ছবি: জয়ন্ত দাস।
ধীমান রায়, কাটোয়া: খড়ের চাল, মাটির দেওয়াল, ছোট একচিলতে ঘর। বসবাসের বাড়ি বলতে এই টুকুই। একটি ঘরের মধ্যেই রান্নার কাজ, সপরিবারে বসবাস। এভাবেই দিনযাপন করেন কাটোয়া ২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি জাগু প্রধান। তিনি সরকারি আবাস যোজনায় অনুদান পাওয়ার যোগ্য। একথা বলেন জাগুদেবীর প্রতিবেশীরাই। তবুও জনপ্রতিনিধি থাকাকালীন তিনি সেই সুযোগ নেবেন না বলে পণ করেছেন। এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও (Panchayat Election) কাটোয়া ২ পঞ্চায়েত সমিতির ৮ নম্বর আসনে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) হয়ে ভোটে লড়ছেন।
কাটোয়া (Katwa) ২ ব্লকের জগদানন্দপুর পঞ্চায়েতের যমুনাপাতাই গ্রামের বাসিন্দা জাগু প্রধান। জগদানন্দপুর ৮ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির আসনে এবারে তিনিই শাসকদলের প্রার্থী। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর থেকেই যথারীতি প্রচারে নেমেছেন তিনি। পরিবার সূত্রে জানা যায়, জাগুদেবীর স্বামী অলোক প্রধানের এসটিকেকে রোডের ধারে একটি গুমটি দোকান রয়েছে। টুকিটাকি স্টেশনারি জিনিসপত্র বিক্রি করেন। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এক ছেলে কৃষ্ণ প্রধান একটি হোটেলে কাজ করেন। স্বামী ও ছেলের আয় দিয়ে কোনওরকমে সংসার চলে। আগে বাড়িতে দুটো গরু ছিল। দুধ বিক্রি করে কিছু আয় হত। তবে মাস সাতেক আগে মেয়ের বিয়ের জন্য ওই গরু (Cows) দুটি বিক্রি করে দিতে হয়েছে বলে জানান জাগুদেবী।
জানা যায়, অলোকবাবুর আগে বাড়ি ছিল কাটোয়ার শ্রীবাটি গ্রামে। অলোকবাবু বরাবরই দক্ষিণপন্থী দলের সমর্থক ছিলেন। ২০০০ সাল নাগাদ শ্রীবাটি গ্রামে সিপিএমের (CPM) লোকজনদের কোপের মুখে পড়ে তিনি যমুনাপাতাই গ্রামে উঠে আসেন। সামান্য কিছু জায়গা কিনে এই মাটির ঘর তৈরি করেছিলেন। তবে বর্তমানে বসতঘরের অবস্থা খারাপ। বর্ষায় জল পড়ে। সেজন্য দলের কয়েকজনই তাদের সরকারি আবাস যোজনায় (Awas Yojona) ঘরের অনুদান নেওয়ার প্রস্তাব দেন।
জাগু দেবী বলেন, “আমার এলাকার কিছু গরিব পরিবারের আবাস যোজনায় ঘর দিতে বাকি আছে। আমি জনপ্রতিনিধি হয়ে তাদের আগে অনুদান নিই কী করে? এখন খড়ের চালের ঘরে ভালই থাকি। আমাদের চেয়ে যাদের আরও বেশি প্রয়োজন তাঁরা আগে পান, এটাই চাই।”
এসটিকেকে রোড থেকে দু’ কিমি দূরে জাগুদেবীর বাড়ি। ২০১৮ সালে তৃণমূল কংগ্রেস তাঁকে পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী করে। তবে তখন তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিলেন। তাঁকে সহ- সভাপতির পদ দেওয়া হয়। সহ-সভাপতি হিসাবে তিনিও সরকারি গাড়ি পেতে পারেন। কিন্তু স্থানীয়রা জানান, পঞ্চায়েত সমিতি অফিসে যাতায়াতের সময় তিনি কোনওদিনই গাড়ি নেননি। রোজ পায়ে হেঁটে সাহেবতলা স্টেশনে যান। সেখান থেকে ট্রেনে চেপে দাঁইহাটে পঞ্চায়েত সমিতির অফিস। এটাই তার দৈনন্দিন রুটিন। পূর্ব বর্ধমান (Purba Burdwan) জেলার তৃণমূলের সভাপতি তথা কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “জাগু প্রধানদের পরিবার মূলত দুস্থ পরিবার। তিনি নিজে অত্যন্ত সৎ ও কর্মঠ। আমাদের দল তাই তাকে এবারেও প্রার্থী করেছে। “
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.