গতিই জীবন। স্থবিরতা নিপাত যাক। বাজার-অর্থনীতিও সেই একই কথা বলে। হালে বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণের কেন্দ্রে রয়েছে বিজনেস সাইকেল ফান্ড। ভবিষ্যতে এর পারফরম্যান্স আশাব্যঞ্জক হবে, এমনই অভিমত বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু না জেনেই এগোতে গেলে লাভের কড়ি গোনার বদলে পড়তে হতে পারে সমস্যার মুখে। তাই আগ্রহীদের জন্য এই ফান্ডের অ-আ-ক-খ সবিস্তার তুলে ধরলেন নীলাঞ্জন দে।
‘বিজনেস সাইকেল’ থিম নিয়ে একাধিক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা ইদানীং আগ্রহী হয়েছে। কয়েকটি বিজনেস সাইকেল ফান্ডও বাজারে পা রেখেছে। ‘ডাইভারসিফায়েড’ ফান্ডের জগতে তাদের উপস্থিতি এখন সীমিত হলেও ভবিষ্যতে পারফরম্যান্স উন্নতমানের হওয়ার অাশায় ইনভেস্টরদের একাংশ উৎসাহ দেখাচ্ছে। সর্বশেষ সংযোজন Axis Business Cycles Fund-এর NFO, যা এই মুহূর্তে খোলা অাছে প্রাথমিকভাবে সাবস্ক্রিপশনের জন্য।
এই জাতীয় ফান্ডের মূল বক্তব্য কী? এই প্রশ্নের উত্তরে যে বিষয়গুলি না উল্লেখ করলেই নয়–
সেক্টর নির্বিশেষে ফান্ড ম্যানেজার বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক থাকেন এক্ষেত্রে।
সমগ্র অর্থনীতিকেই, ব্যবসার সব ক্ষেত্রেই বিজনেস সাইকেলের আতস কাচের মধ্যে দিয়ে দেখা হয়।
যে ক্ষেত্রে বিজনেস সাইকেল ঊর্ধ্বমুখী বা সহায়ক বলে গণ্য, ফান্ড ম্যানেজার সেখানেই লগ্নি করেন। উদ্দেশ্য, গ্রাহকদের ক্যাপিটাল অ্যাপ্রিশিয়েশন এনে দেওয়া দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের মাধ্যমে।
কোনও বিজনেস সাইকেল ফান্ডেই রিটার্নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় না, বিনিয়োগকারীরা যেন এই কথা জেনে নেন গোড়াতেই। রিস্কের মাত্রা যথেষ্ট উঁচু, যেমন
ইক্যুয়িটি ফান্ডে সব সময়ই থাকে। ইনভেস্টরদের এও বোঝা উচিত যে বিজনেস সাইকেলের ধারণা একটি লগ্নির থিম মাত্র, এর ভিত্তিতে লগ্নি করলে যে আশানুরূপ পারফরম্যান্স পাওয়া যাবেই, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই।
উদাহরণ- সর্বশেষ উদাহরণ হিসাবে (কিন্তু কোনও পক্ষপাত ছাড়া) অ্যাক্সিস বিজনেস সাইকেল ফান্ড-এর NFO নিয়ে দু-চারটি কথা বলা যেতে পারে।
ক্লোজিং-এর তারিখ : ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৩।
বেঞ্চমার্ক ইনডেক্স : Nifty 500 Total Return Index
কোনও মার্কেট ক্যাপ অথবা সেক্টর-নির্ভরতা থাকবে না।
ফান্ড ম্যানেজার অ্যাক্টিভ স্ট্র্যাটেজি মেনে চলবেন, অর্থাৎ ইনডেক্সকে হারিয়ে দিতে চাইবেন যাতে যথাসম্ভব ভাল পারফরম্যান্স আনতে পারেন।
প্রোডাক্ট রিস্কোমিটার : ভেরি হাই রিস্ক
বিজনেস সাইকেল সম্বন্ধে ফান্ড হাউসগুলির মতামত যথেষ্ট ইতিবাচক বলে গণ্য। ব্যবসার সম্প্রসারণ এবং হ্রাস পাওয়া, দুই পরিস্থিতিই লক্ষ্যণীয়। সাধারণ ইনভেস্টরদের জন্য সুযোগ খুঁজে নেন ভাল ফান্ড ম্যানেজার। যখন অর্থনীতিতে বাড়বাড়ন্ত দেখা যায়, তা প্রতিফলিত হয় নানা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাক্টিভিটি, ব্যাঙ্ক, ক্রেডিট বৃদ্ধি ইত্যাদিতে। আবার অন্যদিকে যখন সংকুচিত হয় নানারকম সেক্টর, তখন মন্দার প্রভাব পড়ে, প্রফিটেবিলিটিতেও তার ছাপ পড়ে। নানা কর্পোরেট সংস্থার ব্যবসা কমে আসে, আশানুরূপভাবে বাড়ে না। অর্থাৎ অর্থনীতি এই দুই প্রান্তিক সীমার মধ্যে ঘোরাফেরা করে। বিভিন্ন সেক্টরের বিষয়েও এই কথা প্রযোজ্য।
চালু থাকা বিজনেস সাইকেল ফান্ডগুলির মধ্যে থেকে (বিনা পক্ষপাতে) টাটা মিউচুয়াল ফান্ড-এর প্রোডাক্টটি বেছে নিলাম আমরা। এখানেও বেঞ্চমার্ক ইনডেক্স Nifty 500। ৩রা ফেব্রুয়ারির নেট অ্যাসেট ভ্যালু ছিল ১১.৮১ টাকা। ন্যুনতম ৫,০০০ টাকা এককালীন লগ্নি করা সম্ভব, এবং অ্যাডিশনাল পারচেজ ১,০০০ টাকায় হতে পারে। এই মুহূর্তে এক্সিট লোড আছে, তাই বিনিয়োগকারীরা রিডেম্পশনের সময় এই ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
কী ধরনের স্টক কিনেছেন ফান্ড ম্যানেজার? সঙ্গে চার্টটি দেখুন। প্রধান হোল্ডিংগুলির কথাই কেবল বলা হল।
এছাড়া পোর্টফোলিও প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে Bharti Airtel, Bharat Forge, NTPC, Tata Consultancy ইত্যাদিকে। লার্জ ক্যাপ স্টকেই মূলত ভরসা রেখেছেন ফান্ড ম্যানেজার। প্রায় ৬৫ শতাংশই লার্জ ক্যাপের জন্য বরাদ্দ করেছেন তিনি। প্রায় ২৪ শতাংশ আছে মিড ক্যাপের জন্য। বাকিটায় স্মল ক্যাপ।
সেক্টোরাল অ্যালোকেশন নিয়ে জানতে চান? সঙ্গের চার্ট দেখুন।
বিঃদ্রঃ–সূত্র : Tata Mutual Fund-এর সাম্প্রতিক ফ্যাক্টশিট।
লেখক লগ্নি পরামর্শদাতা
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.