প্রতীকী ছবি
ছোট ছোট কয়েকটি নিয়ম। যা মেনে চললেই বড়বেলার কঠিন জগতের আর্থিক প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়তে সক্ষম হবে এখনকার খুদেরা। বাড়ি থেকেই তাদের পাঠ দিন সঞ্চয়ের। শেখান এই নিয়মগুলো। যাতে ভবিষ্যতে তারাও মাথা উঁচু করে চলতে পারে সব চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে। লিখছেন লগ্নি পরামর্শদাতা পার্থপ্রতীম চট্টোপাধ্যায়
‘এই ছোট্ট ছোট্ট পায়ে…’। শিশুদের হাতেই রয়েছে ভবিষ্যৎ পৃথিবীর ভার। একটা দেশ ততটাই উন্নত হবে, যতটা সেই দেশের শিশুরা সুষ্ঠু সামাজিক পরিবেশে, সুন্দরভাবে বড় হয়ে উঠবে। দেশের উন্নতি পুরোপুরিভাবেই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হাতে অর্পিত। সেই জন্যই বাবা-মা থেকে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং সরকারও শিশু মনের বৃদ্ধির প্রতি সংবেদনশীল। শিশুকে দেশ গড়ার কারিগর হতে গেলে দরকার তার সর্বাঙ্গীণ প্রতিভার বিকাশ। চলুন, বিনিয়োগ-জ্ঞানের আলোকে দেখে নেওয়া যাক, কীভাবে ছোট থেকে তিলে তিলে শিশুকে গড়লে আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পৌঁছে যেতে পারে চাঁদের পাহাড়ের সন্ধানে।
এই লক্ষ্যপূরণের জন্য প্রয়োজন, বিবিধ বিষয়ে ভালো মতো জ্ঞান অর্জন। কিন্তু সব থেকে বেশি দরকার পড়ে আপনার ছোট্ট সোনার মস্তিষ্কের যথাযথ বিকাশ। এই গুণ অর্জনের জন্য সাধারণ কিছু জিনিসের অধ্যাবসায় অবশ্যই প্রয়োজন, যেমন–
১. অপ্রয়োজনীয় খরচ থেকে বিরত থাকা : আপনি নিজে অপ্রয়োজনীয় খরচ থেকে বিরত থাকুন এবং আপনার ছোট্ট সোনাকে শেখান, কোনটা প্রয়োজনীয় এবং কোন খরচটা অপ্রয়োজনীয়। প্রয়োজন হলে বিভিন্ন কেস স্টাডির সাহায্য নিন। বাস্তব জীবন থেকে কেস স্টাডি নিয়ে আপনার বাচ্চার উপযুক্ত করে উপস্থিত করতে পারলেই দেখবেন, এই ব্যাপারে আপনার ছোট্ট সোনা অনেক পরিণত হতে পেরেছে।
২. বাজেট নির্ধারণ : আপনার সন্তানের কাছে বাজেট ব্যাপারটার ব্যাখ্যা পরিষ্কার করে জানান। বাজেটের বেড়াজালে আপনার সন্তানের জীবনকে বেঁধে রাখার পদ্ধতি শেখাতে পারলেই দেখবেন সম্পদ সন্ধানের অর্ধেক কাজ পরিপূর্ণ। সাংসারিক বাজেটে আপনার ‘লিটিল চ্যাম্প’-এর মতামত নিন এবং তা ভালো হলে অবশ্যই গ্রহণ করুন।
৩. অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তে অংশগ্রহণ : আপনার সংসার জীবনের বিভিন্ন অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তে আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অংশগ্রহণ করান। অনেক বাবা-মার একটা ধারণা থাকে যে, অর্থনৈতিক ব্যাপারে বাচ্চাদের অংশগ্রহণ একেবারে কাম্য নয়। কিন্তু বাস্তব সম্পূর্ণ অন্য কথা বলে। বাচ্চাকে অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তে অংশগ্রহণ করান এবং কোনও সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হল–তার যুক্তিও সন্তানের কাছে মেলে ধরুন। দেখবেন, খুব তাড়াতাড়ি আপনার সন্তান পরিণত মনের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবে।
৪. বিনিয়োগের পাঠ : Charity begins at home, তাই বাচ্চাকে ঘর থেকেই বিনিয়োগের পাঠ দিন। ‘পরে ও এমনিই শিখে যাবে’– এই মতামত কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই খাটে না, তাই ছোট্টবেলা থেকে তার সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলুন। এ ব্যাপারে আপনার প্রথম পদক্ষেপ হবে তাকে পিগি ব্যাঙ্কে টাকা জমানো শেখানো। বিভিন্নভাবে আপনার সন্তানের হাতে যে অর্থ আছে তা নিজের তত্ত্বাবধানে পিগি ব্যাঙ্কে জমা করান এবং একটি লক্ষ্য স্থির করে দিন। এছাড়াও পিগি ব্যাঙ্কে সঞ্চিত অর্থ কীভাবে খরচা করবেন, তার পরিকল্পনাও করুন সন্তানের সঙ্গে। দেখবেন, এর ফলে আপনার সন্তানের সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে উঠবে।
একটু বড় হলে তার নামে মাইনর অ্যাকাউন্ট খুলে দিন। এবং তাকে বোঝান, সঞ্চিত অর্থ এবার থেকে পিগি ব্যাঙ্কে আর না রেখে সরাসরি আসল ব্যাঙ্কে রাখতে হবে। এর ফলে তার অর্থ বাড়বে, এবং সে আরও বড় পরিকল্পনা করবে। দেখবেন, পরিকল্পনাতে যেন সবসময় খরচ এবং বিনিয়োগের ভারসাম্য বজায় থাকে। এই সময়েই আপনার সন্তানকে সিপ-এর (Systematic Investment Plan) সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিন। প্রয়োজন হলে তার জমানো অর্থের সঙ্গে আপনিও কিছু অর্থ দিয়ে বিভিন্ন চিলড্রেন্স ফান্ডে সিপ করিয়ে দিন এবং দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের পাঠ দিন।
আরও একটু বড় হলে, ‘অষ্টম আশ্চর্য’ কম্পাউন্ডিং ইন্টারেস্টের বিষয়ে শিক্ষা দিন। যেভাবে আপনার সন্তান বুঝবে সেই ভাবেই তাকে বোঝান। থিওরির একঘেয়েমি অনেক সময় তার মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠতে পারে, তার থেকে বরং বাস্তব জীবন থেকে উদাহরণ দিন।
৫. পড়ার অভ্যাস : বিনিয়োগের দীর্ঘমেয়াদি দৌড়ে আপনার সন্তানকে সাফল্য অর্জন করাতে হলে অবশ্যই তার পড়ার অভ্যাস তথা রিডিং হ্যাবিটের দিকে জোর দিন। বই পড়া সফল বিনিয়োগ জীবনের অন্যতম প্রধান সোপান। বিভিন্ন সফল বিনিয়োগকারী যেমন ওয়ারেন বাফেট, চার্লি মুঙ্গার–এঁদের বই দিতে পারেন। এঁদের লেখার বিভিন্ন উদ্ধৃতি নিয়ে শিশু মনের উপযোগী করে গল্প দিয়ে সাজানো ‘Two Wise Man’ বইটি দিতে পারেন।
এছাড়াও বিভিন্ন পৌরাণিক গল্পের মাধ্যমে তাকে বিনিয়োগের শিক্ষা দিতে পারেন। যাই হোক, যে কোনও পরিস্থিতিতে দেখবেন সমস্ত জিনিসকে আপনার সন্তান সাবলীল ভাবে গ্রহণ করছে কি না। এর সঙ্গে থাকবে আপনার নেতৃত্ব–এই দুইয়ের মেলবন্ধনে আপনার সন্তান ছোট্ট ছোট্ট পায়ে বাধার পাহাড় পেরিয়ে পৌঁছে যাবে সাফল্যের দিকে। সে হয়ে উঠবে বিনিয়োগের ব্যাপারে ‘বাবার মতই বড়’, কিংবা ‘বাবার থেকেও বড়’, যা আপনার কাছে চরম কাঙ্খিত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.