক্ষণেই আবার ঠাঠা রোদ্দুরে-কাজে অকাজে। তার উপর না কি করোনার থাবা এখনও যায় নি! এই সব রোদে-জলে-এসিতে-কাশিতে-পেটের ব্যামোতে- আইপিএলে-মোবাইলে আমাদের জীবনযাপনের ধারা ও ধারণা অনেকটাই কিন্তু পালটে গিয়েছে। এই পালটানো সময়ে যাপনের ধারা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মননে ও শরীরে বেশ কিছু ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ইতিবাচক দিকটা যদি আনন্দরস আহরণ হয়, নেতিবাচক দিকে তার প্রভাব শরীরকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। অথচ আমরা কলার উঁচিয়ে এই ক্ষতিটাকে মনে মনে বেশ প্রশ্রয় দিয়ে চলেছি। বেশ গালভরা একটা নামও দিয়েছি–‘Life Style Disease’!
সুগার, প্রেশার, কোলেস্টেরল এই রকম বেশ কিছু রোগ এই সম্প্রদায়ভুক্ত। এমনকি ক্যানসারও। এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। কিন্তু, একটা নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরী করে অন্তত অর্থনৈতিক দিকটা সুরক্ষিত করাই যায়! শুধু যায় না, এটা বিশেষভাবেই প্রয়োজন। ভাবছেন মেডিক্লেম তো করাই আছে। আবার নতুন কী চাই? হ্যাঁ, সেই ভাবাটাই স্বাভাবিক। মেডিক্লেম (Mediclaim) নিয়ে এখন আর কাউকে নতুন করে অবগত করতে হয় না। আপনি তো জানেনই, মেডিক্লেম হাসপাতালের খরচ, তৎ-সহ তার পূর্ববর্তী বা পরবর্তী নির্দিষ্ট কিছু দিনের খরচ বহন করে। কিন্তু বহু জটিল রোগ আছে যার হাসপাতালের বাইরের পর্যায়ক্রমিক খরচ অনেক বেশি, দীর্ঘস্থায়ী এবং ক্রমবর্ধমান। বহু অসুস্থতা বহু মানুষের কর্মক্ষমতা নষ্ট করে দেয়।
ধরা যাক, হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া ব্রেনস্ট্রোকের কারণে কোনও ব্যক্তি পক্ষঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়লেন। তাহলে তাঁর পেশাগত ক্ষতি কীভাবে পূরণ হবে? কীভাবেই বা পরিচালিত হবে পারিবারিক ব্যয়ভার? অথবা হঠাৎ করে ধরা পড়া ক্যানসারের মতো ক্রমবর্ধমান ব্যয়সাপেক্ষ অসুস্থতার মোকাবিলা কীভাবে সম্ভব? যদি কোনও আকস্মিক দুর্ঘটনার ফলে অঙ্গহানি হয় বা কর্মক্ষমতা লোপ পায়, তাহলে পরিবারকে কীভাবে আর্থিক ক্ষতি থেকে সুরক্ষা দেওয়া যায়? এই রকম বেশ কিছু প্রশ্ন সদাবিব্রত করে তুলছে আমাদের। স্বাস্থ্যবিমায় আমাদের সদা উদ্বেগের বিষয় হাসপাতালের খরচ কীভাবে মেটানো হবে! সাধারণত আমাদের চর্চায় এই বিষয়টাই প্রাধান্য পায়, কিন্তু উপরিউক্ত বিষয়গুলো তো ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক তাই না? আজ সেটাই হোক আমাদের আলোচ্য বিষয়।
‘ক্রিটিক্যাল ইলনেস’ শব্দবন্ধটি বেশ চেনা। কিন্তু হঠাৎ এমন নাম কেন? বেশ কিছু গুরুতর অসুখ বা আকস্মিক দুর্ঘটনা হঠাৎ করে আমাদের জীবনে প্রবেশ করে জীবনটাকেই এলোমেলো করে দেয়। বিপুল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় নিজেকে এবং পরিবারকে। তবে এই পরিস্থিতির আর্থিক ক্ষতিপূরণ কিন্তু বিমার মাধ্যমেই সম্ভব।
এই বিমা প্রকল্পের আসল দিক হল, বিমার আওতাধীন পরিস্থিতি তৈরি হলেই একলপ্তে বিমারাশি, বিমাকৃত ব্যক্তি বা তার পরিবারকে প্রদান করা। অসুস্থতার খরচ বা চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে কোনও প্রশ্ন তোলা হয় না। এর ফলে সহজেই ব্যক্তির পেশাগত ও পারিবারিক আর্থিক ক্ষতি বা ক্রমাগত চিকিৎসা খাতে ব্যয় বেশ খানিকটা লাঘব হয়। এই বিপুল আর্থিক প্রতিকূলতাকে রুখে দিতে এই প্রকল্পের গ্রহণযোগ্যতা আজ ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক।
যে সমস্ত ব্যক্তির পারিবারিক ইতিহাসে এই প্রকল্পতে নির্ধারিত অসুখগুলো আছে বা ছিল, অথবা যঁারা খুবই আধুনিক জীবন যাপন করেন বা অত্যন্ত চাপ সমৃদ্ধ পেশার সঙ্গে যুক্ত এবং সর্বোপরি পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি–তাঁদের অবশ্যই অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে এই বিমার পরিকল্পনা করা উচিত।
আরও একটি বিমা প্রকল্প এই ব্যস্ততম জীবনযাত্রায় খুবই প্রাসঙ্গিক হয়েও যথেষ্ট অবহেলিত। ‘Personal Accident Policy’। পূর্ব-উল্লিখিত বিমা প্রকল্প যেমন শারীরিক অসুস্থতার জন্য ঘটে যাওয়া নেতিবাচক পরিস্থিতিকে আগলে রাখে তেমনই এই প্রকল্পে আকস্মিক দুর্ঘটনায় ঘটে যাওয়া শারীরিক অক্ষমতা, আংশিক অঙ্গহানি বা মৃত্যুর মতো পরিস্থিতিতে আনুপাতিক হারে বিমাকৃত অর্থ একলপ্তে প্রদান করা হয়। যা ওই পরিবারকে আর্থিক দিক থেকে বেশ খানিকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে সাহায্য করে।
এখন প্রশ্ন হল, কীভাবে এই বিমা প্রকল্প উপলব্ধ?
বিশেষ করে ক্যানসারের মতো অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ চিকিৎসার জন্য সাধারণ বিমা বা জীবনবিমা সংস্থাগুলো আলাদা প্রকল্প চালু করেছে। এছাড়া নির্দিষ্ট কিছু ব্যয়বহুল চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য আকস্মিক দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতির মোকাবিলা করতে সাধারণ বিমা সংস্থাগুলি আলাদা আলাদা প্রকল্প হিসাবে গ্রাহকের সামনে তুলে ধরেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আলোচ্য আকস্মিক পরিস্থিতির বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভবপর হয়েছে। জীবনবিমা সংস্থাগুলো উক্ত প্রকল্পগুলো সাধারণ মেয়াদি বিমার সঙ্গে রাইডার হিসাবে গ্রহণযোগ্য করে দিয়েছে।
খেয়াল রাখতে হবে, এই প্রকল্পগুলো গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট সীমারেখা রয়েছে। বিমা সংস্থা বিমারাশির ঊর্দ্ধসীমা বেঁধে দেয় গ্রাহকের বার্ষিক আয়, বয়স এবং শারীরিক অবস্থানের উপর। ওপর প্রান্তে গ্রাহকও প্রিমিয়ামের পরিমাণ, হাসপাতালের নগদহীন চিকিৎসার সুবিধা এবং আওতাধীন অসুখের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে প্রকল্প চয়নের স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারবেন। তদুপরি কর-ছাড়েরও ব্যবস্থা থাকছে।
স্বাস্থ্যবিমার প্রকল্পগুলোর এই আনুপাতিক সহাবস্থান মানুষের জীবনের আকস্মিক ও অবাঞ্ছিত জরুরি অবস্থাকে অনেকটাই চিন্তামুক্ত করবে। প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত বিমা গ্রহণের মাধ্যমে সুস্থ থাকুন, ভাল থাকুন, আনন্দের সঙ্গে থাকুন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.