ছবি- সংগৃহীত
নারী হোন না পুরুষ, বিমার গুরুত্ব অপরিসীম। নতুন করে তা আর বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু আজকের দিনের আধুনিকারা, কর্মরতা মহিলারা অনেকেই জানেন না এই বিষয়টি। ফলে, বহু সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত থেকে যান তাঁরা। জীবনের কোন পর্যায়ে, কোন প্রয়োজন মেটাতে কোন বিমা আপনার সহায়ক হতে পারে জানা থাকলে জীবন হবে আরও সুখের এবং সমৃদ্ধির। কর্মরতা মহিলারা তখনই হবেন প্রকৃত অর্থে স্বাবলম্বী। লিখছেন কোয়েল মুখোপাধ্যায়
পুতুলখেলার পালা শেষেই প্রস্তুতি ঘরকন্নার কাজ সামলানোর। সংসারের চক্রব্যুহে পিষতে পিষতেই ইতি জীবনের যাত্রাপথের। যুগ যতই আধুনিক হোক, ‘জেন-জি’ বিশেষণে ভূষিত হোক, ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের বহু জায়গায়, আজও বহু নারীর সংজ্ঞা যেন এখনও এই সংকীর্ণ পরিব্যাপ্তিতেই আবদ্ধ। ব্যতিক্রম যাঁরা গড়েছেন, যে মেয়েরা দাঁড়িয়েছেন নিজের পায়ে, হয়েছেন স্ব-উপার্জনশীল, স্বাবলম্বী এবং স্বাধীন, তাঁরাই বদলের বার্তাবাহী। তাঁরাই নিজগুণে পালটেছেন ইতিহাস, গড়েছেন নতুন উপমা। সৌভাগ্যের বিষয়, কর্মরতা মহিলাদের সংখ্যা আজ সমাজের সমস্ত স্তরেই বাড়ছে। শিক্ষার প্রসারই যার নেপথ্যে। তবে আর্থিক স্বাধীনতা যেমন মেয়েদের বেড়েছে, সেইসঙ্গেই বেড়েছে ভবিষ্যতের কথা ভেবে, আর্থিক নিরাপত্তা রক্ষার প্রয়োজনীয়তাও। আর এইখানেই উঠে আসে বিমার গুরুত্ব।
হ্যাঁ, কর্মরতা মহিলাদের জন্য বিমার প্রয়োজন আছে। বিলক্ষণ আছে। কারণ প্রথমত, নিজে উপার্জনশীল হওয়ায়, উপার্জিত অর্থের সঞ্চয়ের দায়িত্বও সেই মহিলার নিজের। লাইফ ইনসিওরেন্স তথা বিমায় লগ্নিকে যদি তিনি তাঁর সেই ‘সেভিংস অপশন’ হিসাবে বেছে নেন, তাহলে তাঁর ভবিষ্যতের প্রয়োজনে নিজের সময় এবং উদ্যোগে, অর্থ সঞ্চয় করার পরিশ্রম লাঘব হবে। পাশাপাশি তিনি নিজের স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি, দুই ধরনের আর্থিক প্রয়োজন মেটাতেই, পূর্ব-পরিকল্পিত আর্থিক রোডম্যাপ মেনে এগোতে পারবেন। বিভিন্ন সংস্থার ইনসিওরেন্স টার্ম প্ল্যানে মহিলাদের জন্য আকর্ষণীয় ছাড় এবং সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। নিজে সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী, নিজের জন্য সেরা স্কিমটি বেছে নিতে পারেন।
দ্বিতীয় কারণ, সমীক্ষার ফল বলছে, নারী পুরুষের তুলনায় দীর্ঘায়ু হন। এই সত্যটি মহিলাদের জন্য বিমা প্রদানকারী সংস্থার কাজকে কম ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। ফলে মহিলাদের টার্ম ইনসিওরেন্সের প্রিমিয়াম রেট সাধারণত কম হয়, যা একে সাশ্রয়ী করে তোলে। নিজের জন্য তাই যথাযথ ইনসিওরেন্স কভার বেছে নিতে পিছপা হবেন না। তৃতীয়ত, অনেকেরই পরিবারের মাথায় ঝুলতে থাকে বড় ঋণের বোঝা। গৃহ ঋণ থেকে শুরু করে, এডুকেশন লোন, বিজনেস লোন–আরও কত কি! সেই ঋণের বোঝার হাত থেকে নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে বাঁচানোর বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে হয় বহু কর্মরতা মেয়েকেই। কিন্তু হঠাৎ ঘনিয়ে আসা কোনও বিপর্যয় তাতে বাধার সৃষ্টি করতে পারে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল মেয়ের অকালমৃত্যুতে গোটা পরিবারের কার্যত পথে বসার উপক্রম হয়। সেই সমস্যা দূর করতে পারে সময় থাকতে করে রাখা, টার্ম ইনসিওরেন্স প্ল্যান।
চতুর্থ কারণ হিসাবে বলা যেতে পারে করছাড়ের সুবিধার কথাও। আয়কর আইন, ১৯৬১ অনুযায়ী, টার্ম ইনসিওরেন্স প্ল্যানে করছাড়ের সুবিধা রয়েছে। কর্মরতা মহিলা হিসাবে যদি আপনি নিয়মিত আয়কর দেন, তাহলে আপনার জন্য বিমা অত্যন্ত উপকারী সাব্যস্ত হতে পারে করছাড়ের সুবিধা মেলায়। পলিসির জন্য যে প্রিমিয়াম দিতে হয়, তাতে আয়কর বিধির ৮০(সি) ধারা অনুযায়ী, করছাড়ের সুবিধা দেওয়া হয়। আবার ১০ (১০ডি) ধারা অনুযায়ী ম্যাচুরিটি সংক্রান্ত ট্যাক্স বেনিফিটও পাওয়া যেতে পারে। খুব ভাল হয়, যদি এই নিয়ে এবারের বাজেটের নিয়ম-কানুন একটু দেখে নেন। সঠিক ধারণা পেতে, অবশ্যই কোনও পেশাদার ফিনান্সিয়াল অ্যাডভাইজার বা বিমা-বিশেষজ্ঞের সঙ্গে নিজের স্বার্থেই যোগাযোগ করতে পারেন।
কর্মরতা অভিভাবক হোন বা না হোন, সন্তানের জীবন এবং তার ভবিষ্যত গঠনের চিন্তা তো থাকবেই। প্রথম ক্ষেত্রে বিমায় বিনিয়োগ অত্যন্ত দরকারি। বিশেষ করে, জীবনের কঠিন সময়ে এর গুরুত্ব বোঝা সম্ভব। কথায় বলে, স্বাস্থ্যই সম্পদ। আর কর্মরতা মহিলাদের ক্ষেত্রে কাজের চাপের জন্য সেই স্বাস্থ্যের দেখভাল করা সবসময় সম্ভব হয়ে ওঠে না। অনেকেই গাফিলতি করেন। কিন্তু রোগ-ব্যধি কখনও বলে-কয়ে আসে না। আজকাল মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যানসার, হার্টের অসুখের মতো জটিল, দুরারোগ্য রোগের প্রকোপ ক্রমশ বাড়ছে। এই ধরনের রোগের চিকিৎসার খরচও বিশাল। স্বাস্থ্যবিমা করা থাকলে এহেন প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করা কিছুটা হলেও সহজ হয়। সবচেয়ে বড় কথা, হেলথ ইনসিওরেন্সের ক্ষেত্রে কর্মরতা মহিলাদের কাছে ‘ক্রিটিক্যাল ইলনেস রাইডার’ বেছে নেওয়ার মতো সুযোগ থাকে, যার মাধ্যমে সারভাইক্যাল ক্যানসার, ব্রেস্ট ক্যানসার, হার্টের অসুখ, স্ট্রোক, প্যারালিসিস প্রভৃতি দুরারোগ্য ব্যধি থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হয়। মেডিক্যাল এমার্জেন্সিতে বিমার মর্ম বুঝবেন হাতে নাতে।
পরিশেষে বলি, কর্মরতা মহিলাদের শুধু বাড়ির নয়, বাইরেরও দায়িত্ব সামলাতে হয় সমান দক্ষতায়। ‘ডবল প্রেশার’ দাবি করে ‘ডবল এফিসিয়েন্সি’। তাহলে যদি কাজে নিজের সেরাটুকু দিতে অন্যথা না করেন, বিনিময়ে প্রাপ্তির ঝুলি আধা খালি রাখবেন কেন? আপনার স্বার্থেই আপনার প্রাপ্তির ভাণ্ডার পরিপূর্ণ রাখুন। বিমা করুন নিজের জন্য। নিজেকে দিন নিজের সেরা উপহার। হাতের কাছে একাধিক বিমা সংস্থার একাধিক আকর্ষণীয় প্ল্যান রয়েছে। তালিকায় আছে কোটাক লাইফ ইনসিওরেন্স, এইচডিএফসি, স্টার হেলথ অ্যান্ড অ্যালায়েড ইনসিওরেন্স, আইসিআইসিআই…আরও কত কী! সঠিক টার্ম ইনসিওরেন্স বেছে নিতে যোগাযোগ করতেই পারেন অভিজ্ঞ কোনও ফিনান্সিয়াল প্ল্যানার কিংবা বিমা বিশেষজ্ঞর সঙ্গে। নিজের প্রয়োজন এবং পছন্দের মধ্যে সাযুজ্য বজায় রেখে, নিশ্চিন্তে দেখতে পারেন সুন্দর এবং নিরাপদ এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.