সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পরনে লাল বেনরাসী শাড়ি। অনেকটা টানা ঘোমটা। একটা বড়সড় নাকছাবি, ঝুমকো, চুড়ি সবই আছে। দূর থেকে দেখে মনে হবে, যেন সদ্য বিয়ে হওয়া বউ। একটু ভাল করে লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে ঘোমটার নিচে যিনি আছেন, তিনি নববধূ তো ননই, এমনকী মহিলাও নন। জলজ্যান্ত পুরুষ মানুষ। নাম চিন্তাহরণ চৌহান। বাড়ি উত্তরপ্রদেশের জৌনপুরে। গত প্রায় ৩০ বছর ধরে এভাবেই প্রত্যেকদিন ঘোমটা মাথায় নববধূর বেশে বসে থাকেন উত্তরপ্রদেশের এই বৃদ্ধ। কারণটা কুসংস্কার। কিন্তু এই বৃদ্ধের কাহিনী হৃদয় বিদারক।
১৯৮৯ সাল থেকে প্রতিদিন মহিলাদের পোশাকে সেজে ওঠেন চিন্তাহরণ। কিন্তু কেন? চিন্তাহরণ বলছেন, এর সঙ্গে জুড়ে রয়েছে তাঁর পরিবারের ভবিষ্যৎ। সাত এবং আটের দশকে মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে নিজের পরিবারের ১৪ জন সদস্যকে হারিয়েছেন চিন্তাহরণ। তারপর থেকে স্বপ্নাদেশ পেয়ে চিন্তাহরণ নববধূর মতো পোশাক পরে থাকেন। এই পোশাক পরার পর থেকেই নাকি তাঁর বাড়িতে আর অকালমৃত্যু হয়নি। অসময়ে প্রিয়জনদের হারাতে হয়নি তাঁকে।
চিন্তাহরণ বলছেন, ১৪ বছর বয়সে প্রথম বিয়ে হয় তাঁর। কিন্তু, কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর প্রথম স্ত্রী মারা যায়। ২১ বছর বয়সে তিনি কাজ করতে বাংলায় আসেন। উত্তর দিনাজপুরের ইটভাটায় কাজ করতেন তিনি। কাজ করতে করতে মালিকের খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন তিনি। কিছুদিন বাদে মালিকের মেয়ের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। কিন্তু, চিন্তাহরণের বাড়িতে মানতে চায়নি। শেষে স্ত্রীকে ছেড়ে উত্তরপ্রদেশ ফিরে যান তিনি। কিছুদিন বাদেই তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী আত্মহত্যা করেন। পরিবারের চাপে কয়েক মাস বাদে আবারও বিয়ে করতে হয় চিন্তাহরণকে। এবারে তিনি নিজে অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিন্তাহরণ প্রাণে বেঁচে গেলেও একে একে তাঁর বাবা-মা-ভাই-ভাইয়ের ছেলেমেয়ে মিলিয়ে পরিবারের ১৪ জন প্রাণ হারান। যা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে চিন্তাহরণকে।
তিনি বলছেন, “একে একে যখন সবাই চলে যাচ্ছে, তখন আমি আমার দ্বিতীয় স্ত্রীর স্বপ্নাদেশ পাই। সেই আমাকে বলেছিল এভাবে নববধূর বেশে থাকতে। তাহলেই পরিবারের আর কারও ক্ষতি হবে না।” তারপর থেকেই নতুন বউ সেজে বসে থাকেন চিন্তাহরণ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.