সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জলের নিচে বাসস্থান৷ গল্প হলেও সত্যি৷ বছরের ১১টা মাস জলের নিচেই আত্মগোপন করে থাকে৷ মাত্র একবার জল থেকে ডাঙায় উঠে আসে গোটা গ্রাম৷ আর সেসময় সেখানে একেবারে উৎসব৷ জলজীবন ছেড়ে আসার উদযাপন৷
কী ভাবছেন? এমন গ্রাম রূপকথার দেশে আছে না কি? না, এই গ্রাম আছে এই দেশেতেই৷ গোয়ার কুরডি গ্রাম৷ সকলের অলক্ষ্যে জলের নিচে গড়ে উঠেছে৷ পশ্চিমঘাট পর্বতমালার দুটি পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে বয়ে গিয়েছে সালাউলিম নদী৷ গোয়ার জনজীবনে যার ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ৷ সেই নদীর ধারেই গড়ে উঠেছিল কুরডি গ্রাম৷ ৩ হাজার মানুষ শস্যশ্যামলা জমি, কাজু, নারকেল, আম ফলিয়ে বেশ ভালই দিন কাটাচ্ছিলেন৷ হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান একত্রে সকলে থাকতেন৷ কুরডিতে ছিল মন্দির, মসজিদ, একটি ছোট চ্যাপেলও৷
সেসব ছবি অচিরেই বদলে গেল৷ ১৯৮৬ সাল থেকে গ্রামবাসীরা ইঙ্গিত পাচ্ছিলেন, তাঁদের বিপদ ঘনিয়ে আসছে৷ রাজ্যের প্রথম বাঁধ তৈরি হয় এখানে৷ স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, প্রথম মুখ্যমন্ত্রী দয়ানন্দ বান্দোড়করই তাঁদের বাঁধের কথা বলেন৷ তিনি বুঝিয়েছিলেন, বাঁধটি তৈরি হলে, সকলের সুবিধা হবে৷ কিন্তু বাঁধ তৈরির পরই সকলে বুঝতে পারেন, কী বিপদ এসেছে তাঁদের জীবনে৷ এরপর থেকেই নদীর জলে ডুবে যেতে শুরু করে কুরডি গ্রাম৷ ধীরে ধীরে গোটাটাই চলে যায় জলের তলায়৷ গ্রাম ছাড়তে শুরু করেন বাসিন্দারা৷ খাঁ খাঁ চেহারায় একলা জলের নিচে দিনযপান করে কুরডি৷
কিন্তু বছরে একবার, মে মাসে জল থেকে ফের জেগে ওঠে কুরডি গ্রাম৷ কারণ, এই সময়ে জলের গভীরতা একেবারে কমে যায়৷ আর গ্রামের মাটি দেখতে পেলেই আশেপাশে থাকা বাসিন্দারা ছুটে আসেন নিজভূমে৷ চোখে পড়ে শুকিয়ে যাওয়া মাটি, গাছের শিকড়ের টুকরো, ভাঙাচোরা বাড়ি, পড়ে থাকা রান্নার সামগ্রী – সবই আছে ধ্বংসাবশেষ হয়ে৷ এসব দেখেই আনন্দিত হন তাঁরা৷ একদা স্মৃতিকে আগলেই মেতে ওঠেন উৎসবে৷ পড়ে থাকা পাথর, শিলায় খোদাই করে রাখেন নিজেদের নাম৷ কেউ কেউ নিজেদের বাড়ির দরজা খুলে ঢুকেও পড়েন, ঘুরে দেখে আসেন কেমন আছে সেসব৷ প্রতি বছর এই একটা সময়েই কুরডি জীবন্ত হয়ে ওঠে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.