প্রতীকী ছবি
প্রযুক্তি যত উন্নত হচ্ছে, ততই তার সুফল লক্ষিত হচ্ছে বিনিয়োগের জগতে। পার্সোনাল ফিনান্সে যেমন এই প্রযুক্তির কামালেই এসেছে বহু নতুন ট্রেন্ড, তেমনই ভবিষ্যতের কাণ্ডারী যে রিনিউবল এনার্জি আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাই হবে, তা-ও বোঝা যাচ্ছে এখন থেকেই। ‘সঞ্চয়’-কে বিশেষ সাক্ষাৎকারে জানালেন সৌরভ বসু, ওয়েলথ ম্যানেজমেন্ট হেড, টাটা ক্যাপিটাল
১. অত্যাধুনিক এবং উন্নতমানের প্রযুক্তি এখন সহজলভ্য। তরুণ প্রজন্ম বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তির ব্যবহার কীভাবে করতে পারে?
নতুন নতুন প্রযুক্তির প্রয়োগের ব্যবহার যত বাড়ছে, তরুণ প্রজন্ম আরও বেশি বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠছে। বিনিয়োগের ধরনও আগের তুলনায় অনেক বেশি সহজ এবং সর্বজনগ্রাহ্য হয়ে উঠেছে। এখন এক ক্লিকেই আপনার সামনে ভেসে উঠবে একাধিক বিকল্প। যেটা উপযোগী, নিজের আর্থিক উদ্দেশ্য অনুযায়ী বেছে নিন, তারপর রিস্ক বুঝে এগিয়ে চলুন। ২০২৩ পর্যন্ত, ফিনটেক পরিসরে একাধিক ভারতীয় সংস্থা নাম করেছে। তাছাড়া এখন সোশ্যাল মিডিয়া থেকেও প্রচুর মার্কেট ডেটা পাওয়া যায়। বিএসই-র সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, ১৮-২০ বছর বয়োঃসীমার মধ্যে ব্যাঙ্ক-অ্যাকাউন্টের প্রবণতা অনেকটাই বেড়েছে। ২০২১ সালের মার্চ মাসে যা ছিল ৩.৪ মিলিয়ন, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১৬.১ মিলিয়ন।
২. পার্সোনাল ফিনান্সের ক্ষেত্রে সমকালীন বিনিয়োগকারীরা আগামিদিনে কোন কোন ট্রেন্ড বেছে নিতে পারেন?
ভবিষ্যতে কী ঘটবে, তার আভাস দেওয়া সোজা নয়। বিষয়টা চ্যালেঞ্জিং। তবে কিছু কিছু ট্রেন্ডের দিকে ‘কনটেমপোরারি’ ইনভেস্টরদের নজর থাকবে বলে আমার মনে হয়। ডিজিটাল-ফার্স্ট ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস : ব্যাঙ্কিং থেকে ইনভেস্টিং কিংবা পার্সোনাল ফিনান্স ম্যানেজমেন্ট–সবেতেই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার বাড়ছে। বিশেষ করে এআই-নির্ভর চ্যাটবক্স, ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রভৃতি।
সাসটেনেবল অ্যান্ড রিজনেবল ইনভেস্টিং: ইএসজি অর্থাৎ এনভায়রনমেন্টাল, সোশ্যাল অ্যান্ড গভর্ন্যান্স। বেশ কিছু ইএসজি ফান্ডস আজ পৌঁছে গিয়েছে রিটেল লগ্নিকারীদের দোরগোড়ায়। এই নিয়ে আগ্রহও বাড়ছে।
রোবো-অ্যাডভাইজার্স অ্যান্ড অ্যালগোরিদমিক ট্রেডিং: স্বয়ংক্রিয়, সুলভ ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য রোবোটিক উপদেষ্টা পরিষেবার পাশাপাশি নির্ভর করা হচ্ছে অ্যালগোরিদম-ভিত্তিক ট্রেডিং স্ট্র্যাটেজির উপরও।
ফিনান্সিয়াল ওয়েলনেস প্ল্যাটফর্ম: বাজেটিং, সেভিং এবং ডেট ম্যানেজিং-এর জন্য প্রচুর ফিনান্সিয়াল ওয়েলনেস প্ল্যাটফর্ম উঠে আসতে দেখা যাচ্ছে।
ক্রস বর্ডার ইনভেস্টিং: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের উদ্ভবে বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগের সুযোগ বাড়ছে।
রেভলিউশনারি চেঞ্জেস অ্যান্ড ফিনটেক ইন্টিগ্রেশন : ফিনটেক স্টার্টআপগুলোর সংখ্যা বাড়ছে। বিনিয়োগকারীদের নজরও কাড়ছে এরা।
৩. সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রিয় একটি বা দুটি ঝুঁকিপূর্ণ ইনভেস্টমেন্ট ট্রেন্ড ব্যাখ্যা করবেন?
এক হল এআই তথা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স। বর্তমানে এর জনপ্রিয়তা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। স্টেট অফ দ্য এডুকেশন রিপোর্ট ২০২২ অনুসারে এআই ২০.২% কমপাউন্ডেড অ্যানুয়াল গ্রোথ রেট (সিএজিআর) হারে বাড়বে। মনে করা হচ্ছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে ভারতীয় অর্থনীতিতে এআই-এর দৌলতে ৯৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ সংযোজিত হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের জিডিপিতে এআই-এর মাধ্যমে আসবে ৪৫০-৬০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। রিনিউএবল এনার্জি তথা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি। এই সেক্টরের ভবিষ্যতে চাহিদা বৃদ্ধির প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত তার রিনিউএবল এনার্জি ক্যাপাসিটি ৪৫০ গিগাওয়াট পর্যন্ত বৃদ্ধি করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে।
৪. আগামী কিছু বছরে ফিনান্সিয়াল এবং ইনভেস্টমেন্ট ক্ষেত্রে কী ধরনের নজরদারিভিত্তিক নিয়মনীতির প্রয়োগ হতে পারে বলে মনে করেন ?
ইতিমধ্যেই মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর জন্য নানা শ্রেণীতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সেবি। আরবিআই-ও তৎপর হয়েছে ডিজিটাল কারেন্সি (ক্রিপ্টোকারেন্সি) নিয়ে, অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং পরিষেবা, কেওয়াইসি প্রভৃতির মাধ্যমে। তবে রিটেল ইনভেস্টরদের স্বার্থরক্ষায় ইনসিওরেন্স এবং পেনসন খাতে নিয়মনীতিগতভাবে কিছু জরুরি বদল আগামীতে আসতে পারে।
৫. ওয়েলথ ম্যানেজমেন্ট-এর প্রয়োজন আগামীতে আরও বাড়বে এবং স্ট্যান্ডার্ডও উন্নত হবে। ব্যাখ্যা করবেন?
এর মূলে রয়েছে প্রযুক্তির উৎকর্ষ। গ্রাহকরা এখন চান ইউজার-ফ্রেন্ডলি প্ল্যাটফর্ম, উপযোগী অ্যাপস, প্ল্যানিং টুলস এবং যে কোনও সমস্যার রিয়েল টাইম সলিউশন। এআই-এর দৌলতে ডিজিটাল লেনদেন নিয়েও সাধারণ মানুষের ঔৎসুক্য বাড়ছে। রোবো-অ্যাডভাইজরদের পরিষেবাও নিচ্ছেন গ্রাহকরা। সব মিলিয়ে আগামিদিনে ওয়েলথ ম্যানেজমেন্ট-এ বৃদ্ধিতে আশার আলো দেখা যাচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.