পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি ব্লকের অযোধ্যা পাহাড়ের কালহা গ্রাম। নিজস্ব চিত্র।
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: গ্রামে মড়ক। পর পর মৃত্যু। তার পর আস্ত একটা গ্রাম খালি। দীর্ঘদিন পর আবার নতুন করে জনবসতি। তার পর আত্মহত্যা। আবার ঘরছাড়া কয়েকটি পরিবার। আর এবার প্রায় পর পর দুই ছবি পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি ব্লকের অযোধ্যা পাহাড়ের কালহাতে!
এক, গ্রামের নাম লেখা সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো স্তম্ভটা হঠাৎ-ই উধাও। মহালয়ার পরেও পর্যটকদের চোখে পড়েছিল কালহা লেখা সিমেন্টের সেই বোর্ড। কিন্তু এখন আর নেই। ভাঙল কে? উত্তর নেই পাহাড়ি ওই জনপদের। ভেঙে যাওয়ার পর তার চিহ্ন থাকে। কিন্তু সেইসবও গ্রামের মানুষজন কেউ দেখতে পাননি।
দুই, গ্রামের প্রায় শেষ প্রান্তে একটা ভাঙা ঘরের পাশে বৈদ্যুতিক স্তম্ভের মাঝ বরাবর নীল মোটা দড়ি দিয়ে বাঁধা ভাঙা আয়না। এমন ভাবে ভাঙা আয়না কেন বেঁধে রাখা হয়েছে? নিরুত্তর কালহা!
আজ থেকে প্রায় ৫ দশক আগের কথা। কোনও রোগ-অসুখে গ্রামে দেখা দিয়েছিল মড়ক। একের পর এক মৃত্যুতে আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল গ্রামে। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যে মাস ছয়েকের মধ্যেই আস্ত একটা গ্রাম জনশূন্য হয়ে যায়। লাগোয়া খেড়ঘুটু, দুমদুমি, অযোধ্যা হিলটপ সহ এদিক-সেদিক ছড়িয়ে যায় ওই গ্রামের পরিবারগুলি। তার পর দীর্ঘদিন ওই গ্রামে কেউ পা রাখেননি। বছরের পর বছর ধরে ওই গ্রাম ছিল জনশূন্য। কয়েক যুগ পরে আবার নতুন করে জনবসতি গড়ে উঠেছে। এমনকি তৈরি হয়েছে পর্যটক আবাসও। কিন্তু একটা গা ছমছমে ভাব যেন রয়েই গিয়েছে।
গ্রামে পা রাখলেই কেমন যেন একটা ভয় ভয় ভাব! বিকালের পর আতঙ্কটা যেন চেপে বসে। কিন্ত এইসব ভূত আতঙ্ক মানতে নারাজ গ্রামের যুবক থেকে তরুণীরা। নারাজ স্কুল পড়ুয়ারা। তবে বয়স্ক মানুষজন জানান, এই গ্রামে স্রেফ ভূত আতঙ্কে একেবারে জনশূন্য হয়ে গিয়েছিল। এই কালহা-র বাসিন্দা সত্তরোর্ধ পরমেশ্বর মাণ্ডি বলেন, “সে তো অনেকদিন আগেকার কথা। কম করে ৫০ বছর হবে। আমাদের এই গ্রাম ভূতের আতঙ্কে খালি হয়ে গিয়েছিল। মনে হয়, কোনও রোগ-অসুখে গ্রামের একের পর এক মানুষ মারা যাচ্ছিলেন। আর সেই থেকেই ভূত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গ্রাম একেবারে খালি হয়ে যায়। যে যেখানে পারে প্রাণ নিয়ে পালায়। এমন কথাই শুনেছি। ওই ঘটনার বহুদিন পর আমরা আড়শা ব্লকের সিরকাবাদে থেকে এখানে আসি। যজ্ঞ-শান্তি করে কোনওভাবে এক চিলতে ঘর বানিয়ে আছি।” কথা শেষ না করতেই হনহন করে এগিয়ে যান তিনি। অনেক বার ডাকলেও আর পেছন ঘুরে তাকান না। গ্রামের ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা সোমবারি মাণ্ডি বলেন, “তখন মা-বাবার সঙ্গে আমরাও গ্রাম ছেড়েছিলাম। তার পরে কোথায় কোথায় যে ছিলাম মনে করতে পারছি না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.