Advertisement
Advertisement

Breaking News

Area 51

আজও রহস্যে মোড়া আমেরিকার এরিয়া ৫১! এলিয়েনদের গল্পের আড়ালে লুকিয়ে কোন সত্যি?

কেন এই জায়গাটার অস্তিত্ব দীর্ঘদিন স্বীকারই করেনি সিআইএ?

The real story behind the myth of Area 51 | Sangbad Pratidin
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:December 11, 2020 8:13 pm
  • Updated:April 17, 2021 9:47 pm  

বিশ্বদীপ দে: মিথ ও মিথ্যে। খুব কাছাকাছি গা ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকে এই দু’টো শব্দ। এতটাই কাছাকাছি যে আলাদা করা শক্ত হয়ে ওঠে। আমেরিকার এরিয়া ৫১ (Area 51) তেমনই এক নাম, যাকে ঘিরে এই দুই শব্দের দাপাদাপি গত কয়েক দশক ধরেই চলছে। কেউ বলেন, এখানে ভিনগ্রহীদের (Alien) আস্তানা। আবার কেউ বিশ্বাস করেন, ১৯৬৯ সালে আমেরিকার (US) ‘মিথ্যে’ চন্দ্রাভিযানের পুরোটাই শ্যুট করা হয়েছিল এখানে! বলাই বাহুল্য, সবটাই ‘নাকি’।

কিন্তু এসব যদি নিছকই মনগড়া কাহিনি হয়, তাহলে আসল সত্যিটা কী? কেন বছরের পর বছর ধরে আশ্চর্য রহস্যে মোড়া পশ্চিম আমেরিকার নেভাদা মরুভূমির এই অঞ্চলটি? কেন মার্কিন সেনাবাহিনী বরাবরই চেষ্টা করে এসেছে জায়গাটাকে সকলের অগোচরে রাখতে! সবে মাত্র ২০১৩ সালে সিআইএ স্বীকার করেছে এর অস্তিত্বের কথা। কেন?

Advertisement

[আরও পড়ুন: লকডাউনে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়ার জের! মাথা ঠান্ডা করতে ৪৫০ কিলোমিটার হাঁটলেন ব্যক্তি]

Alien

উত্তর খুঁজতে পিছিয়ে যাওয়া যাক কয়েক দশক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে রুপো ও শিসার খনি ছিল গ্রুম লেকের নিকটবর্তী এই অঞ্চল। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরই পাণ্ডববর্জিত জায়গাটার দখল নেয় মার্কিন সেনা। উদ্দেশ্য‌, মূলত গোপন সামরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা। এখানে বলে রাখা যাক, এই গ্রুম লেক আদৌ কোনও হ্রদ নয়। মরুভুমির মাঝখানে এটা একটা সমতল ভূমি। আর সমতল বলেই একে অনায়াসে বিমানের রানওয়ে হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

যাই হোক, জায়গাটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে রাশিয়ার সঙ্গে আমেরিকার ‘কোল্ড ওয়ার’-এর (Cold War) পরিস্থিতি চরমে উঠলে। ১৯৫৫ সালে এর নাম দেওয়া হয় এরিয়া ৫১। এখানেই তৈরি হয়েছিল ইউ-২ বিমান। দাবি ছিল, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭০ হাজার ফুট উঁচুতে উড়তে পারা ওই বিমান ফাঁকি দেবে রাশিয়াকে। সোভিয়েত রাডার থেকে ক্ষেপণাস্ত্র, সবাইকে। যদিও সেই ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে ১৯৬০ সালেই একটি ইউ-২ বিমানকে গুলি করে নামায় সোভিয়েত রাশিয়া।

[আরও পড়ুন: আশীর্বাদ স্বরূপ কৃষকদের জন্য অর্থ সাহায্য করুন, বিয়েতে অতিথিদের কাছে আবেদন বর-কনের]

এরপর এখানে তৈরি হয় এ-১২ বিমান। মাটি থেকে ৯০ হাজার ফুট উঁচুতে ২২০০ কিমি প্রতি ঘণ্টার দুরন্ত গতিতে ওড়ার ফলে কোনও রাডারের সাধ্য রইল না এর টিকিটিরও আন্দাজ পাওয়া! পুরো আমেরিকাকে চক্কর লাগাতে এই বিমানের লাগত ৭০ মিন‌িট। আর এই ভয়ানক দ্রুত গতিই তাকে করে তুলল ‘ইউএফও’! সাংবাদিক অ্যানি জেকবসেন তাঁর বইয়ে দাবি করেছেন, ‘‘টাইটানিয়ামের শরীর আর ওই বুলেটের মতো গতি! সূর্যের আলোয় বিমানটির বিচ্ছুরণ দেখলে যে কারওই মনে হবে ওটা ভিনগ্রহীদের যান।’’

A-12

তবে এরও ঢের আগে ১৯৪৭ সালে রোসওয়েল বিমান দুর্ঘটনার পর থেকেই এই জায়গা ঘিরে ভিনগ্রহীদের আনাগোনার জল্পনার শুরুয়াৎ। বলা হয়েছিল, ওটা বিমান নয়। ইউএফও। যেটা চালাচ্ছিল নাৎসিদের গবেষণাগারে তৈরি এক অদ্ভুতদর্শন প্রাণী, যার চেহারা মানুষের সঙ্গে সামান্যই মেলে! কিন্তু সিআইএ এই বিমান নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার পর থেকেই গল্পের ইউএফও মহাকাশে উঠতে থাকে ঘনঘন।

এবং রবার্ট ‌লেজার। ১৯৮৯ সালে তিনি নিজেকে দাবি করেন এরিয়া ৫১-এর প্রাক্তন কর্মী হিসেবে। লাস ভেগাস নিউজ স্টেশনকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তিনি ওখানে ভিনগ্রহীদের মহাকাশযান দেখেছেন। এবং সেই যানের প্রযুক্তির নকল করে আমেরিকা অত্যাধুনিক বিমান বানানোর চেষ্টা করে এই গোপন ঘাঁটিতে। আরও কত কী!

UFO

ব্যাস! এতেই একেবারে আগুনে ঘি পড়ে যায়। এরিয়া ৫১ ঘিরে নতুন করে জল্পনার বান ডাকে। যদিও পরে দেখা যায়, ভদ্রলোক  ম্যাসাচুসেটস কিংবা ক্যালিফোর্নিয়ার যে কলেজগুলিতে পড়ার কথা বলেছেন সেখানে তাঁর নামই নেই! ফলে ভদ্রলোক যে টেনিদা বা ঘনাদার আত্মীয় হতেই পারেন, এমন সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করে। কিন্তু তাতে আম পাবলিকের থোড়াই কেয়ার। তাদের তো চাই চায়ের কাপে ধোঁয়া ওড়ানো গপ্পোগাছা।

তারই আরেকটা অংশ হল চাঁদে নামার মিথ্যে গল্পের পটভূমি হিসেবে এই জায়গাকে বেছে নেওয়ার মিথ। রাশিয়াকে মাত দিতেই নাকি মার্কিন বিজ্ঞানীরা ষড়যন্ত্র করেছিলেন। আদৌ চাঁদে যাননি নিল আর্মস্ট্রংরা। এরিয়া ৫১-এর জমিই হয়ে উঠেছিল নকল চাঁদের মাটি! যদিও ইউএফও-র মতো এই দাবিও নস্যাৎ করে দিয়েছে আমেরিকা। NASA নানা যুক্তির সাহায্যে প্রমাণ করেছে চাঁদে সত্যি সত্যিই পা রেখেছিলেন মহাকাশচারীরা।

Moon-Landing

কিন্তু তাহলে কী? কেন এমন করে রহস্যের চাদরে মোড়া এরিয়া ৫১? নিঃসন্দেহে এই গোপন মার্কিন ঘাঁটি এখনও পুরোমাত্রায় সক্রিয়। ১৯৭০ সালের পর থেকে আরও কড়া হয়েছে নিরাপত্তা। অথচ জায়গাটার সামনে গেলে সেভাবে কিছু বোঝার জো নেই। জালের বেড়া আর সাধারণ দরজা। এইটুকু তো নিরাপত্তা। যদিও একটু খেয়াল করলেই বোঝা যাবে, তা নয়! চারপাশে ভরতি ক্যামেরা। আর তারা নাগাড়ে নজর রেখে চলেছে। স্থানীয়দের কথায়, এখানে কোনও মরু কচ্ছপ কিংবা খরগোশ ঢুকে পড়লেও টের পেয়ে যায় মার্কিন সেনা।

‘গুগল আর্থ’-এর সাহায্যে দেখা যায় এখানে নিত্যনতুন নির্মাণ গজিয়ে উঠছে। খুব ভোরের দিকে আধো অন্ধকারে আকাশ থেকে কারা যেন এখানে এসে নামে। নাহ, ইউএফও নয়। লাস ভেগাসের ম্যাকারান বিমানবন্দর থেকে কর্মীদের সেই সময়ই উড়িয়ে আনা হয় এখানে। লেখক ও ঐতিহাসিক পিটার মার্লিনের ধারণা, সম্ভবত অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র, সামরিক যানের পরীক্ষা নিরীক্ষা হয় এই গোপন ঘাঁটিতে। বিশেষ করে মনুষ্যবিহীন সেন্সরচালিত বিমানের!

একদিন হয়তো সিআইএ আবার মুখ খুলবে। জানাবে সাতের দশকের পর থেকে এখানে ঠিক কী ধরনের পরীক্ষা চলত। ততদিন ধরে পাক খেতে থাকুক কল্পনার মহাকাশযান। অবশ্য সেই মিথকেও কমজোরি মনে করার উপায় নেই। নাহলে কি আর সেই রোমাঞ্চকে কার্যত মান্যতা দিয়ে ১৯৯৬ সালে এখানকার রাস্তার নাম রাখা হয় ‘একস্ট্রা টেরেস্ট্রিয়াল হাইওয়ে’! ভিনগ্রহীদের সড়ক। 

Area 51

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement