সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: নির্বাচনের আগে যখন ভোটের হাওয়া চারপাশে সেই সময়ে অন্যরকম এক গ্রামের হদিশ মিলল দুর্গাপুরে। প্রচার রয়েছে, তবে তাতে কোনও জাঁকজমক নেই। শান্ত পরিবেশে, দলীয় পতাকা ছাড়াই প্রার্থীরা প্রচার চালাচ্ছেন দুর্গাপুরের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের করোঙ্গপাড়ায়।
নির্বাচন মানেই রাজনৈতিক দলের প্রচার। কার পতাকাকে ছাপিয়ে যাবে কোনটা? কতটা জমকালো কোন দলের প্রচার। এসব নিয়ে যখন ব্যস্ত রাজনৈতিক দলের কর্মী সমর্থকরা। সেই সময় অন্যছবি ধরা পড়ল দুর্গাপুরের করোঙ্গাপাড়ায়। গোটা গ্রামে নজরে পড়বে না কোন রাজনৈতিক দলের দেওয়াল লিখন, নেই কোন প্রচার বা মিছিল। যদিও স্থানীয়দের বাড়ি বাড়ি গিয়ে লোকসভা নির্বাচনে সুস্থ ভাবে ভোট দেওয়ার বার্তা দিচ্ছেন প্রার্থীরা। তবে সেখানেও ব্যতিক্রম। কোনও কর্মীদের কাছে নেই কোনও দলীয় পতাকা। যখন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে নির্বাচনী প্রচার তুঙ্গে। কিন্তু করোঙ্গপাড়া দেখলে তা বোঝার উপায় নেই। কারণ ভোটের কোনও উত্তাপই নেই এই গ্রামে। এক কথায় বলা যেতেই পারে, রাজনীতির প্রবেশ নিষিদ্ধ সেখানে। এটাই গ্রামের পরম্পরা। আর যুগ যুগ ধরে পূর্ব পুরুষের এই পরম্পরাকে ধরে রেখেছে বর্তমান প্রজন্মও। রাজনৈতিক দলগুলিও গ্রামবাসীদের এই মনোভাবকে সম্মান জানিয়ে গ্রামের আচার মেনেই দলীয় প্রচারও সাড়েন।
প্রায় তিরিশ হাজার মানুষের বাস এই গ্রামে। সচ্ছল এই গ্রামের মানুষেরা এই আচারে এতটাই বিশ্বাসী যে তারা বরাবর কমানা করেন যেন এই পরম্পরাই বজায় থাকে গ্রামে। ‘করোঙ্গপাড়া গ্রাম উন্নয়ন সিমিতি’র সম্পাদক সূর্য কেশ বলেন, “এই গ্রামের এটাই রীতি, এটাই নীতি। রাজনীতির প্রবেশে গ্রামের মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি হতে পারে। প্রতিবেশিদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি হতে পারে। তাই রাজনীতির প্রবেশ নেই আমাদের গ্রামে। কয়েকযুগ ধরে এই রীতি চলছে ।”
তাই বলে কী রাজনৈতিকভাবে সচেতন নয় এই গ্রাম? তা কিন্তু নয়। এই গ্রাম থেকেই উঠে এসেছে দীর্ঘদিনের পোড়খাওয়া রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বরা। বিধায়ক বিশ্বনাথ পাড়িয়াল এই গ্রামেরই মানুষ। এই গ্রামেই বাস তাঁর। তিনিও এই পরম্পরাকে সমান মর্যাদা দেন এখনও। তিনি জানান, “আমার নিজের ভোটের প্রচারেও আমি এই আমার গ্রামে এই ট্র্যাডিশানকে ভাঙতে দিইনি।’ বর্তমানে ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেবব্রত সাঁইও এই গ্রামেরই দীর্ঘদিনের বাসিন্দা। তিনিও গ্রামের এই মনোভাবকে আঘাত করতে চান না। তিনি জানান,“আমার নিজের রাজনৈতিক পরিচয় যাই থাকুক না কেন গ্রামে যখন থাকি সেই পরিচয় মুছে যায়। এখানে আমরা সবাই এক। আমরা চাই ধারবাহিকভাবেই এই ট্র্যাডিশন যেন বেঁচে থাকে।” বছরের পর বছর প্রতিটা ভোটের মুখে যেন এমনই শান্তি বিরাজ করে দুর্গাপুরের করোঙ্গপাড়ায়, এমনটাই আশা গ্রামবাসীদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.