প্রতীকী ছবি
স্বাস্থ্যবিমার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নতুন করে আর জানানো অর্থহীন। তবে তথ্য বলছে, ভারতে স্বাস্থ্যবিমার প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েই চলেছে। এর একটি অন্যতম কারণ হিসাবে প্রিমিয়ামের হার বৃদ্ধিকে চিহ্নিত করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই নিয়ে বিস্তারিত জানালেন দেবাশিস নাথ
স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়াম বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে বিমা গ্রাহক প্রায় কোনও ক্ষেত্রেই চিকিৎসার খরচের পুরো টাকা পাচ্ছেন না। কেন এমনটা হচ্ছে!
এক দশক আগে বিত্তসম্পন্ন পরিবারেও কারও ব্যয়বহুল চিকিৎসার প্রয়োজন পড়লে পরিবারের সকলেই কিছুটা দিশেহারা বোধ করতেন। স্বাস্থ্যবিমার প্রচার ও প্রসারের ফলে বর্তমান সময়ে বিমাকৃত মানুষেরা সে রকম সঙ্কটকালীন সময়েও কিছুটা স্বস্তিতে থাকছেন। সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার বিপ্রতীপে বেসরকারী বড় হাসপাতালে রোগীর চাপ তুলনামূলক ভাবে কম হওয়ায় ও আভ্যন্তরীণ পরিবেশ যথেষ্টই অনুকূল হওয়ার ফলে বিমাকৃত মানুষেরা সেখানেই চিকিৎসার পরিষেবা নিতে পছন্দ করেন।
এই সব জায়গায় চিকিৎসা যথেষ্ট ব্যয়বহুল হলেও ভরসা স্বাস্থ্যবিমা। স্বাস্থ্যবিমার প্রতি মানুষের আগ্রহের মাত্রা প্রমানিত হয় যখন দেখা যায় ২০২৪-২৫ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যেই দেশে স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়ামের পরিমাণ ১ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। আগের বছর (২০২৩-২৪) এই সময় পর্যন্ত এই পরিমাণ ছিল ৯০,৭৮৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ বেড়েছে মোটামুটি ১০%। এর অর্থ এই যে স্বাস্থ্যবিমার প্রতি আগ্রহ ও নির্ভরতা ক্রমশ বাড়ছে। যদিও আরও আরও মানুষের স্বাস্থ্যবিমায় সংযোজনই এর একমাত্র কারণ নয়। এর আরেকটি কারণ হচ্ছে প্রিমিয়ামের হার
বেড়ে যাওয়া।
এত উচ্চহারে প্রিমিয়াম দিয়ে স্বাস্থ্যবিমা নেওয়ার পরেও কিন্তু বিমাগ্রাহক বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চিকিৎসার পুরো টাকা পান না। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের তথ্য অনুযায়ী ওই বছরে মোট যে পরিমাণ দাবি করা হয়েছিল, সরকারী বিমা কোম্পানীগুলি একত্রে তার ৮৭.৯৭% পূরণ করেছে। শুধুমাত্র স্বাস্থ্যবিমাকারী সংস্থাগুলি ৮৬.৯০% পূরণ করেছে এবং বেসরকারী সাধারণ বিমা কোম্পানীগুলি একত্রে পূরণ করেছে ৮১.৪৬%। অর্থাৎ সবকটি সংস্থা মিলে দাবি পূরণ করেছে ৮৫.৪৪%। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে যেখানে মোট ১ লক্ষ ১৭ হাজার কোটি টাকার দাবি জমা পড়েছিল সেখানে দাবি মেটানো হয়েছিল মোট ৮৩ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ এখানেও দাবি মেটানো হয়েছে মাত্র ৭১.২৯%।
তাহলে প্রশ্ন, এত বেশি হারে প্রিমিয়াম নেওয়া সত্বেও সম্পূর্ণ দাবি পূরণ হয় না কেন? কোথাও কি গ্রাহকদের সাথে অন্যায় করা হচ্ছে?
বিমাকৃত ব্যক্তির প্রাপ্য অঙ্কের চেয়ে দাবিপূরণ বেশ খানিকটা কম হওয়ার ফলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর কাছ থেকেই বাকি টাকা আদায় করেন। দেখা গিয়েছে, যে সব নন-মেডিক্যাল জিনিষপত্রের খরচ বিমা কোম্পানি বহন করে না, সে সব প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যবহার হয়েছে বা রোগীকে দেখতে আসার জন্য যেখানে ডাক্তারের ভিজিট একবারই বরাদ্দ সেখানে ডাক্তারের ভিজিট প্রতিদিনের হিসেবে বেশ কয়েকবার যোগ করা হয়েছে।
এসব কারণেই খরচের পুরো টাকা পাওয়া যায় না। অন্যদিকে একটি নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যবিমা পলিসিতে যেটুকু সুবিধা পাওয়ার কথা বিমাকৃত ব্যক্তি তার চেয়েও বেশি সুবিধা নিয়ে থাকলে ওই অতিরিক্ত খরচ পাওয়া যাবে না। যেমন বিমারাশি অনুযায়ী যদি কোনও শহরে বিমাকৃত ব্যক্তি প্রতিদিন সর্বাধিক ৫০০০ টাকা বেড-ভাড়ার যোগ্য হন, তবে তার বেশি বেড ভাড়ায় থাকলে ওই ভাড়ার অতিরিক্ত খরচটুকু পাওয়া যাবে না। যদি বিমা নেওয়ার সময় কোনও অসুখ থেকে থাকে এবং তা গোপন করা হয়, তাহলে ওই অসুখের সাথে যুক্ত কোনও অসুখের ক্ষেত্রেই বিমার টাকা পাওয়া যাবে না। এই সমস্ত দিকগুলোতে নজর রেখে স্বাস্থ্যবিমা নিলে আর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার পর নিয়মানুযায়ী দাবি করলে হয়তো বিমা থাকা সত্ত্বেও খেসারত এড়ানো সম্ভব। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কোনও অন্যায্য খরচ করাচ্ছে কি না, তার প্রতিও সজাগ থাকা প্রয়োজন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.