ছবি: প্রতীকী।
টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: আজও সাপে-মানুষে সহবাস! বাঁকুড়ার (Bankura) কমলাডাঙা গ্রামে গেলে চমকে যেতে হয়। গ্রামে ঢুকলেই মুখে মুখে শোনা যায় – ‘মাগো বিষহরি, তোমায় স্মরি।’ বাঁকুড়া ২ নম্বর ব্লকের এই গ্রামে একাধিক বেদে পরিবার বাস করেন। সাপের খেলা দেখিয়ে আজও সংসারের নোঙর ঠেলেন তাঁরা। এই গ্রামের কচিকাঁচারাও মাটির তলা থেকে অনায়াসেই বিষধর সাপ (Snake) ধরে আনতে পটু। যা দেখলে তাজ্জব হয়ে যান বহিরাগতরা।
বাস্তবে সাপ সামনে এলে আতঙ্কেই প্রাণপাত হওয়ার জোগাড় হয় সকলের। মাথা ঠান্ডা রেখে সাহসের সঙ্গে তার মোকাবিলা করা মুশকিল। কিন্তু পশ্চিমাঞ্চলের বাঁকুড়া জেলার এই গ্রামের মানুষজন যেন সাপের সঙ্গে সহবাসই (Stay together) করেন। অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই সত্যি! ভয় তো দূর, কার্যত সাপকে সঙ্গে নিয়েই দিন গুজরান করেন এই গ্রামের মানুষজন।
২০১১ সালের আদম সুমারি অনুযায়ী, বাঁকুড়ার এই গ্রামে মোট ২০০ পরিবারের বাস। জনসংখ্যা প্রায় তিন হাজার। শুষ্ক জলবায়ুর (Dry Weather)কারণে বিভিন্ন প্রজাতির সাপ বসবাসের জন্য আদর্শ এই গ্রাম। তাই কেউটে, চন্দ্রবোড়া, শাখামুটি–সহ নানা প্রজাতির বিষধর সাপের বাস এখানে। সাপ নিয়েই সারাদিন কেটে যায় গ্রামের বাসিন্দাদের। জানা গিয়েছে, গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই সাপেদের থাকার আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। সাপ ইচ্ছামতো বিশ্রাম নেয় ঘরে ঢুকে। আবার ইচ্ছা হলেই বেরিয়ে যায়। সবসময় সাপের জন্য খাবার মজুত রাখা হয়।
তবে এই গ্রামেও ক্রমেই কমতে শুরু করেছে সাপ ধরার উৎসাহ। গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে প্রবীণ রবি সরবেদিয়া জানাচ্ছেন, ”আজ প্রায় চল্লিশ বছর ধরে সাপের খেলা দেখিয়ে সংসার চালাচ্ছি। কিন্তু ক্রমেই এই খেলার প্রতি মানুষের আকর্ষণ কমছে। তাই সাপের খেলা দেখিয়ে আর সংসার চলছে না। এই গ্রামেই রয়েছে একটি সিদ্ধেশ্বরের মন্দির।” স্থানীয়দের মতে, এই মন্দিরেই নাকি প্রতিবার সাপে কাটা রোগীর প্রাণ ফিরিয়ে দেয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের এই যুক্তিতে বিতর্ক রয়েছে বহু।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাপ কখনই পোষ মানে না। কিন্তু কীভাবে,কবে থেকে বাঁকুড়ার এই কমলাডাঙা গ্রামের বাসিন্দারা সাপের সঙ্গে সহাবস্থান করছেন, তা কারও জানা নেই। তবে বেদেদের গ্রাম হিসাবে এই গ্রামের পরিচয় বহুদিনের। ডিএফও উমর ইমাম বলছেন, সাপ ধরা আজ আইনত দণ্ডনীয়। কিন্তু বাঁকুড়ার এই গ্রামে সাপ–মানুষের সহাবস্থান নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.