Advertisement
Advertisement
El Dorado

যুগে যুগে স্বর্ণলোভীদের চোখে ধাঁধা লাগিয়েছে সোনায় মোড়া এল ডোরাডো! কোথায় এই শহর?

পাঁচশো বছর ধরে এল ডোরাডোকে খুঁজে চলেছে সারা পৃথিবীর সোনালোভী মানুষ।

The legend of El Dorado: the City of Gold। Sangbad Pratidin
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:May 20, 2023 8:33 pm
  • Updated:May 20, 2023 8:35 pm  

বিশ্বদীপ দে: ‘…ইন সার্চ অফ এল ডোরাডো’। এডগার অ্যালেন পো তাঁর ‘এল ডোরাডো’ কবিতায় যে ছবি এঁকে গিয়েছেন তা পাঠকের মনে বুনে দিয়েছে সোনায় মোড়া এক দেশকে খুঁজে দেখার অদম্য তৃষ্ণাকে। তবে যাঁরা পড়েনওনি, কিন্তু একবার জেনে ফেলেছেন তার কথা, তাঁদেরও মনের ভিতরে অবধারিত ছায়া ফেলে গিয়েছে এল ডোরাডো। আস্ত সোনার শহর! এমন শহর কোথায় আছে এই পৃথিবীতে? সত্যি আছে?

প্রায় পাঁচশো বছর ধরে এল ডোরাডোকে খুঁজে চলেছে সারা পৃথিবীর সোনালোভী মানুষ। হলুদ দুর্মূল্য ধাতুর ঝলকানি যে শহরের সর্বত্র! সেই হলদে আভায় মোড়া শহরের স্বপ্ন চোখে এঁকে দক্ষিণ আমেরিকার রেইন ফরেস্ট এবং পার্বত্য অঞ্চলে ছুটে গিয়েছেন কত মানুষ! কিন্তু ফিরেছেন খালি হাতে। পো তাঁর কবিতায় লিখেছেন, ‘ওভার দ্য মাউন্টেনস/ অফ দ্য মুন,/ ডাউন দ্য ভ্যালি অফ দ্য শ্যাডো’… চাঁদের পাহাড় ও ছায়ার উপত্যকা ছুঁয়ে নাকি রয়েছে এল ডোরাডো। তাহলে কি পৃথিবীর কোনও গোপন অঞ্চলে মাটি ও গাছের আড়ালে চিরতরে হারিয়ে গিয়েছে এল ডোরাডো? এখনও খুঁঝে বের করতে পারলে তার চিহ্ন পাওয়া যেতে পারে? মিলতে পারে সোনাও! নাকি আদৌ কখনওই ছিল না এই শহর? কিন্তু যদি নাই থাকে, তাহলে কেনই বা তৈরি হল এই শহরকে খুঁজে বের করার প্রাণান্তকর চেষ্টা?

Advertisement
El Dorado
শিল্পীর কল্পনায় এল ডোরাডো

[আরও পড়ুন: ‘পাঠান’ থেকে টোকা হয়েছে টম ক্রুজের এই ছবির দৃশ্য! ‘ঢাক পেটাচ্ছেন’ শাহরুখ-ভক্তরা]

‘এল ডোরাডো’ (El Dorado) শব্দটি স্প্যানিশ। যার অর্থ হল ‘সোনায় তৈরি’। আসলে স্পেনীয়রা বলেন, ‘এল হমব্রে ডোরাডো’ কিংবা ‘এল রেই ডোরাডো’। প্রথমটির অর্থ ‘সোনার মানুষ’। দ্বিতীয়টি বোঝায় ‘সোনার রাজা’। দক্ষিণ আমেরিকানদের কাছে এল ডোরাডো হলেন এমন এক কিংবদন্তি শাসক যাঁর পায়ের পাতা থেকে মাথা পর্যন্ত মোড়া সোনায়! গুয়াতাভিতা নামের এক হ্রদে গিয়ে শরীরে জড়ানো সোনার অলঙ্কার হেলার ভরে খুলে ভাসিয়ে দিতেন। আসলে সূর্য দেবতাকে খুশি করতেই এই নৈবেদ্য। এই লোককথাই ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকে। সোনায় মোড়া মানুষ হয়ে ওঠে সোনার শহর! কীভাবে এই পরিবর্তন হল?

১৬৩৮ সালে জুয়ান রডরিগেজ একটি বই লেখেন। ‘দ্য কনকোয়েস্ট অ্যান্ড ডিসকভারি অফ দ্য নিউ কিংডম অফ গ্রানাডা’। সেখানে তিনি বর্ণনা করেছিলেন কলম্বিয়ার প্রাচীন উপজাতি ‘মুইসকা’র বিশেষ সেই প্রথার কথা। হ্রদের জলে রাজার সোনা বিসর্জনের যে প্রথার কথা আগেই বলা হয়েছে। এই বই ও তারও আগে থেকে ছড়াতে থাকা এহেন লোককথা থেকে অন্য মানে খুঁজে বের করতে লাগলেন ইউরোপীয়রা। তাঁদের বদ্ধমূল ধারণা হল সত্য়িই এককালে সোনায় (Gold) মোড়া একটা শহর তার ঝলমলে চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত নীল আকাশের নিচে! হয়তো এমন ধারণা তাঁদের মনে খেলে গিয়েছিল, যে দেশের রাজা শরীরে জড়ানো সমস্ত সোনা অবলীলায় হ্রদের জলে ভাসিয়ে দিতে পারেন, সেদেশের ঐশ্বর্যের প্রাচুর্য না জানি কত! আর এখান থেকেই গড়ে ওঠে অলীক এক শহরের মিথ। নতুন পৃথিবীর বুকে এল ডোরাডো খুঁজে বের করার লোভে ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে অগুনতি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন দুর্গম অরণ্যে।

Lake Guatavita
গুয়াতাভিতা নামের সেই রহস্যময় হ্রদ

[আরও পড়ুন: ‘সত্যমেব জয়তে’ বলে ঢোকেন, আরিয়ান কাণ্ডে টানা ৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ সমীর ওয়াংখেড়েকে]

প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষকরা বলছেন, সেই সময় কলম্বিয়ায় কিন্তু সোনার প্রাচুর্য ছিল। তাঁরা জানতে পেরেছেন, মুইসকা সম্প্রদায়ের কাছে আসলে সোনার কোনও গুরুত্বই ছিল না দামি ধাতু হিসেবে। কেবল দেবতার কাছে তা সমর্পণ করেই তাদের শান্তি। দক্ষিণ আমেরিকার ইনকা, আজটেক ও মায়া উপজাতির মতোই মুইসকাও বিখ্যাত। আজও এই উপজাতি টিকে রয়েছে গহীন অরণ্যে। এবং আজও এরা সোনার প্রলোভনকে ফুৎকারে উড়িয়ে দেয়। কিন্তু অরণ্যের মানুষের সারল্য নিয়ে ‘আধুনিক’ মানুষ কবে আর মাথা ঘামিয়েছে। বরং দুর্গম জঙ্গলে অবস্থিত এল ডোরাডোর সোনালি ধ্বংসাবশেষই যেন ‘সোনার হরিণ’ সেজে তাকে ছুটিয়ে মেরেছে শতকের পর শতক ধরে।

গুয়াতাভিতা নামের সেই রহস্যময় হ্রদটি খুঁজে বের করে সেখানে অভিযান শুরু করে ব্রিটিশ, ফরাসি ও পর্তুগিজরা। এমনও শোনা যায় হ্রদের জল বের করে তার তলদেশে সোনা কোথায় লুকনো আছে খোঁজা শুরুও হয়। কিন্তু কোনও লাভ হয়েছে বলে শোনা যায়নি। তবে গুঞ্জন ছিল, অনেকেই নাকি তাল তাল সোনা পেয়েছে এখানে। আসলে যে কোনও মিথেরই এইরকম দু’টি প্রান্ত থাকে। একদিনে নৈরাশ্য, অন্যদিকে প্রলোভন। গত শতকের ছয়ের দশক পর্যন্ত এমন সোনালোভীদের দেখা মিলেছে সেখানে। ১৯৬৫ সালে রীতিমতো আইন করে কলম্বিয়া সরকার বন্ধ করে দেয় এই ধরনের অভিযান।

সোনার স্বপ্নে বিভোর মানুষ খুঁজে পেতে চায় এল ডোরাডো

তবে এখনই সকলে হাল ছেড়ে দেননি। গবেষকরা মাঝে মাঝেই নানা চাঞ্চল্যকর দাবি করেন। এমনও বিশ্বাস রয়েছে, সাভানা তৃণভূমির অনেক নিচে নাকি রয়েছে সোনার শহর! মাফিয়ারা নাকি খোঁজও চালাচ্ছেন লুকিয়ে লুকিয়ে। কিন্তু বলাই বাহুল্য, এখনও পর্যন্ত স্রেফ গুঞ্জনই সার। হদিশ মেলেনি। আসলে এত খোঁজ, এত উত্তেজনা, এত অভিযান সত্ত্বেও আজও কেউ খুঁজে বের করতে পারেনি এল ডোরাডোকে। তার মানে এমন কোনও সোনার শহর কোনও দিনই ছিল না। মুইসকাদের প্রথা হয়তো সত্যি। তাদের রাজার রাশি রাশি সোনার মালিকানাও সত্য়ি। কিন্তু সোনায় মোড়া শহর নেই।

‘সোনার কেল্লা’ সিনেমার একেবারে শেষে ফেলুদা জানিয়ে দিয়েছিল, ”গুপ্তধন নেই। পূর্বজন্ম থাকলেও নেই, না থাকলেও নেই।” এল ডোরাডোও তেমনই। তা নেই। আর নেই বলেই আরও বেশি করে আছে। ঋত্বিক ঘটকের ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’ ছবিতে ছোট্ট ছেলে কাঞ্চন বালিশের নিচে লুকিয়ে রাখত এল ডোরাডো নিয়ে লেখা বই। তারপর সকলের চোখ এড়িয়ে প্রদীপের সামান্য আলোয় গিলে খেত সেই কল্পশহরের বৃত্তান্ত! শিংওলা ইউনিকর্ন কিংবা আগুন-নিঃশ্বাসী ড্রাগনের মতো মানুষের মনের কোণে রয়েছে এল ডোরাডোও। সেই সোনার শহর ঘুমের ভিতরে আজও জেগে ওঠে কল্পনাপ্রবণ মানুষের স্বপ্নে।

‘ইন সার্চ অফ এল ডোরাডো’

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement