টিটুন মল্লিক,বাঁকুড়া: অচেনা স্পর্শ খুব ভালভাবে টের পায় পোষ্যেরা। তাই গায়ে অন্য কোনও ছোঁয়া পেলেই স্বাভাবিক প্রবৃত্তিতে ডেকে ওঠে। কিন্তু সেই ডাক বন্ধ করে নির্বিঘ্নে চুরি করে নিয়ে যাওয়ার রাস্তা প্রশস্ত করতে অভিনব কাজ করে বসল গরু চোরের দল। রাতের আঁধারে গোয়ালে ঢুকে গরুদের জিভে নুন আর সরষের তেলের ‘চাটনি’র স্বাদ দিল তারা। এরপর চারটি গরু নিয়ে চম্পট। সকালে বিষয়টি চোখে পড়তে থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন মালিক। তদন্তে নেমে গোয়াল থেকে সহজে গরু চুরির কৌশল শুনে তাজ্জব পুলিশ কর্তারাও।
ঘটনা বাঁকুড়ার বেলবনির। শুক্রবার রাতে দেবীপ্রসাদ সেন নামে এখানকার এক বাসিন্দা বাঁকুড়া সদর থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন যে রাতে তাঁর গোয়াল থেকে চারটি গরু উধাও হয়ে গিয়েছে। কেউ বা কারা তাদের চুরি করে নিয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি ওই এলাকায় গরু-ছাগল চুরি বেড়েছে। তাতেই চিন্তিত হয়ে মালিকদের দাবি, পুলিশ যেন গৃহপালিত পশু চুরির কিনারা করে। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ তদন্তে নামে। জানা যায়, গত এক বছরের গোটা জেলায় হাজারেরও বেশি গরু-ছাগল চুরি হয়েছে। কালোবাজারে ছাগলের দাম ৩০০০ থেকে ৫০০০ টাকা আর গরু বিক্রি ১৫০০০ থেকে ২০০০০ টাকায়। যা স্বাভাবিক দামের চেয়ে অনেকটাই বেশি।
এই তদন্ত চলাকালীন চুরির পদ্ধতিও জানতে পারেন তদন্তকারীরা। আর তাতেই তাঁদের চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক জঙ্গলমহলে কর্মরত এক সাব ইন্সপেক্টর জানাচ্ছেন, ছাগল চুরি হয় দিনের বেলায়, মাঠ থেকে। বড় গাড়ি ভাড়া নিয়ে মওকা বুঝে দাঁড় করিয়ে গোটা তিনেক ছাগলকে তুলে নেওয়া হয়। সেটা তুলনায় সহজ কাজ। আর রাতে গৃহস্থের গোয়াল থেকে গরু সরানোর কাজ একটু কঠিন। গরুর ‘হাম্বা’ ডাকে বিষয়টি জানাজানি হতে পারে। তাই চোরদের দাওয়াই – নুন-সরষের তেলের ‘চাটনি’। গোয়ালে ঢুকে গরুর জিভ টেনে ধরে ওই মিশ্রণটি দিয়ে দেওয়া মানেই গরুর ডাক বন্ধ।
প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কর্তাদের কাছে জানা গেল, সর্ষের তেল আর নুনের মিশ্রণ গরুর জিভে ঘষে দিলে সাময়িকভাবে তা অসাড় হয়ে যায়। ডাকাডাকি করার ক্ষমতাও চলে যায়। আর সেই সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছে গরুচোরের দল। চুপিসাড়ে গরু চুরির এই রহস্য নিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ বাঁকুড়া পুলিশের। এভাবে নিরীহ গৃহপালিত পশুর উপর কার্যত নির্যাতন করে চুরির বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি জেলা পুলিশ সুপারের। তবে বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে মালিকদের। কীভাবে নুন-সরষের তেলের হাত থেকে পোষ্যদের রক্ষা করা যায়, তার পথ খুঁজতে ব্যস্ত মালিকরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.