সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: প্রচলিত আছে বিড়াল নাকি ভণ্ড তপস্বী। মাছ দেখলেই ধ্যান ভঙ্গ হয় তার। কিন্তু এই মার্জারের দর্শন করলে কিন্তু আপনার এ ভাবনা ভাঙতে বাধ্য। পুসু নামের বিড়ালটি সত্যিই ‘তপস্বী’। এমনকী মাছের লোভও টলাতে পারে না তার সংকল্প। বরং কঠোর নিরাপত্তারক্ষীর মতো মাছ পাহারা দেয় নির্লোভ পুসু।
অবিশ্বাস্য মনে হতেই পারেন। হুলো বিড়াল পুসুকে দেখলেও এভাবেই বিস্মিত হন স্থানীয়রা। সামনে মাছ দেখেও দিনের পর দিন দূরে বসে কেবল নজরই রেখে চলে সে। তাকে স্বেচ্ছায় কেউ মাছ এগিয়ে না দিলে কখনওই সে তাতে মুখ দেয় না। সকলের আদরের পুসু প্রতিদিনই মাছের বাজারে এসে বসে। তবে মাছের থেকে খানিকটা দূরেই বসে সে। মাছ বিক্রেতার অনুপস্থিতিতেও কখনও জ্বলজ্বলে চোখ জোড়া নিয়ে এগিয়ে যায় না সেদিকে। শান্ত-নিরীহ স্বভাবের বিড়ালের মনে কোনও লোভ নেই। আক্ষরিক অর্থেই যেন সে ভাজা মাছটি উলটে খেতে জানে না।
বিড়ালের প্রিয় খাদ্য যে মাছ, একথা তো সকলেরই জানা। একটুকরো মাছের জন্য কী কী কাণ্ড সে ঘটাতে পারে, তা কল্পনাও করা যায় না। গৃহস্থের ঘরে বেড়ালের মাছ চুরি করে নেওয়া এক সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু হুলো পুসু এক্ষেত্রে একেবারে ব্যতিক্রমী। ঝাড়গ্রামের ঘোড়াধরা এলাকার ঝাড়গ্রাম থানার উলটোদিকে গত প্রায় দেড় বছর ধরে মাছের ব্যবসা করছেন সুকুমার দাস। ফুটপাতের ধারে তাঁর মাছ ব্যবসা। ঘটনাটি এলাকার লোকের কাছে অত্যন্ত পরিচিত দৃশ্য। সুকুমারবাবু মাছ ব্যবসার ফাঁকে কোনও কাজে গেলে দেখা যায় এক পাশে চুপচাপ বসে রয়েছে পুসু আর নজর রাখছে মাছের উপর। কখনওই সুকুমারবাবুর অজান্তে মাছে মুখ দেয় না সে। চণ্ডীপুরের বাসিন্দা সুকুমার দাস গত দেড় বছর ধরে মাছের ব্যবসা করছেন এই ঘোড়াধরা এলাকায়। নির্লিপ্তের মতো বসে থাকা বিড়ালের ছবিও তুলে নিয়ে যান পথচলতিরা। তার ছবি সোশ্যাল মিডিয়াতেও বেশ জনপ্রিয়।
সুকুমারবাবু বলেন “আমরা সবাই ওকে আদর করে পুসু বলে ডাকি। খুব ছোট অবস্থায় ওকে এখানে প্রথম দেখা গিয়েছিল। তখন থেকেই এখানে আছে। ওর এত ভাল স্বভাব, বলার নয়। মাছের পাশে চুপ করে বসে থেকে সব লক্ষ্য রাখে। আমি নিজে মাছ না দিলে ও খাবেই না। আমি কখনও উঠে গেলে এক পাশে বসে থেকে মাছ পাহারা দেয়। আর আমিও নিশ্চিন্তে থাকি। আগে খুব রোগা ছিল। এখন ও সুস্থ।” সবার ভালেবাসার পুসুই যেন বিড়াল জগতের ‘ভণ্ড’ তকমা ঘুচিয়ে দিল।
ছবি: প্রতীম মৈত্র
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.