শুধুমাত্র দরকারের জিনিস বললে হয়তো ভুল হবে। আপনার মানিব্যাগ বা ওয়ালেট নগদশূন্য হলেও ‘এমার্জেন্সি’ খরচাপাতির জন্য শেষ ভরসা কিন্তু ওই ক্রেডিট, ডেবিট কার্ড। অথচ এখনও অনেকেই জানেন না, ব্যাগে থাকা ওই কার্ডটা আসলে কী? ক্রেডিট না ডেবিট? কোথায় ফারাক এই দুইয়ের মধ্যে? কোনটা আপনার পক্ষে বেশি সহায়ক হতে পারে? কার্ড হারিয়ে গেলেই বা কী করবেন-অতি জরুরি কিছু প্রশ্নের উত্তর, যা না জানলেই নয়, পাঠকদের জন্য তুলে ধরল টিম সঞ্চয়
ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড অধুনা আমাদের অনেকেরই রোজকার জীবনের অন্যতম প্রধান অঙ্গ হয়ে উঠেছে। দোকানে, রেস্টুরেন্টে, শপিং মলে বা অনলাইনে কেনাকাটা করার জন্য আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী এই ‘প্লাস্টিক মানি’। তা সত্ত্বেও এখনও সবাই এই দু’ধরনের কার্ডের মধ্যে পার্থক্য বুঝে উঠতে পারেন না। তাদের জন্যই এই বিশেষ প্রতিবেদন।
ডেবিট কার্ড কী–
খুব সহজ করে বললে যখন নিজের টাকা দিয়ে কেনাকাটা করছেন যে কার্ডে, সেটা হল ডেবিট কার্ড। ডেবিট কার্ড দেওয়া হয় সাধারণত ব্যক্তিগত সেভিংস বা কারেন্ট অ্যাকাউন্টে। ডেবিট কার্ড দিয়ে কেনাকাটা করলে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে সঙ্গে সঙ্গেই টাকা কেটে নেওয়া হয়। ডেবিট কার্ডে কেনাকাটার পাশাপাশি এটিএম থেকে টাকাও তোলা যায়। সেভিংস অ্যাকাউন্টে সাধারণত নিজের ব্যাংক থেকে মাসে পাঁচ বার ও অন্য ব্যাংক থেকে তিনবার টাকা তোলা যায়। অন্য ধরনের অ্যাকাউন্টে অন্য ব্যাংকের এটিএম থেকে টাকা তুললে বা অন্য কোনও ট্রানজ্যাকশন করলে (ব্যালেন্স ইনকোয়ারি, মিনি স্টেটমেন্ট প্রভৃতি) প্রথমবার থেকেই চার্জ দিতে হবে।
ক্রেডিট কার্ড কী-
ক্রেডিটের সহজতম বাংলা হল ধার বা ঋণ। ধারে জিনিস কেনার আধুনিকতম রূপ ক্রেডিট কার্ড। ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে কার্ড ব্যবহারকারীকে ব্যাংকের থেকে ঋণমাত্রা (ক্রেডিট লিমিট) দেওয়া হয় কেনাকাটা করার জন্য। তাই কিছু কিনলে ক্রেতার হয়ে ব্যাংক টাকা মেটায়। ক্রেতাকে ২০ থেকে ৫০ দিনের ভেতর ব্যাংককে টাকা মিটিয়ে দিতে হয়। তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে, ব্যাংকের লাভ কী হল? অনেক সময়ই ক্রেতা সময়মতো টাকা মিটিয়ে উঠতে পারেন না, তখন অনেক চড়া সুদে সেই ধার মেটাতে হয়। এছাড়াও অনেকেই বড় অঙ্কের কেনাকাটা EMI করে নেন। সেখানেও ব্যাংকের লাভ থাকে। ক্রেডিট কার্ডে এটিএম থেকে টাকা তুললেও বড় অঙ্কের চার্জ দিতে হয়।
কার্ড নেটওয়ার্ক–
আমরা ব্যাংকের কার্ডে ব্যাংকের লোগো ছাড়াও রূপে, ভিসা বা মাস্টারকার্ডের লোগো দেখে থাকি। এদের কাজ হল ইস্যুয়ার ও অ্যাকোয়ারার ব্যাংকের মধ্যে সেতুবন্ধন। যে ব্যাংক কাস্টমারকে কার্ড দেয় সেই ব্যাংককে ইস্যুয়ার ব্যাংক বলা হয়। কার্ড যে ব্যাংকের POS মেশিনে ব্যবহার হয় বা যে ব্যাংকের এটিএম থেকে টাকা তোলা হয়, সেই ব্যাংককে বলা হয় অ্যাকোয়ারার ব্যাংক। ইস্যুয়ার ও অ্যাকোয়ারার ব্যাংক এক হলে ট্রানজ্যাকশন হওয়ার জন্য নেটওয়ার্কের দরকার হয় না। এই ইস্যুয়ার ও অ্যাকোয়ারার ব্যাংক এবং নেটওয়ার্কের কাজ ‘কার্ড নট প্রেজেন্ট’ ট্রানজ্যাকশনের ক্ষেত্রেও একই থাকে।
কার্ড প্রেজেন্ট ও কার্ড নট প্রেজেন্ট ট্রানজ্যাকশন–
ট্রানজ্যাকশনকে সাধারণত দু’ভাগে ভাগ করা হয়। কার্ড প্রেজেন্ট ট্রানজ্যাকশন ও কার্ড নট প্রেজেন্ট ট্রানজ্যাকশন। যখন কেনাকাটার সময় কার্ড টার্মিনালে সশরীরে উপস্থিত থাকে, তাকে বলা হয় কার্ড প্রেজেন্ট ট্রানজ্যাকশন। আর অনলাইনে কেনাকাটার ক্ষেত্রে ক্রেতা ও বিক্রেতা সশরীরে এক জায়গায় আসেন না, এক্ষেত্রে হয় ‘কার্ড নট প্রেজেন্ট ট্রানজ্যাকশন। ভারতীয় বিক্রেতার ক্ষেত্রে কার্ড প্রেজেন্ট ও কার্ড নট প্রেজেন্ট ট্রানজ্যাকশন-দু ক্ষেত্রেই 2FA (সেকেন্ড ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন) বাধ্যতামূলক। কার্ড প্রেজেন্টের ক্ষেত্রে PIN ও কার্ড নট প্রেজেন্টের ক্ষেত্রে OTP বাধ্যতামূলক। রিজার্ভ ব্যাংক NFC কার্ডের ক্ষেত্রে (যে কার্ডে ওয়াইফাই ‘সিম্বল’ দেখা যায়) এই নিয়মের ছাড় দিয়েছে ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত কেনাকাটার জন্য। এই কার্ড POS মেশিনে ছোঁয়ালে বা খুব কাছে আনলে কার্ড কাজ করবে এবং ট্রানজ্যাকশন হবে।
ডেবিট কার্ড না ক্রেডিট কার্ড? কোনটা ব্যবহার করব?
কেনাকাটা অনলাইনে হোক বা নিউ মার্কেট থেকে, ডেবিট কার্ড সবেতেই ‘পারফেক্ট চয়েস’। ডেবিট কার্ড ব্যাংকে সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুললেই পাবেন। আর এটিএম থেকে টাকা তোলার জন্য ডেবিট কার্ডই ব্যবহার করা উচিত। অপর দিকে বড় অঙ্কের কেনাকাটা করার জন্য ক্রেডিট কার্ড বেশি ব্যবহার হয় কারণ সেভিংস অ্যাকাউন্টে টাকা থাকলে সেটার সুদ কিছুটা পাওয়া যায়, তাছাড়া ক্রেডিট কার্ডে সাধারণত রিওয়ার্ড পয়েন্টও বেশি থাকে। কিন্তু ক্রেডিট কার্ডে খরচা করে সময়মতো টাকা ফেরত না দিলে ক্রেডিট রিপোর্ট খারাপ হয়। তাই পরে লোন পেতে অসুবিধা হতে পারে। অপর দিকে ক্রেডিট রিপোর্ট খারাপ থাকলে সিকিয়র্ড ক্রেডিট কার্ড (সাধারণত ফিক্সড ডিপোজিট জমা রেখে নিতে হয় ) নিয়ে এবং ছোট ছোট কেনাকাটা করে সময়ে টাকা মেটাতে থাকলে ক্রেডিট রিপোর্ট ভাল হবে, লোন পেতেও সুবিধা হবে। আরও একটা কথা। ডেবিট কার্ডের চার্জ সাধারণত ক্রেডিট কার্ডের থেকে কম হয়।
কার্ড হারিয়ে গেলে কী করবেন?–
ডেবিট বা ক্রেডিট, যে কার্ডই হোক, হারিয়ে গেছে বুঝতে পারলে সঙ্গে সঙ্গে সেটা ব্যাংকের দেওয়া নম্বরে ফোন করে ব্লক করুন। ব্লক করার পরেও টাকা উঠলে সেটার দায় ব্যাংকের। ব্যাংকও আপনাকে টাকা ফেরত দিতে বাধ্য। কিন্তু কার্ড ব্লক না হলে এবং টাকা উঠে গেলে সে দায় কিন্তু ব্যাংকের নয়। এ ছাড়াও মাথায় রাখতে হবে যে, UPI রেজিস্ট্রেশনের জন্য ডেবিট কার্ড লাগলেও ডেবিট কার্ড ব্লক হলে UPI ব্লক হয় না, তাই ব্যাংকের কাস্টমার কেয়ার নাম্বারে ফোন করে বা নিজের ব্রাঞ্চে যোগাযোগ করে UPI ব্লক করতে হবে যদি কোনও ভাবে UPI সংক্রান্ত তথ্য কোনভাবে অসৎ লোকের হাতে চলে যায় বা চলে গিয়েছে বলে মনে হয়।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ৬ জুলাই, ২০১৭-র ‘Customer Protection-Limiting Liability of Customers in Unauthorised Electronic Banking Transactions’ সার্কুলারে খুব স্পষ্ট করে জানিয়েছে, গ্রাহকের ভুলে গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কাটা গেলে গ্রাহককেই তার দায় নিতে হবে, তাই কখনওই কাউকে কার্ডের পিন বা কোনও রকম OTP শেয়ার করা উচিত নয়। এ রকম ক্ষেত্রে কোনও আর্থিক ক্ষতি হলে তার দোষ পুরো গ্রাহকেরই হবে।
গোটা ঘটনায় ব্যাংককেই প্রমাণ করতে হবে যে দোষ গ্রাহকের। আবার অপর দিকে, ব্যাঙ্কের ভুলে গ্রাহকের কোনও টাকা কাটা গেলে সেই দায় পুরোপুরি ব্যাংকের। এছাড়াও ভুল যখন গ্রাহক বা ব্যাংক কারওই নয়, তৃতীয় কোনও পক্ষের, সে ক্ষেত্রেও ব্যাঙ্ককেই গ্রাহককে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। UPI এবং রিজার্ভ ব্যাংকের এই সার্কুলার নিয়ে আমরা অন্য একদিন বিস্তারিত জানাব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.