ভারতীয় বক্সিংয়ের স্বপ্ন নিখাত জারিন। ছবি-পিন্টু প্রধান
বিশ্ব বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা। এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জ। এবার পাখির চোখ প্যারিস অলিম্পিক (Paris 2024 Olympics)। দিনরাত এক করে প্রস্তুত হচ্ছেন নিখাত জারিন (Nikhat Zareen)। লক্ষ্য একটাই। প্যারিস থেকে সোনা নিয়ে ফেরা। আর তার পরই প্রিয় অভিনেতা সলমন খানের (Salman Khan) সঙ্গে ডিনার ডেট। সংবাদ প্রতিদিন-এর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে মনের কথা খুলে জানালেন ভারতীয় (India) বক্সিংয়ের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র। শুনলেন সুলয়া সিংহ।
প্রশ্ন: আপাতত যেদিকে আপনার সমস্ত ধ্যান-জ্ঞান, সেই অলিম্পিক দিয়েই সাক্ষাৎকারটা শুরু হোক। প্রস্তুতি কীভাবে নিচ্ছেন? বিশেষ কোনও অনুশীলন করছেন?
নিখাত: প্রস্তুতি তো জোরকদমে চলছে। মন্টেনেগ্রোয় আমাদের আন্তর্জাতিক ক্যাম্প তৈরি হয়েছে। সেখানে বিদেশি তারকাদের সঙ্গে অনুশীলন করলাম। খুব ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছে। ১০ দিনের ছুটি পেয়েছি। তার পরই পাটিয়ালার ক্যাম্পে যোগ দেব। আবার পুরোদমে প্র্যাকটিস শুরু হয়ে যাবে। আর অলিম্পিক এমন একটা প্ল্যাটফর্ম, প্রত্যেক অ্যাথলিটেরই স্বপ্ন থাকে, সেখানে পদক জেতার। আমি প্রতিটা টুর্নামেন্টেই নিজের ১০০ শতাংশ দিই। এখানেও চেষ্টা করব যাতে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারি। অন্য কোনও পদক নয়, আমার লক্ষ্য শুধুই সোনা।
প্রশ্ন: আপনি দেশকে এত পদক এনে দিয়েছেন। বিশ্বমঞ্চে বার বার দেশকে গর্বিত করেছেন। সাফল্যের নানা মুহূর্ত তৈরি হয়েছে। কোন মুহূর্তটা আপনার কাছে স্মরণীয়?
নিখাত: দেশের প্রতিনিধিত্ব করে পদক জেতার প্রতিটা মুহূর্তই আমার কাছে স্পেশাল। তবে এক স্মৃতি, যা কখনও ভুলব না, সেটা হল ২০২৩-এ দিল্লিতে যখন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জিতলাম, তখন ফাইনাল দেখতে বাবা-মা উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সামনে দ্বিতীয়বার বিশ্ব সেরার পদক পাওয়াটা ভীষণ স্পেশাল ছিল। দেশের মাটিতে পরিবারের চোখের সামনে পদক জয়ের আনন্দটা আলাদাই ছিল।
প্রশ্ন: এশিয়ান গেমস কিংবা অলিম্পিক এলেই গোটা দেশ ক্রীড়াপ্রেমী হয়ে ওঠে। সোশাল মিডিয়ায় শুরু হয়ে যায় নানা আলোচনা। নানা মুনি নানা পরামর্শ দেয়। খারাপ পারফরম্যান্স দেখলেই কটাক্ষ শুনতে হয়। কীভাবে সামলান?
নিখাত: হ্যাঁ। অনেকের মতো আমিও সোশাল মিডিয়া ব্যবহার করি। বিশেষ করে ইনস্টাগ্রামে সব ছবি, ভিডিও আমিই পোস্ট করি। কিন্তু কে কী বলছে, তা নিয়ে বিশেষ ভাবি না। আর যে কোনও টুর্নামেন্টের আগে সমস্ত সোশাল অ্যাকাউন্ট থেকে লগ আউট করে যাই। ও সব নিয়ে মাথাই ঘামাই না।
প্রশ্ন: ভারতীয় মহিলা বক্সার বলতেই মেরি কমের নাম চলে আসে? তার পরই আপনার নাম নেওয়া হয়। ওঁর সাফল্য আপনাকে অনুপ্রাণিত করেছে?
নিখাত: অবশ্যই। আমি তো বারবারই বলি যে উনি আমার রোল মডেল। মেরি কম একাধিকবার দেশকে গর্বিত করেছেন। প্রচুর সাফল্য ওঁর ঝুলিতে। ৬ বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। ওঁর রেকর্ড কেউ ভাঙতে পারবে না। আমি ওঁর রেকর্ড ভাঙার চেষ্টাও করব না। কারণ খুব ভালো করেই জানি যে সেটা অসম্ভব। নিজের রেকর্ড গড়ার চেষ্টা করব। আমাদের ক্যাম্পেই ট্রেনিং করতেন মেরি কম। অনেক কিছু শিখেছি। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম সোনা জয়ের পর ইস্তানবুল থেকে ফিরে সবার আগে মেরি কমকেই পদক দেখাতে গিয়েছিলাম। আর এটা ভেবেও ভালো লাগে যে লোকে ওঁর পরই আমার নাম নেয়। আমিও তাই চেষ্টা করি যাতে এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারি।
প্রশ্ন: এত সাফল্যের পরও আপনার পা সেই মাটিতেই রয়েছে। এটাই কি নিখাতের বৈশিষ্ট্য?
নিখাত: সাফল্য তো সাফল্যের মতো আসবে। তাই বলে নিজের চলন-বলন তো বদলে যাবে না। আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের খুব সাধারণ মেয়ে। পরিবারকে অনেক লড়াই করতে দেখেছি। সেই পরিবেশেই মানুষ হয়েছি। তাই কখনওই নিজের শিকড়টা ভুলতে পারব না। আর যদি কখনও একটু অতিরিক্ত হাব-ভাব দেখানোর চেষ্টাও করি, তাহলে আমার বাড়ির লোকই আমায় হাত ধরে নামিয়ে আনবে। দিনের শেষে আপনি কেমন মানুষ, সেটাই আপনার সঙ্গে থেকে যায়।
প্রশ্ন: আপনি তো সলমন খানের ফ্যান। অলিম্পিকে সোনা সলমনের সঙ্গে দেখা করবেন তো?
নিখাত: ছোট থেকেই আমি সলমনের ফ্যান। ওঁর সঙ্গে দেখা হওয়ার স্বপ্নপূরণ হয়েছে। প্যারিসে পদক জিতলে ফিরেই সোজা ওঁর বাড়ি চলে যাব। ডিনার কিংবা লাঞ্চ করতে। ইচ্ছা তো সেরকমই। আসলে যতবারই সলমনের সঙ্গে দেখা হয়, কম মনে হয়।
প্রশ্ন: প্রায় ১২ বছর পর কলকাতা এলেন। এবার কি স্পেশাল কোনও খাবার খাওয়ার ইচ্ছে আছে?
নিখাত: ২০১২ সালে শেষবার এসেছিলাম। এতদিন পর আবার এসে দারুণ লাগছে। আর এখানে এলেই রসগোল্লা খেতে ইচ্ছে করে। আর কী ভালো পাওয়া যায় তো জানি না।
প্রশ্ন: মিষ্টি দই।
নিখাত: ও তাই? তুমি আমায় বলে দিও, সবগুলোই চেখে দেখব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.