প্রতীকী ছবি
বয়স বাড়লেই চিন্তা বাড়বে, উদ্বেগ ঘনাবে–এই সনাতন ধারণা থেকে এবার বেরিয়ে আসবার সময় হয়েছে। খবর অনুযায়ী, ব্যাঙ্ক ডিপোজিটের ক্ষেত্রে বয়স্ক নাগরিকরা যাতে পুরো বিমার সুবিধা পেতে পারেন, সেই বিষয়ে সচেষ্ট হয়েছেন নীতি নির্ধারকদের একাংশ। এই নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা দিতে কলম ধরলেন নীলাঞ্জন দে
সিনিয়র সিটিজেনদের আমানত যাতে আরও সুরক্ষিত থাকে তার জন্য সার্বিক ইনসিওরেন্স কভার দেওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে কথা উঠেছে। খবরে প্রকাশ যে ব্যাঙ্ক ডিপোজিটের ক্ষেত্রে বয়স্ক নাগরিক যাতে পুরো বিমার সুবিধা পেতে পারেন, সে বিষয়ে সচেষ্ট হয়েছেন নীতি নির্ধারকদের একাংশ। ডিপোজিট ইনসিওরেন্স অ্যান্ড ক্রেডিট গ্যারান্টি কর্পোরেশনের প্রসঙ্গ এই সূত্রে আলোচনার মধ্যে চলে এসেছে। কিছু দরকারি তথ্য।
১. সব কমার্শিয়াল ব্যাঙ্ক (বিদেশি ব্যাঙ্কের ভারতীয় ব্রাঞ্চও এই তালিকায়) সংশ্লিষ্ট আইনের আওতায় পড়ে।
২. কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কগুলোও ডিপোজিট ইনসিওরেন্স নিয়মের অন্তর্ভূক্ত।
৩. বিমার লিমিট: পাঁচ লক্ষ টাকা (২০২০-র ফেব্রুয়ারিতে বেড়েছে)
৪. প্রিমিয়াম দিতে হয় সব ব্যাঙ্ককেই। আমানতকারীর উপর তা আলাদাভাবে ধার্য্য করা হয় না।
৫. DICGC-র তরফে তিনটি বিশেষ ফান্ড গঠিত হয়েছে – ডিপোজিট ইনসিওরেন্স ফান্ড, ক্রেডিট গ্যারান্টি ফান্ড এবং জেনেরাল ফান্ড। প্রথম দুটি খুব প্রাসঙ্গিক।
DICGC
ডিপোজিটর পিছু ৫,০০,০০০ টাকা
একটি ব্যাঙ্কের বিভিন্ন ব্রাঞ্চের আমানত একত্রিত করে ধরা হয় লিমিট পর্যন্ত প্রিন্সিপাল ও ইন্টারেস্ট, দুইয়ের জন্যই বিমাযদি আপনার একাধিক ব্যাঙ্কে আমানত থাকে, তাহলে কভারেজ লিমিট আলাদা আলাদা ভাবে চালু থাকবে।
প্রঃ আমার দুটি ব্যাঙ্ক আমানত আছে। আর ঘটনাচক্রে দুটিই একই সময়ে বন্ধ হয়ে গেল। কিভাবে আমি সুরক্ষা পাব?
উঃ আপনার দুটি ব্যাঙ্কে ডিপোজিটেই বিমা রয়েছে আলাদাভাবে “Funds in each bank would be insured separately”, DICGC-র মতে – তাই বন্ধ হওয়ার সময়কাল এখানে কোনও কিছু নির্ধারণ করবে না।
একক আমানতকারী : ইন্ডিভিজুয়াল ডিপোজিটর
ধরা যাক শ্রীমতি ‘ক’ র সেভিংস এবং কারেন্ট, দুই ধরনের অ্যাকাউন্ট আছে। সঙ্গে রয়েছে কিছু ফিক্সড ডিপোজিটও। তঁার বিন্যাস যদি এই রকম হয় :
১. সেভিংস অ্যাকাউন্ট : Rs. 4,26,800
২. কারেন্ট অ্যাকাউন্ট : Rs. 32,000
৩. ফিক্সড ডিপোজিট : Rs. 90,000
৪. মোট : Rs. 5,48,800
৫. বিমার সুবিধা পাবেন 5,00,000 টাকা পর্যন্ত।
প্রঃ আমার কিছু ‘ডিউস’ আছে, ব্যাঙ্ক কি কেটে নিতে পাবে?
উঃ হ্যাঁ, নিজেদের প্রাপ্য কেটে নিতে পারেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। আমানতকারী হিসাবে আপনি “নেট” সুবিধা পাবেন।
প্রঃ ব্যাঙ্ক বন্ধ হলে কি ক্লেম করতে হবে আমাকে?
উঃ না। অফিসিয়াল লিকুইডেটর আপনার হয়ে প্রক্রিয়া চালু করবেন তিন মাসের মধ্যে। এই বিষয়ে নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে চলা হবে। DICGC-র গঠিত নিয়ম অনুযায়ী আপনার আমানত শর্তাধীন ভাবে সুরক্ষিত থাকবে।
আমি মনে করি, হ্যাঁ, সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য কিছু বিশেষ নীতি গ্রহণ করার সময় এসেছে। প্রবীণদের মধ্যে অনেকেই মূলত আমানতের সুদ নিয়ে সংসার চালান। তাঁদের জন্য ব্যাঙ্কের ডিপোজিটই প্রধান ভরসা। বাজারে মার্কেট লিঙ্কড রিটার্ন পেতেও তাঁদের অনেকেই এগিয়ে এসেছেন বটে, কিন্তু সেই আগ্রহীদের সংখ্যা এখনও বেশ কমের দিকে। তাই আমানতকে অগ্রাহ্য করলে চলবে না। বয়স্কদের মধ্যে যাঁরা প্রধানত ডিপোজিট সম্বল করে চলেন, তাঁদের জন্য কেবল ৫,০০,০০০ টাকার বিমা কোনওমতেই যথেষ্ট নয়। যাঁদের বেশি ডিপোজিট, ভ্যালু যেখানে উঁচুর দিকে, তাঁদের ক্ষেত্রে এই বিমার লিমিট একেবারেই স্বল্প।
যদি ব্যাঙ্কের পরিচালনায় অসুবিধা হওয়ার কারণে (অথবা অন্য কোন আর্থিক কারণে) কার্যকলাপ ব্যাহত হয়, তাহলে কী হবে? সাধারণ আমানতকারী যাঁরা ব্যাঙ্কের উপর ভরসা রেখেছেন, তাঁদের ক্ষতি হোক, এমন কেউ চায় না। মনে রাখতে হবে ইওরোপে এবং আমেরিকান বাজারেও, কয়েকটি “ব্যাঙ্ক ফেলিওর” হওয়ার খবর গত ২০২৩ সালে প্রকাশ্যে এসেছিল। তাই “ফিনান্সিয়াল স্টেবিলিটি” নিয়ে প্রশ্ন ওঠার আগে আমাদের ব্যাঙ্কিং নিয়ন্ত্রক যেন সতর্ক থাকেন, অনাবশ্যক যেন কিছু না হয়ে যায়। যে কোনও ব্যবস্থায় প্রবীণরাই দেখি আজকাল খুব অসুরক্ষিত থাকেন। এঁদের জন্য জনসাধারণের জন্য নির্দিষ্ট করা পাঁচ লক্ষ টাকার লিমিট তাই বাড়িয়ে রাখাই উচিত। যদি পুরোপুরি ডিপোজিট ইনসিওরেন্সের আওতায় আনা যায় সিনিয়র সিটিজেনদের তাহলে সমাজের পক্ষে ইতিবাচক পদক্ষেপ হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.