ক্যাপিটাল মার্কেটে ইক্যুইটির বিকল্প নেই, এটা শাশ্বত সত্য। কিন্তু তা বলে নিজের পোর্টফোলিও অতিরিক্ত ইক্যুইটি-নির্ভর করে তোলাটা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। অন্য অ্যাসেট ক্লাসগুলিতেও লগ্নি করুন। প্রয়োজনে পেশাদারের সাহায্য নিন। আর সবসময় মাথায় রাখুন ঝুঁকির বিষয়টি। জানালেন শাক্য রায়চৌধুরি।
ইক্যুইটির (Equity) যে কোন বিকল্প নেই, তা ক্যাপিটাল মার্কেটে অনেকেই বলে থাকেন, বিশ্বাস করেন। হ্যাঁ, শত বাধা সত্বেও ইক্যুইটি-ই অন্যতম প্রধান এক অ্যাসেট ক্লাস থেকে গিয়েছে। আর আজকের বিশ্বে এর প্রয়োজনীয়তাও আছে। ইনভেস্টরের জন্য ডেট, কমোডিটি, রিয়েল এস্টেট বা আর্টের দামও কম নয়–আর এগুলির নিজস্বতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠানোর সুযোগও নেই। তবে, সংক্ষেপে আমি যা বলতে চাই তা হল, নিজের পোর্টফোলিও সবসময় অতিরিক্ত ইক্যুইটি-নির্ভর করবেন না। অন্য যে অ্যাসেট ক্লাসগুলির কথা বললাম, সেখানেও স্বতন্ত্রভাবে লগ্নি করুন। অবশ্য পুরো লগ্নি প্রক্রিয়া হওয়া উচিত নিয়ম-মেনে, আপনার নিজের ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে। সামঞ্জস্য না থাকলে দেখবেন রিটার্নও মনের মতো হচ্ছে না। আর নিজের ইনভেস্টমেন্টের (Investment) লক্ষ্য থেকে ক্রমশ দূরে চলে যাচ্ছেন আপনি।
ইক্যুইটির কথায় ফিরি। ঝুঁকির বিষয়টি না বললেই নয়। কারণ সরাসরি শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগই করুন বা পেশাদার ফান্ড ম্যানেজারের সাহায্যে, ঝুঁকি নিয়েই তা করতে হবে। আর কখনও আপনাকে তা ভুলতে দেবে না মার্কেটের ওঠাপড়া। বলা বাহুল্য, ইক্যুইটির পুরনো রেকর্ড যে ভবিষ্যতেও অটুট থাকবে, তা নয়। অাগে যে শেয়ারে প্রচুর রোজগার করেছেন, তাতেই সামনের বছরে হয়তো ক্ষতি হবে আপনার। যে ফান্ড ম্যানেজার দারুণ পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন গতবার, তিনি হয়তো তলিয়ে যাবেন এবার। এমন নামা-ওঠা তো আকছারই হয়ে চলেছে।
তবুও আমি বলব যে, সাধারণ ইনভেস্টর হিসাবে যদি হাতে যথেষ্ট সময় না থাকে, তাহলে পেশাদারের মাধ্যমে ভাল শেয়ার কিনুন। আর ধারাবাহিকভাবে, সিস্টেম্যাটিক প্ল্যান ব্যবহার করুন। তাতে একত্রে বেশি টাকা তো দিতে হবেই না, বিভিন্ন ভ্যালুয়েশনে আপনার হাতে শেয়ার (বা ফান্ডের ইউনিট) আসবে। তাই গড় দাম কমে আসবে, আখেরে লাভবান হবেন। দু’টি-তিনটে মার্কেট সাইকেল যে বিনিয়োগকারী ইতিমধ্যেই দেখেছেন, তিনি আপনার ‘রোল মডেল’ হতে পারেন। কারণ নিয়মিতভাবে লগ্নি করায় শুধু সাহসের পরিচয় নয় তাতে বুদ্ধিরও প্রয়োগ যথেষ্ট। ব্যাপারটি ভেবে দেখার মতো, তাই না?
ওঠানামা যে কেবল ইক্যুইটিতে, তা কিন্তু নয়। ঋণপত্রের মার্কেটের দিকে তাকান, যেখানেও কোন অ্যাসেট ক্লাসের জন্য কত বরাদ্দ করবেন, তা ঠিক করুন। এই বরাদ্দ কিন্তু এককালীন নয়। আপনার নিজের রিস্ক নেওয়ার ক্ষমতার পরিবর্তনের সঙ্গে বরাদ্দের ভাগাভাগিও বদলাতে হবে। অল্প বয়সে আমরা দেখি ইক্যুইটি জাতীয় ‘রিস্কি’ অ্যাসেটের দিকে পাল্লা ভারি রাখা হয়েছে। অস্বাভাবিক নয়, কিন্তু একনিষ্ঠভাবে যে শুধুমাত্র বয়সের কথা মনে রেখে বেশি ইক্যুইটিই থাকতে হবে, তা কিন্তু ভাবা ঠিক নয়। এই প্রসঙ্গে বাজারে চলা ধারণাগুলি একটু যাচাই করে নিন। অনেক ধরনের ‘মিথ’ (‘অর্ধসত্য’ বলা যেতে পারে)– নানারূপে কানে আসবে, তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করুন।
নতুন অর্থবর্ষের শুরুটা তেমন খারাপ হয়নি। এখনই যদি পরিবর্তনকামী না হই আমরা, তাহলে আর কবে হব? (লেখক বিনিয়োগ উপদেষ্টা)।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.