সৌরভ মাজি, বর্ধমান: নিজে পরিবেশপ্রেমী। বাড়িতেও গাছের বাহার। পরিবেশ সচেতনতার বার্তা দিতে নিজের বাহনেও রেখেছেন ফুলের টব। তাতে পাতাবাহারি গাছও রেখেছেন। যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছানোর মাঝেই চলছে গাছ নিয়ে গল্প করেন। উদ্দেশ্য যাত্রীদের গাছ সম্পর্কে সচেতন করা। গাছকে ভালবাসতে শেখানো। এহেন উদ্যোগে ক্রমশই জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন বর্ধমানের টোটোচালক গৌতম দে৷
বর্ধমান শহরে টোটোর দৌরাত্ম্য নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই৷ বেপরোয়া টোটোর দাপটে অনেকেরই প্রাণ ওষ্ঠাগত৷ অনেকেই কুকথা বলেন টোটোচালকদের। কিন্তু বর্ধমানের ইছলাবাদের চাঁদমারি এলাকার টোটোচালক গৌতম দে যেন তাঁদের মধ্যে ব্যতিক্রম। কুকথার মাঝেও নীরবে পরিবেশ প্রেমের বার্তা দিয়ে চলেছেন তিনি। কয়েকদিন আগে শহরের রাখাল পীরতলা এলাকায় জিটি রোডে টোটো নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন গৌতম। টোটোর ছাউনির নীচে ছোট ছোট দু’টি টব। তাতে রয়েছে দু’টি গাছও। আগে টোটোজুড়ে মানিপ্ল্যান্ট লাগাতেন৷ কিন্তু অনেক যাত্রীই গাছের পাতা ছিঁড়ে নষ্ট করেন৷ তাই বাধ্য হয়ে আর মানি প্ল্যান্ট লাগাননা তিনি৷ তার পরিবর্তে টোটোতে টবের ভিতর গাছ লাগানোর পরিকল্পনা৷ যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার মাঝে মাঝেই গাছের যত্ন নেন তিনি৷ জল, সারের মাধ্যমে চলে গাছের পরিচর্যা৷
কিন্তু কেন এমন টোটোর মধ্যে গাছ লাগানোর অভ্যাস তাঁর? ব্যতিক্রমী ওই টোটোচালক বলেন, “কর্মব্যস্ততা আবার তার সঙ্গে বাড়িতে জায়গা না থাকার ফলে গাছ লাগানো প্রায় সম্ভব হয় না অনেকেরই৷ কিন্তু পরিবেশকে বাঁচাতে গাছের জুড়ি মেলা ভার৷ তাই পরিবেশ সচেতনতায় এমন উদ্যোগ নিয়েছি আমি৷’’ তাঁর কথায়, ‘‘কেউ সাউন্ড সিস্টেম দিয়ে আবার কেউ কৃত্রিম ফুল দিয়ে টোটো সাজান৷ কিন্তু আমি মনে করি, গাছ থাকতে টোটো সাজানোর জন্য অন্য কিছু আর দরকার পড়ে না৷’’ পরিবেশপ্রেমী এই টোটোচালক যাত্রীমহলে যথেষ্ট জনপ্রিয়৷ টোটোয় গাছের চারা লাগিয়ে সৌন্দর্য বৃদ্ধি খুবই ভাল উদ্যোগ বলেই জানান স্থানীয় এক বাসিন্দা৷ তিনি আরও বলেন, ‘‘গাছ দু’টি হয়তো খুব বড় নয়। কিন্তু এইভাবে সকলেই যদি এগিয়ে আসেন তাহলে দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব৷’’ রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষক অরূপকুমার চৌধুরিও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন৷ তাঁর কথায়, সকলের মধ্যেই সচেতনতা প্রয়োজন। উনিও সেটাই করছেন। খুবই ভাল উদ্যোগ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.