ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: নোটা প্রতীকে কলকাতা ও হাওড়ার ভোটে ‘লড়াই’-এ নামছেন গঙ্গার দুই পাড়ের শহরের পুরনো বাড়ির মালিকরা।
কলকাতা পুরসভার ইউনিট এরিয়া কর পদ্ধতির মতো সমহারে বাড়ি ভাড়া চান পুরনো বাড়ির মালিকরা। তার জন্য প্রয়োজন ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রেমিসেস টেন্যান্সি অ্যাক্টের সংশোধন। তাদের সংগঠন জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি অফ হাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের অভিযোগ, দীর্ঘদিন সরকার এই আইন সংশোধনের দাবি মানেনি। তাই ভোট তাঁরা বয়কট করবেন না। নষ্টও করবেন না। কিন্তু কোনও রাজনৈতিক দলকে তাঁদের একটা ভোট দেবেন না। ভোট দেবেন নোটায়।
পুরসভার ইউনিট এরিয়া কর পদ্ধতির সঙ্গে ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রেমিসেস টেন্যান্সি অ্যাক্টের বিরোধ কোথায়? ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রেমিসেস টেন্যান্সি অ্যাক্ট অনুযায়ী রাজ্যজুড়ে এক হিসাবে বাড়ি ভাড়া নির্ধারিত হয়। ভাড়া নেওয়া হয় রানিং বর্গ মিটারের হিসাবে। সংগঠনের আহ্বায়ক সুকুমার রক্ষিত উদাহরণ দিচ্ছেন, রেলের টিকিটের ভাড়া হল রানিং। শিয়ালদহ থেকে দমদম যা ভাড়া, শিয়ালদহ থেকে সোদপুরও একই ভাড়া। নির্দিষ্ট দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া নয়। ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রেমিসেস টেন্যান্সি অ্যাক্ট অনুযায়ী ভাড়া নেওয়ার পদ্ধিতও একই। ১ থেকে ২৫ বর্গমিটার পর্যন্ত একই ভাড়া। এটাই রানিং বর্গ মিটারের হিসাব। অথচ, বাড়ির মালিকদের কর দিতে হয় বর্গফুটের হিসাবে। ১ বর্গমিটার যদি ১০ বর্গফুটের সমান হয়, তবে ২৫ বর্গমিটার মাপের ঘরের ভাড়ার বদলে সেই একই ঘরের কর দিতে হচ্ছে ২৫০ বর্গফুটের হিসাবে। সুকুমারবাবুর প্রশ্ন, বর্গমিটারের হিসাবে ভাড়া পেয়ে কোন যুক্তিতে আমরা বর্গফুটের ভাড়া দেব? তিনি বলছেন, “মান্ধাতা আমলের সেই আইন অনুযায়ী আমরা ভাড়া পাচ্ছি নূ্যনতম। আর কর দিচ্ছি আধুনিক নিয়মে। এই দ্বিচারিতা কেন থাকবে? আমরা কি তবে নিজেদের পকেট থেকে কর দেব? এত বড় সব বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণই বা করব কীভাবে? আমরা তো ভাতে মারা পড়ছি।” সংগঠনের সদস্যদের হিসাব অনুযায়ী, কলকাতা ও হাওড়া মিলিয়ে এই মুহূর্তে পুরনো বাড়ির মালিক রয়েছেন ১৫ হাজার মতো। একটি বাড়িতে চার বা পাঁচজন সদস্যের হিসাব অনুযায়ী ভোটারের সংখ্যা ৬০ হাজার।
সুকুমারবাবুর দাবি, “আমাদের সংগঠনের সমর্থক-দরদী মিলিয়ে সংখ্যাটা আরও বেশি। সাকুল্যে যাদের নোটায় ভোটার সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে দেড় থেকে লক্ষে।” হিসাব অনুযায়ী যা কোনও একটি কেন্দ্রের মোট ভোটের প্রায় ৩ থেকে ৪ শতাংশ। সংগঠনের কর্তাদের কথায়, এই শতাংশের হেরফেরই ভোটে হার-জিত নির্ধারিত করে। হাওড়া ও কলকাতা মিলিয়ে এত সংখ্যক ভোট নোটায় যাবে বলে দাবি তাঁর। আগামিকাল, সোমবার তারিখ অন্য একাধিক জেলার সঙ্গে ভোট রয়েছে হাওড়ার। পরে ভোট রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ, দুই কলকাতার। এই দুই শহরের ভোটেই নোটায় ছাপ দেবে পুরনো বাড়ির মালিকদের এই সংগঠন। এত ভোট নোটায় পড়লে তার যথেষ্ট প্রভাব নির্বাচন পড়বে বলে দাবি তাদের। একই অভিযোগে সব রাজনৈতিক দলের কাছে তাদের বাড়ির দেওয়াল না লেখার আবেদন জানিয়েছেন বাড়ির মালিকরা। তাতেই জানানো হয়েছে নোটায় ভোট দেওয়ার আবদেন। সুকুমারবাবু বলছেন, “বাড়িভাড়া না বাড়ানোর দাবি আমরা তুলছি দীর্ঘদিন ধরে। অথচ কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। ইউনিট এরিয়া ভিত্তিক কর পদ্ধতি চালু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বাড়ি ভাড়া সঠিকভাবে না পেয়ে আমাদের কোটি কোটি টাকা আটকে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.