Advertisement
Advertisement

Breaking News

Personal Finance

সোজা ব্যাটে খেলেই ছক্কা! বাজেটে আমজনতার প্রাপ্তির ঝুলি কতটা পূর্ণ হল?

গত ১ ফেব্রুয়ারি, আমজনতার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক বাজেট।

Here is about union budget 2025
Published by: Suchinta Pal Chowdhury
  • Posted:February 17, 2025 2:17 pm
  • Updated:February 17, 2025 2:17 pm  

বাজেট নিয়ে ব‌্যাখ‌্যা-চর্চা-বিশ্লেষণের শেষ নেই। কিন্তু ভালো-মন্দের দ্বন্দ্বটুকু বাদ দিয়ে শুধু যদি কেউ জানতে চান, পঁচিশের বাজেট থেকে এ দেশের নাগরিক কী কী পেল–তবে সেই উত্তরও কিন্তু রয়েছে সদর্থকভাবেই। আগ্রহী পাঠকদের জন‌্য তারই নির্যাস তুলে ধরলেন মিউচুয়াল ফান্ড ডিসট্রিবিউটার পার্থপ্রতীম চট্টোপাধ‌্যায়

গত ১ ফেব্রুয়ারি, আমজনতার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক বাজেট। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন পেশ করলেন আরও একটি হিসাব-নিকাশের সম্ভাব‌্য খতিয়ান। রাজনৈতিক মহল থেকে অর্থনৈতিক, খেলার মাঠ থেকে রান্নাঘর–কান পাতলে শোনা যায় একটাই প্রশ্ন। কেমন হয়েছে এবারের আর্থিক বাজেট? বিভিন্ন মহলের বিভিন্ন মতামত, কেউ বলছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর বাজেট এবারে লেটার মার্কস পেয়ে পাস করেছে, আবার কারোর কাছে পাশ নাম্বারও তুলতে পারেনি।

Advertisement

যাই হোক, চলুন সোজাসাপ্টা ভাবে দেখে নেওয়া যাক কেমন হয়েছে এবারের বাজেট। কার প্রাপ্তির ঝুলি কতটা পূর্ণ হল ,আর কার প্রত্যাশা অপূর্ণই রয়ে গেল। মোটের উপর এবারের বাজেটকে বলা হচ্ছে আমজনতার বাজেট। আরো ভালো করে বলতে গেলে বলতে হয় এই বাজেটে কপাল খুলেছে মধ্যবিত্তের। নতুন ট্যাক্স স্ল‌্যাবে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় কর ছাড়, এবং ট্যাক্স স্ল‌্যাবের পরিবর্তনের ফলে সুবিধা পাবেন মধ্যবিত্তরা। কারণ এর ফলে করের বোঝা অনেক কম হবে, সাধারণ মানুষ বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন এবং ভোগ প্রবণতা বাড়বে।

কিন্তু লং টার্ম ক‌্যাপিটাল গেইন এবং শর্ট টার্ম ক‌্যাপিটাল গেইনের ক্ষেত্রে পুরনো কর প্রদানের নিয়ম অপরিবর্তিত আছে অর্থাৎ ১২ লাখ টাকার মধ্যে এই স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী মূলধনী লাভ থেকে প্রাপ্ত অর্থ অন্তর্ভুক্ত হবে না। কর ছাড়ের ফলে অর্থনীতিতে বিনিয়োগ এবং ভোগের ভারসাম্য বজায় থাকবে। এর ফলে উপকৃত হবে সাধারণ মানুষ তথা ভারতবর্ষের অর্থনীতিও। প্রবীণ নাগরিকদের জন্য TDS-এর লিমিটকে বাড়িয়ে এক লাখ টাকা পর্যন্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে TDS-এর লিমিটকে বাড়িয়ে ছয় লাখ টাকা পর্যন্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই দুই উল্লেখযোগ্য ছাড় প্রধানত মধ্যবিত্তের কাছে যথেষ্ট গ্রহণযোগ্য হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

কৃষির উপর গুরুত্ব আরোপ এই বাজেটের একটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক। এতে উপকৃত হবে গ্রামীণ ভারতবর্ষ, ফলে গ্রামের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি হবে বলে আশা করা যায়। কৃষাণ ক্রেডিট কার্ডের লিমিটকে বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে এবারের বাজেটে, ফলে কৃষকরা ডেট ট্র‌্যাপের হাত থেকে কিছুটা স্বস্তি পাবে বলে আশা করা যায়। ন‌্যাশনাল ম‌্যানুফ‌্যাকচারিং মিশন তৈরি এবং এর কার্যকারিতাকে স্থির করা উৎপাদন শিল্পে ভারতবর্ষ পৃথিবীর মানচিত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখলের লক্ষ্যে অটল, তারই ইঙ্গিত বহন করছে। ১০০% এফডিআই লিমিট বিমা ক্ষেত্রে নিয়ে আসার প্রস্তাব দিয়ে আর্থিক সংস্কারের বার্তা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী, যা ভারতবর্ষের বিমাশিল্পের কাছে আধুনিকীকরণের প্রধান হাতিয়ার।

চিকিৎসার ক্ষেত্রে বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো এবং ৩৬টি জীবন দায়ী ওষুধের উপর থেকে কাস্টম ডিউটি তুলে দেওয়ার প্রস্তাব সাধারণ মানুষের কাছে ‘ফিল গুড’-এর বার্তা বহন করে। সারা ভারতবর্ষের প্রতিটি জেলায় ক্যান্সারের চিকিৎসা প্রদান বাজেটে উল্লেখিত, ফলে রোগীর চিকিৎসা পাওয়া অনেক সহজ হবে এবং এর ফলে বিপুল ব্যায় ভার বেশ কিছুটা লাঘব হবে। মানব জমিনের উন্নতির জন্য এই বাজেট বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত দিয়েছে, সমস্ত সেকেন্ডারি স্কুলে ইন্টারনেটের ব্যবস্থা এবং আইআইটি-গুলির সীট সংখ্যা বাড়িয়ে ডবল এর প্রস্তাব এই বাজেটে দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে বেশ কিছু নতুন আইআইটি খোলারও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যা সমাজে সার্বজনীন উন্নতি ঘটানোর একটা অন্যতম প্রধান পদক্ষেপ।

Udaan স্কিম এর আওতায় ভারতবর্ষের অনেক শহরকে আনার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে এই বাজেটে। ৫২টি নতুন ট্যুরিজম স্পট রাজ্য সরকারের সহায়তায় তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ভারতবর্ষের ট্যুরিজম শিল্প বিকাশের ক্ষেত্রে স্মরণ নেওয়া হয়েছে গৌতম বুদ্ধের। অ-চিরাচরিত শক্তির উৎসের মধ্যে পারমাণবিক শক্তির সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। সর্বোপরি ২০২৬ সালে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ জাতীয় আয়ের ৪.৪% হবে বলে ধরে নেওয়া হয়েছে। এটি ভারতবর্ষের ফিসক‌্যাল ম‌্যানেজমেন্টের সাফল্যের অন্যতম রূপরেখা, যা শিল্প মহল তথা সমগ্র বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের ভারতবর্ষে বিনিয়োগের ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করবে।

এবারের বাজেটের বাউন্সারে উপেক্ষিত হয়েছে দুটি সেক্টর, একটি প্রতিরক্ষা, অপরটি রেল। প্রত্যাশার থেকে কম অর্থ বরাদ্দের ফলে মুখ ভার এই দুই সেক্টরের। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, ট্যাক্সের অভাবনীয় ছাড় ভবিষ্যতে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির সহায়ক হবে। ফলে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে।
যাই হোক, সব দিক দিয়ে দেখতে গেলে এবারের বাজেটকে ভারসাম্যে রাখার চেষ্টা করেছেন অর্থমন্ত্রী। উপেক্ষিত হয়নি জিডিপি বৃদ্ধির হার। ট্যাক্স ছাড় দিয়ে অর্থমন্ত্রী হয়েছেন মধ্যবিত্ত মানুষের নয়নের মণি। ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতবর্ষকে পেতে হবে উন্নত দেশের খেতাব, সেই লক্ষ্যে চলার অন্যতম প্রধান পদক্ষেপই হল এবারের বাজেট।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement