প্রতীকী ছবি
বাজার অর্থনীতিতে ‘রিটার্ন’ শব্দটির গুরুত্ব অপরিসীম। বড় এবং স্থায়ী রিটার্ন পাওয়ার লক্ষ্যেই লগ্নিকারীরা বাজারে নামেন। বিভিন্ন কারণে এর রকমফের হয়। কেউ মুখ দেখেন লাভের, কেউ পারেন না। কী কী বিষয় ফারাক গড়ে দেয়? জানলে সমস্যার সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে সহজেই। সেই সূত্রই দিলেন ফিনান্সের অধ্যাপক ড. শান্তনু কুমার গাঙ্গুলি
স্টক মার্কেটে ‘রিটার্ন’ এবং ‘রিস্ক’– এই দুটি কথা কেবল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণই নয়। বরং বলা যেতে পারে, প্রথম এবং শেষ কথা। প্রথমেই ‘রিটার্ন’ নিয়ে কিছু আলোকপাত করা যাক। রিটার্নের বাংলা অর্থ ‘ফেরা’। কিন্তু স্টক মার্কেটের পরিপ্রেক্ষিতে রিটার্নের অর্থ ‘উপার্জন’। সঠিক অর্থে বলতে গেলে Return on Investment অর্থাৎ বিনিয়োগের ওপর উপার্জন। সাধারণভাবে যখনই আমরা ‘রিটার্ন’ কথাটা উল্লেখ করি, লগ্নি বা বিনিয়োগকারীদের মনে তখনই একটি শতকরা (%) হিসাবের ছবি ভেসে ওঠে।
আচরণগত অর্থনীতিবিদদের (Behavioural Economics) ধারণা অনুযায়ী, আমরা এটাকে মনের System 1-এর কার্যকারিতা বলতে পারি। System 1-এর প্রতিক্রিয়া তাৎক্ষণিক, যার জন্য খুব মনঃসংযোগের দরকার পড়ে না। যেমন ২+২=৪, যা আমাদের মনে কোনও প্রচেষ্টা ছাড়াই চলে আসে। ঠিক তেমনই শতকরা হিসাবে রিটার্ন মাপা হয়ে থাকে, যা স্বাভাবিকভাবে চলে আসে। কিন্তু রিটার্ন ঠিক কতটা, সেটা মাপতে কিন্তু মনকে আরও সক্রিয় হতে হয়। সক্রিয় মনকে System 2 প্রসেস বলা হয়। ধরুন, আপনি ১৫৫ টাকা দরে একটি শেয়ার কিনলেন এবং এক মাস বাদে সেই শেয়ার ২০০ টাকায় বেচলেন। আপনি যদি নিয়মিত বিনিয়োগকারী হন, আপনার মন তাৎক্ষণিকভাবে বলবে, আপনি একমাসে ৩৩%-এর কিছু কম রিটার্ন পেয়েছেন। কেন এবং কীভাবে?
কারণ আমরা সাধারণত ১০, ৫০, ১০০, ২০০ ইত্যাদি সংখ্যার ওপর রিটার্ন নির্ণয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি system 1 অনুযায়ী। এক্ষেত্রে আমরা ১৫৫-এর বদলে ১৫০, যা নাকি ১৫৫-এর নিকটতম সংখ্যা, তার উপর তাৎক্ষণিকভাবে রিটার্ন নির্ণয় করব। সুতরাং রিটার্ন = (২০০-১৫০)/ ১৫০ = ০.৩৩, শতকরা ৩৩%। Behavioural economist পরিভাষায় ১৫০ হল Anchor। তারপর আমরা Anchor থেকে adjust করে বলব, যেহেতু ১৫৫ সংখ্যাটি ১৫০-এর বেশি, রিটার্ন ৩৩%-এর কম। কিন্তু সঠিক রিটার্ন নিরুপণ করতে আমাদের System 2-এর সাহায্য নিয়ে বলতে হবে, (২০০-১৫৫)/১৫৫ = ০.২৯, শতকরা হিসেবে ২৯%।
এবার আরও একটু গভীরে ঢোকা যাক। আপনি ১০ টাকায় ‘ক’ শেয়ার কিনে ২০ টাকায় বেচলেন ১ বছর বাদে, আপনার লাভ হল ১০০%। আবার আপনি ৪০ টাকায় ‘খ’ শেয়ার কিনে ৫০ টাকায় বেচলেন ১ বছর বাদে, আপনার লাভ হল ২৫%। শতকরা লাভ আপনি বার করলেন চটজলদি (System 1) পদ্ধতিতে । দুটো ক্ষেত্রেই মোট টাকার অঙ্কে আপনার সমপরিমাণ লাভ হল ১০ টাকা, ১ বছর লগ্নির ফসল হিসেবে। কিন্তু শতকরা হিসেবে যদি রিটার্ন বিচার করেন তাহলে ‘ক’ শেয়ার অনেক আকর্ষণীয় ‘খ’ শেয়ারের তুলনায়, কেননা ‘ক’ তে ১০ টাকা বিনিয়োগ করে ১০ টাকা লাভ করছেন আর ‘খ’ তে ৪ গুণ বেশি বিনিয়োগ করে সমপরিমাণ (১০ টাকা) লাভ করছেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে, কম দামি শেয়ারে আপনি যদি বিনিয়োগ করেন, টাকার অঙ্কে দামি শেয়ারে বিনিয়োগের তুলনায় সমপরিমাণ লাভ হলেও, শতকরা রিটার্ন কম দামি শেয়ারের ক্ষেত্রে বেশি হবেই। এবার System 2-কে সক্রিয় করা যাক।
ধরা যাক, আরও ১ বছর বাদে ‘ক’ শেয়ারের দাম ২০ টাকা থেকে কমে ১৫ টাকায় এসে দাঁড়ালো, অর্থাৎ ৫ টাকা লোকসান হল। শতকরা হিসেবে লোকসান (১৫- ২০/২০) = ২৫%। একইভাবে ‘খ’ শেয়ার এর দাম ৫০ টাকা নেমে হল ৪৫ টাকা অর্থাৎ টাকার হিসেবে লোকসান হল ৫ টাকা, শতকরা হিসেবে লোকসান (৪৫-৫০)/ ৫০ = ১০%। মানে দুক্ষেত্রেই ৫ টাকা লোকসান হল– কিন্তু শতকরা হিসেবে কমদামি শেয়ারের লোকসান অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি দেখাচ্ছে অধিক দামি শেয়ারের তুলনায়। এই উদাহরণগুলো থেকে আমাদের কাছে ফিনান্স এবং অর্থনীতি সংক্রান্ত তিনটে খুব দরকারি ব্যাপার উঠে আসছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.